আন্দোলন করেই মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন মমতা, তবে এখন কেন প্রতিবাদীদের সঙ্গে এমন ব্যবহার?

আন্দোলন করেই মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন মমতা, তবে এখন কেন প্রতিবাদীদের সঙ্গে এমন ব্যবহার?

নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজ্যে তিন দশক বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন যেভাবে আন্দোলন করে যেতেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তা শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, গোটা দেশের নজর কেড়ে নিয়েছিল।‌ সিঙ্গুর- নন্দীগ্রাম আন্দোলনকে মমতা সম্পূর্ণ অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। সিঙ্গুর ইস্যুতে ধর্মতলায় টানা ২৬ দিন অনশন করেছিলেন মমতা। অবশেষে তার  ফল পান তিনি। ২০১১ সালে সিপিএমকে সরিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসেন মমতা। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ বিরোধী নেত্রী থেকে মমতা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর আন্দোলনকারীদের রাজ্য সরকার যেভাবে পুলিশ দিয়ে দমন করছে, তা একেবারেই কাম্য ছিল না মমতার কাছ থেকে।

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি ইস্যুতে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে নেমে আন্দোলন করছেন চাকরিপ্রার্থীরা। এই অবস্থায় কিছুদিন আগে করুণাময়ীতে যেভাবে চাকরিপ্রার্থীদের উপর পুলিশ নির্যাতন করেছে, তার নিন্দায় সরব হয়েছে সব মহল। এরপর বুধবার কলকাতার এক্সাইড মোড়ের কাছে চাকরিপ্রার্থীদের পুলিশ ব্যাপক হেনস্থা করেছে বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, এক মহিলা চাকরিপ্রার্থীর হাতে এক মহিলা পুলিশকর্মী কামড়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে আক্রান্ত চাকরিপ্রার্থী অরুণিমা পালকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, এ কোন পশ্চিমবঙ্গ? গোটা দেশে শিক্ষা, সংস্কৃতির পীঠস্থান হিসেবে পরিচিত বাংলা। কলকাতা দেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত। সেখানে বারবার পুলিশি বর্বরতা কেন ঘটবে তার উত্তর খুঁজছেন সবাই।

নজিরবিহীন ভাবে পুলিশের গাড়ির তলায় শুয়ে প্রতিবাদ করেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। এক্সাইড মোড়ে টেট উত্তীর্ণ ২০১৪ চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনে অবরুদ্ধ হয়ে যায় রাস্তা। এরপর শুরু হয় পুলিশি ধরপাকড়। রবীন্দ্র সদন এক্সাইড মোড়ে বিক্ষোভ দেখান চাকরিপ্রার্থীরা। আন্দোলনকারীরা চিৎকার করে বলেন,’আমরা আট বছর থেকে বঞ্চিত। দিদি আমাদের হয় চাকরি দিন, নয় আমাদের মৃত্যু দিন। তবুও রাস্তা ছাড়ছি না, গাড়ি চালিয়ে দিন আমাদের উপর দিয়ে।’ এমনকী পুলিশের প্রিজ়ন ভ্যানের চাকার তলায় শুয়ে পড়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তাঁরা। সেই সঙ্গে এলগিন রোডের মোড় অবরোধ করেন তাঁরা। ধস্তাধস্তির মধ্যে পড়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন বেশ কয়েক জন। আর আন্দোলন তুলতে গিয়ে এক মহিলা পুলিশকর্মী উত্তর চব্বিশ পরগনার বাদুড়িয়ার বাসিন্দা অরুণিমা পাল নামে এক মহিলা চাকরিপ্রার্থীর হাতে কামড়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। চাকরিপ্রার্থীরা একটি ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার করেছেন, সেখানে দেখা যাচ্ছে ওই মহিলা পুলিশকর্মী এক মহিলা চাকরিপ্রার্থীর হাতে কামড় দিচ্ছেন। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে পুলিশ অরুণিমাকেই গ্রেফতার করেছে।

স্বাভাবিকভাবেই মমতা বিরোধী নেত্রী থাকার সময়ের সঙ্গে এখনকার সময়ের তুলনা করতে গিয়ে অবাক হচ্ছেন সবাই। প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি মুখ্যমন্ত্রী আন্দোলনকে ভয় পাচ্ছেন? নাহলে বারবার কেন চাকরিপ্রার্থীদের উপর আঘাত নেমে আসবে? রাজনৈতিক মহল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘আন্দোলনের প্রোডাক্ট’ হিসেবেই বর্ণনা করে থাকেন। কিন্তু তৃণমূল শাসনকালে যেভাবে আন্দোলনকারীদের দমন করা হচ্ছে, তাতে সরকারের মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে  বাধ্য। তাই চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন আগামী দিনে কোন পথে যায় এখন সেটাই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

15 − 6 =