কেন পথে নেমে অনশন করতে হচ্ছে শিক্ষকদের? কড়া বার্তা জুনিয়র ডক্টরস ইউনিটির

কলকাতা: যোগ্যতা অনুযায়ী বেতনক্রোম চালু ও ১৪ জন শিক্ষকের বদলির নির্দেশ প্রত্যাহারে দাবিতে টানা ৪ দিন ধরে অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন প্রাথমিক শিক্ষকদের একাংশ৷ এখনও পর্যন্ত ২০ জন শিক্ষক এই অনশনে অংশ নিয়েছেন৷ তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন৷ শিক্ষকদের এই অনশন মঞ্চের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন বাংলার নানা বিভিন্ন মহল৷ সমাজের বুদ্ধিজীবী মহল থেকে

6612dbca1f4176540d1e03709edad902

কেন পথে নেমে অনশন করতে হচ্ছে শিক্ষকদের? কড়া বার্তা জুনিয়র ডক্টরস ইউনিটির

কলকাতা: যোগ্যতা অনুযায়ী বেতনক্রোম চালু ও ১৪ জন শিক্ষকের বদলির নির্দেশ প্রত্যাহারে দাবিতে টানা ৪ দিন ধরে অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন প্রাথমিক শিক্ষকদের একাংশ৷ এখনও পর্যন্ত ২০ জন শিক্ষক এই অনশনে অংশ নিয়েছেন৷ তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন৷ শিক্ষকদের এই অনশন মঞ্চের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন বাংলার নানা বিভিন্ন মহল৷ সমাজের বুদ্ধিজীবী মহল থেকে রাজনৈতিক ব্যক্তির পর এবার শিক্ষকদের অনশনকে সমর্থন জানিয়ে প্রেস বিবৃতি জারি করল জুনিয়ার চিকিসৎকরা৷

মঙ্গলবার জুনিয়র ডক্টরস ইউনিটির তরফে প্রেস বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাঁদের ন্যায্য দাবির ভিত্তিতে যে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন, তার প্রতি আমরা পূর্ণ সংহতি জ্ঞাপন করছি৷ আমরা সরকার বাহাদুরকে প্রশ্ন করতে চাই যে আজ শিক্ষকদের পথে নেমে আন্দোলন করে, অনশন করে দাবি আদায়ের পথে যেতে হচ্ছে কেন? রাজ্য সরকারের শিক্ষা মন্ত্রীর উচিৎ এক্ষুণি যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এবং তার দিক থেকে নিম্নোক্ত মন্তব্য একেবারেই অনভিপ্রেত৷ ‘আগে থেকে ছুটি না নিয়ে কেউ যদি আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য হঠাৎ করে স্কুলে না যান তাহলে খোঁজখবর নেব এবং ব্যবস্থা নেব৷’ শিক্ষামন্ত্রী ( সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ)৷ এই ধরনের মন্তব্য আন্দোলনের আগুনে আরও ঘৃতাহুতি দেবে। অবিলম্বে সরকারের পক্ষ থেকে এই মন্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে এবং শিক্ষকদের দাবি মেনে তার জন্য সরকারকে যথোপযুক্ত ও সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’’

কেন পথে নেমে অনশন করতে হচ্ছে শিক্ষকদের? কড়া বার্তা জুনিয়র ডক্টরস ইউনিটিরমঙ্গলবার অনশনরত শিক্ষকদের পাশে দাঁড়াতে হাজির হলেন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান, আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য ও বাম বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য৷ শিক্ষকদের অনশন মঞ্চে দাঁড়িয়ে দিলেন কড়া হুঁশিয়ারি৷ আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এ রাজ্যে কোনও কাজ শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কোন দাবি আদায় করা যায় না৷ আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা এই রকম একটা নির্দয় সরকারের শরিক হয়েছি৷ মানুষ তাঁদের ভোট দিয়েছে, আমার দেশের শিক্ষিত ছেলে মেয়েরা মাঝে মাঝে অনশনে বসছেন৷ মাঝে মাঝে রাস্তায় নামছে৷ কী মনে হয়, পশ্চিমবঙ্গে কোন সরকার চলছে? যে সরকার গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত হয়েছে৷’’

কেন পথে নেমে অনশন করতে হচ্ছে শিক্ষকদের? কড়া বার্তা জুনিয়র ডক্টরস ইউনিটিরবিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘শিক্ষকদের প্রতি সহানুভূতি জানাতে আমি এখানে এসেছি৷ শিক্ষকদের দাবি কীভাবে পূরণ করা যায়, আমি চাই তা ভেবে দেখুক সরকার৷’’ বাম বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য জানান, ‘‘প্রাথমিক শিক্ষকদের কথা বারংবার আমি বিধানসভায় বসেছি৷ কিন্তু, সরকার কোনও পদক্ষেপ নেয়নি৷ আমরা চাই, সরকার এই সমস্যা অবিলম্বে সমাধান করুক৷’’

