কেন্দ্র-রাজ্যের সংঘাত কি চলতেই থাকবে? এতেই বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে রাজ্যের উন্নয়ন?

কেন্দ্র-রাজ্যের সংঘাত কি চলতেই থাকবে? এতেই বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে রাজ্যের উন্নয়ন?

a37783c9c250a1af8bfa65f9936a7ea0

নিজস্ব প্রতিনিধি: পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম তথা বামেদের ৩৪ বছরের শাসনকালে একটা কথা বারবার শোনা যেত, সব কিছু কেন্দ্রের চক্রান্ত। যা কিছু হতো না কেন দিল্লির দিকে অভিযোগের আঙুল তুলতেন সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব। পাওনা গণ্ডা-সহ বিভিন্ন ইস্যুতে দিল্লির কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে নিয়মিত সুর চড়াতেন বাম নেতারা। পরবর্তী কালে সিপিএমকে সরিয়ে ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। কিন্তু কেন্দ্র-রাজ্যের সংঘাত বন্ধ হয়নি। বলা ভাল তা আগের চেয়ে বহু গুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। সদ্য  রাজ্যে এসে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। তাঁর দাবি কেন্দ্রের পাঠানো টাকা খরচ করতে পারছে না রাজ্য।

স্মৃতি ইরানি বলেছেন, ‘পশ্চিমবাংলায় ২০১৭- ১৮ থেকে আমার মন্ত্রকেরই ২৬ হাজার  ৭৫১ লক্ষ টাকা পড়ে আছে। মহিলা ও শিশুদের জন্য মোদি সরকার যে টাকা পাঠাচ্ছে, তা কেন বাংলার সরকার খরচ করছে না তার জবাব তাদের দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী মাতৃ বন্দনা প্রকল্পের টাকা এ রাজ্যের সরকার নিজেদের প্রকল্পে খরচ করছিল। আমরা লিখিতভাবে জানতে চাই, কেন প্রকল্পের আইন ভাঙা হচ্ছে। এ রাজ্যের সরকার আমাদের ২০২২ সালে লিখিত ভাবে জানিয়েছিল ওরা আর আইন ভাঙবে না। গাইডলাইন মানবে। প্রধানমন্ত্রী মাতৃ বন্দনার টাকা প্রধানমন্ত্রী মাতৃ বন্দনা যোজনা হিসাবেই খরচ হবে। আইসিডিএস, অঙ্গনওয়াড়ির যত টাকা ভারত সরকার পোষণ প্রকল্পে দিচ্ছে তা এই গাইডলাইন মেনেই চালাবে। এটাও লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।’  কিছুদিন আগেই কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ। সেটিকে কটাক্ষ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অমাবস্যার বাজেট বলে বর্ণনা করেছেন। তৃণমূলের অভিযোগ বাজেটে পশ্চিমবঙ্গেকে বলার মতো কিছু দেওয়া হয়নি। কিন্তু রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণোবের দাবি এই প্রথম পশ্চিমবঙ্গের জন্য বিপুল অঙ্কের বরাদ্দ করা হয়েছে যা অতীতে কোনও দিন হয়নি। এমনকী মমতা যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন তখনও বাংলার ভাগ্যে এত টাকার বরাত জোটেনি বলে তিনি দাবি করেছেন। উল্লেখ্য  ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে পশ্চিমবঙ্গের রেল পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য মোট বরাদ্দ করা হয়েছে ১১,৯৭০ কোটি টাকা। যা ইউপিএ আমলের শেষ বাজেটের থেকে তিনগুণ বেশি। সবথেকে বেশি বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে মেট্রোরেল প্রকল্পের উন্নয়ন কল্পে।

বাজেটে আরও বলা হয়েছে রাজ্যের ২৯৩টি রেল স্টেশনের আমূল সংস্কার করে মডেল স্টেশনে পরিণত করা হবে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি-সহ উন্নত মানের এই স্টেশনগুলিতে থাকবে জাতীয় স্তরের পরিষেবা। বন্দে ভারতের মতো বন্দে মেট্রো রেল চালানো হবে কলকাতায়। এই নতুন মেট্রোরেল চলবে ৭০-৮০ কিলোমিটার গতিতে। বন্দে ভারতের মতোই এই নতুন মেট্রোরেল যাত্রাপথে থামবে খুব কম সংখ্যক গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে। এছাড়া দার্জিলিংয়ের টয়ট্রেনকে পরিবেশ বান্ধব করে তুলতে চালানো হবে হাইড্রোজেন ট্রেন। যাতে পরিবেশ দূষণ যেমন রোধ করা যায় তেমনি আরও বেশি করে টয়ট্রেনকে আকর্ষণীয় করা যায়। এছাড়াও রাজ্যের ৫০০টি স্টেশনে তৈরি হবে জনসুবিধা স্টোর। চাল,ডাল,তেল নুন থেকে শুরু করে ওষুধ, সবই পাওয়া যাবে একই ছাদের তলায়। থাকবে আরও বহু উন্নত পরিষেবা। কিন্তু তৃণমূল কেন্দ্রের দাবি মানতে চাইছে না। এছাড়া ১০০ দিনের প্রকল্পের টাকা-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় অনুদান কেন বন্ধ রয়েছে তা নিয়ে বারবার প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল। আর এই সমস্ত বিষয় নিয়ে ধারাবাহিকভাবে কেন্দ্র-রাজ্যের মধ্যে চাপানউতোর চলছে। তার ফলে থমকে যাচ্ছে উন্নয়ন। তাই প্রশ্ন বছরের পর বছর যাবে, কিন্তু কেন্দ্র-রাজ্যের সংঘাত কি বন্ধ হবে না? কেন্দ্রের দাবি রাজ্য সরকার ঠিকমতো হিসাব দিচ্ছে না বলেই টাকা আটকে রাখা হয়েছে। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করছে তৃণমূল সরকার। আর দিনের পর দিন এই নাটক দেখছে রাজ্য তথা গোটা দেশ। তাই কেন্দ্র-রাজ্যের সম্পর্ক কবে মসৃণ হবে সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *