কলকাতা: বেতন বৈষম্য দূরীকরণ, সঠিক ফিটম্যান্ট ফ্যাক্টর-সহ পাঁচ দফা দাবিতে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শকে স্মারকলিপি জমা দিলেন কয়েক হাজার প্রাথমিক শিক্ষক৷ শিক্ষকদের অরাজনৈতিক সংগঠন উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে ঝাড়গাম-তমকুল-নদীয়া-পুরুলীয়া-বর্ধমান-সহ একাধিক জেলা কমিটির উদ্যোগে মঙ্গলবার এই কর্মসূচি নেওয়া হয়৷
এদিন বিকেলে ঝাড়গ্রাম শহরের রবীন্দ্র পার্ক থেকে একটি মিছিল শুরু হয়৷ মিছিলে ঝাড়গ্রাম জেলার ১৮টি চক্রের প্রায় কয়েক হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা মিছিলে অংশ নেন৷ পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কমিটির তরফ প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক অফিসে স্মারকলিপি জমা দেয়া হয়৷ সংগঠনের তরফে তমলুক শহর জামায়াত করেন তাঁরা৷ তারপর মিছিল করে জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় অফিসারের কাছে যান৷ সংগঠনের প্রতিনিধি দল তাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার প্রতিলিপি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শকের হাতে তুলে দেন৷ সংগঠনের জেলা সম্পাদক বলেন, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণহীন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন একই রকম রাখতে হবে৷ সরকারি পোর্টালে প্রতিটি শিক্ষকের যথাযথ যোগ্যতা উল্লেখ সহ বিভিন্ন দাবিতে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকে স্মারকলিপি দেয়া হয়৷
শিক্ষকদের অরাজনৈতিক সংগঠন উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সভাপতি সন্দীপ ঘোষ ও রাজ্য সম্পাদিকা পৃথা বিশ্বাস বলেন, ‘‘২৬ জুলাইয়ের পর এখন পর্যন্ত শিক্ষকদের বেতন সংক্রান্ত কোন নির্দিষ্ট বিজ্ঞপ্তি দিতে পারেনি রাজ্য অর্থ দপ্তর৷ কোন জেলা প্রাথমিক সংসদের বা ডিপিএসসির ডিআই বলতে পারছেন না শিক্ষকদের বেতনের হিসাব৷ অথচ আমরা দেখতে পাচ্ছি কিছু জেলা প্রাথমিক সংসদের বা ডিপিএসসি অতিরিক্ত তৎপর হয়ে শিক্ষকদের থেকে জোর করে নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করাতে বাধ্য করছে৷ আমরা এর মধ্যে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছি৷ যাতে প্রমাণ করা যায় শিক্ষকরা স্বেচ্ছায় এই বেতন দাবি করছেন৷ সুতরাং সব সচেতন শিক্ষকদের বলব, এই ফাঁদে পা দেবেন না৷ আমরা বিকাশভবনে যাব৷ আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করব৷ ওই জেলা প্রাথমিক সংসদের বা ডিপিএসসিগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে আসব৷’’ ফলে রাজ্য সরকারের জারি করা গ্রেড পে বৃদ্ধি আদৌ কার্যকর হবে কি না, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন৷ কেননা, চলতি মাস থেকে নয়া গ্রেড-পে কার্যকর হওয়ার কথা৷
প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি নিয়ে ফের জারি ধোঁয়াশা৷ গ্রেড-পে পরিবর্তনের জন্য আবেদন পত্রের বিজ্ঞপ্তি ঘিরে জারি হয়েছে বিভ্রান্তি৷ হাওড়া জেলায় এই ফর্ম শিক্ষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে নয়া ফর্ম৷ ফর্মে প্রয়োজনীয় তথ্য জানাতে হবে জেলার চেয়ারম্যানকে৷ ওই ফর্মে থাকছে শিক্ষকদের নাম, স্কুল, কত সালে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছেন, উচ্চ মাধ্যমিকে কত শতাংশ নম্বর পেয়েছেন, পে-ব্র্যান্ড কত, গ্রেড পে হিসাবে সেইসব শিক্ষক কত টাকা বেতন পান, তাও জানাতে হবে৷ কিন্তু, প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি কর্তৃপক্ষ আদতে জানে না শিক্ষকদের যোগ্যতা ও তাঁরা কত টাকা বেতন পান? কেন এই ফর্ম পূরণ করতে হবে শিক্ষকদের৷
প্রাথমিক শিক্ষকদের সংগঠন উস্তি ইউনাইটেড অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সভাপতি সন্দীপ ঘোষ বলেন, এই ফর্মে পে স্কেল পরিবর্তনের কথা নেই৷ পে প্রোটেকশন নেই৷ পে ফিক্সেশন নেই, ফিগমেন্ট ফ্যাক্টর নেই৷ আমাদের দাবি অনুযায়ী এখানে কিছুই নেই৷ যেখানে শুধুমাত্র গ্রেড পেয়ে বৃদ্ধি কথা বলা হয়েছে৷ এখানে সই করার অর্থ শুধুমাত্র গ্রেড পে পরিবর্তন৷ সরকার পরিষ্কার করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে না করা পর্যন্ত শিক্ষকদের এই ফর্ম সই করতে নিষেধ করা হয়েছে৷
তিনি আরও বলেন, ফর্মটি নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে৷ সরকার এখনও পর্যন্ত পরিষ্কার করে কোন বিজ্ঞপ্তি জারি করেনি৷ আমাদের দাবি অনুযায়ী বিজ্ঞপ্তি জারি না করলে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ তীব্র আকার নেবে৷ ওই ফর্ম অনুযায়ী গ্রেড পে বাড়ানো হচ্ছে৷ তাতে লাভবান হবেন ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালে যারা টেট পরীক্ষায় পাশ করে শিক্ষকতা করছেন তাঁরাই৷ তাঁদের বেতন বেড়ে ৩ হাজার এবং ৫ হাজার টাকা হবে৷ ২০১৪ এর আগে যে সমস্ত শিক্ষকরা প্রাথমিক বিদ্যালয় চাকরিতে যোগ দিয়েছেন তাঁদের বেতন খুব একটা বাড়বে না৷ সরকারের বক্তব্য পুরানো শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি নিয়ে ইতিমধ্যেই পে ব্রান্ড থ্রি পার হয়ে গিয়েছে৷ তাই শিক্ষকদের নতুন করে পে ব্র্যান্ড বাড়বে না৷ স্কেল বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ২০১৪ সালের আগে নিযুক্ত শিক্ষকদের ২৪০০ টাকা এবং তাঁদের আগে যাঁরা যোগদান করেছেন তাঁদের ১২০০ টাকার মতো বৃদ্ধি হবে৷ ইতিমধ্যেই মূল বেতন ২ হাজার ২৪০ টাকা বেড়ে ৭১০০ টাকা হয়েছে৷ ২০১৪ ও ২০১৭ সালে যোগদান করা শিক্ষকদের বেতন দুই হাজার ৬৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭১০০ টাকা করা হবে৷