অন্যদিকে সোমবার শিক্ষামন্ত্রীর কড়া হুঁশিয়ারির পর আন্দোলনকারী প্রাথমিক শিক্ষকদের তরফেও পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে কড়া ভাষায় আক্রমণ করা হয়েছে৷ শিক্ষামন্ত্রীর হুঁশিয়ারি শিক্ষক বিদ্রোহের আগুনে ঘি ঢালছে বলেও দাবি করা হয়৷ মঙ্গলবার অনশনমঞ্চ থেকে শিক্ষক সংগঠনের তরফে বলা হয়, ‘‘শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, অনশনকারী শিক্ষকরা শিক্ষা ব্যবস্থাকে পিছিয়ে দিচ্ছে৷ যেখানে শিক্ষকরা রাস্তায় নেমে এসেছেন, উনি তাতে আগুনে ঘি দিচ্ছেন৷ যাতে আমরা আরও রাস্তায় থাকি৷ যাতে শিক্ষাব্যবস্থা আরও ভেঙে পড়ে৷ আমি প্রশ্ন তুলছি, ওনার বাস্তব বুদ্ধি কোথায়? উনি বলতে চাইছেন, শিক্ষকরা সমাজের শত্রু? দিনের পর দিন প্রেস বিবৃতি করে বোঝাতে চাইছেন, শিক্ষকরা সমাজের শত্রু৷ শিক্ষকরা ইচ্ছাকৃতভাবে রাস্তায় নেমে এসেছেন৷ শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ওরা অনশন করছে অকারণে৷ শিক্ষামন্ত্রীকে টাইট দেওয়ার জন্য এই অনশন করা হচ্ছে৷ শিক্ষামন্ত্রীর এই ধরনের ভাষায় আমরা স্তম্ভিত৷ আমরা এখানে অনশন করছি, আমরা আমদের ন্যায্য দাবি জানাচ্ছি৷ শিক্ষামন্ত্রী, আমাদের অপমান করে নিজের চেয়ারটাকে অপমান করছেন৷ উনি নিজেই নিজের সম্মান নষ্ট করছেন৷’’

সোমবার অনশনকারীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘প্রাইমারি টিচারদের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে৷  আমি আপনাদের খুব দায়িত্ব নিয়ে বলছি, যাঁরা বসে আছে তাঁরা অকারণে বসে আছে৷ আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছে, যাতে আপনারা কতটা খবর করবেন, তার উপর তাঁদের সাংগঠনিক জোর বাড়বে৷ এটা একেবারেই ভুল৷ সরকারের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আমরা লিখেছিলাম যে, এদের কিছু একটা ব্যবস্থা করে দেয়া হোক৷ এটা ওঁরাও চিঠিতেও প্রথমদিকে জানিয়েছিল৷ এখন নানা রকম দাবি তুলছেন৷ এবং অনশন করছে৷ এখানে বসে আছেন৷ যে যা পারছে সে তাই করছে৷ চারটে লোক নিয়ে ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন করেছে৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করবে৷ একটা অদ্ভুত প্রবণতা দেখা গিয়েছে৷ তারা আলোচনা রাস্তায় না গিয়ে রাস্তায় গিয়ে বসে পড়েছেন৷ রাস্তাতেই তারা বসে ভাবছেন, এতে সরকার বোধহয় দুর্বল হয়ে পড়বে, আমাদের কথা শুনবে৷ যেটা বাস্তব সেটাই আগেও বলেছি, আমি আমরা অবশ্যই তাদেরটা ভেবে দেখব৷ শীঘ্রই আমরা প্রাইমারি টিচারদের মিটিং ডাকছি৷ সেখানে সরকারের তরফে যা বলার তা বলা হবে৷ এছাড়াও কয়েকটি সমস্যা আছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করে সবুজ সংকেত নিয়ে আমরা শীঘ্রই নজরুল মঞ্চে আলোচনায় বসবো৷ যেহেতু ২১ তারিখ ধর্মতলা সভা আছে, তার আগে হয়তো সম্ভব হবে না৷ আর যদি তা না হয়, এই মাসেই আমরা তিনটি বিষয়ে সমাধানের পথে যাব৷ এছাড়াও প্রাইমারি প্রাইমারি টিচারদের গ্রেড পে নিয়ে যে একটা নিজেদের মধ্যে একটা অসন্তোষ আছে, সেটা সমাধান করব৷’’

বলেন,‘‘উস্তিদের সঙ্গে বহুবার বসেছি৷ যখন বিধানসভার চলছিল, তখন তাঁদের সঙ্গে বসেছি৷ ওদের মনে হচ্ছে যে, একটু দিচ্ছি আরও একটু যদি সরকারকে টাইট দেওয়া যায়৷ কিন্তু কোনও দিন যা বলিনি তাই আজ বলছি৷ স্কুল কামায় করে যারা আন্দোলনে বসছেন, তাঁদের কিন্তু এই অপশনের জন্য যদি কোনও ছুটি না থাকে, তাহলে কোন ছুটি এডজাস্ট হবে না৷ যারা ছাত্রদের না পড়িয়ে দিনের পর দিন নানা ধরনের আন্দোলন করছেন, স্কুল কামাই করেছেন, তাদেরকে জানিয়ে দিচ্ছি, ছাত্রদের দিকে তাকিয়ে কাজে ফিরিন৷’’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *