নিজস্ব প্রতিবেদন: বিগত সাত বছর ধরে কেন্দ্রে বিজেপি সরকার রয়েছে। এই সময়কালে দেশের অধিকাংশ মানুষের কাছে একটা জিনিস পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে যে, সঠিক অর্থে বিজেপির বিরুদ্ধে শক্তিশালী বিরোধী দল এবং বিরোধী মুখ না থাকার জন্য গেরুয়া শিবিরের আধিপত্য বাড়ছে দিন দিন। আর এই ধারণা যে কোনও ভাবে অবাস্তব নয়, তা সাম্প্রতিক সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পুঙ্খানুপুঙ্খ ব্যাখ্যা করে দেয়। বিগত কয়েক বছর ধরে কংগ্রেসের অবস্থা তেমন একটা ভাল নয়, রাহুল গান্ধীর অভিমান এখনো পুরোপুরি কমেনি এদিকে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী অসুস্থ। বিরোধী দল বলতে যারা রয়েছে তাদের মধ্যে থেকেও এখনো পর্যন্ত নরেন্দ্র মোদীকে টক্কর দেবার মত মুখ উঠে আসেনি। কিন্তু একটা রাজ্য বিগত বছরগুলোতে যেভাবে বিজেপিকে টক্কর দিচ্ছে এবং সার্বিকভাবে বিজেপি নেতৃত্বের চিন্তা বাড়াচ্ছে, সেটি হল পশ্চিমবঙ্গ। আর আবশ্যিকভাবে সেই বিরোধী রাজনীতির মুখ হয়ে উঠছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাহলে কি এবারের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে বাংলাকে ‘দখল’ করার জেদ চেপেছে বিজেপির কারণ তারা বিরোধী শূন্য করতে চাইছে দেশকে? আলোচনা হতেই পারে।
জাতীয় দল হিসেবে এখনো পর্যন্ত ব্যর্থ কংগ্রেস, সিপিএম সহ একাধিক বিরোধী দল। জাতীয় রাজনীতিতে উঠে আসেনি গ্রহণযোগ্য কোনো মুখ যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সমান টক্কর দিতে পারে। সেই দিক থেকে বিবেচনা করলে দেখা যাবে, জাতীয় স্তরে ভারতীয় জনতা পার্টি শিবিরকে যথেষ্ট চাপে রেখেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা সে নাগরিকত্ব আইন বিরোধিতা থেকে শুরু করে কৃষক আইন হোক, কিংবা এনআরসি থেকে শুরু করে হিন্দু মুসলিম বিভাজনের বিরোধিতা, প্রত্যেক ইস্যুতে বিজেপির বিরুদ্ধে হুঙ্কার দিয়েছেন দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। এমনকি লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির বিরুদ্ধে একাধিক বিরোধী শক্তিকে এক ছাতার নিচে আনতে পেরেছিলেন মমতাই। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে সেই বিরোধী শক্তি কোন খেল দেখাতে পারেনি। বলা যায় দিকভ্রষ্ট হয়েছে সকলেই। কিন্তু এখনো যেন নিজের মাটিতে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি একাই হয়তো বিজেপি বিরোধী শক্তি রূপে নিজেকে চিহ্নিত করতে চাইছেন এবং সেই পথে এগোচ্ছেন। এই ক্ষেত্রেই প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে, তাহলে কি বিরোধীদের পুরোদস্তুর ছন্নছাড়া করতে বিজেপির টার্গেট মমতা? মমতাকে পরাস্ত করতে পারলেই ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে বিরোধী শক্তি? সেই কারণেই কি বাংলা নিয়ে এইভাবে কোমর বেঁধে লড়াইয়ে নেমেছে বিজেপি?
আরও পড়ুন- ভোট বড় বালাই! কর্মীদের সঙ্গে নাচের তালে পা মেলালেন স্মৃতি ইরানি
তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে বিজেপির লক্ষ্য বাংলা জেতা নয়, বাংলাকে ‘দখল’ করা। সেই দাবির প্রেক্ষিতে বলা যায়, বিজেপি বুঝে গিয়েছে যে এই মুহূর্তে দেশের রাজনীতির যা অবস্থা তাতে তাদের বিরোধিতার একমাত্র বড় মুখ হতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিপক্ষের নেত্রী হতে পারেন তিনি। এই কারণেই হয়তো বাংলায় নিজেদের সাম্রাজ্য বিস্তার করে সেই শক্তিশালী বিরোধী মুখকে শুরুতেই আটকে দিতে চাইছে গেরুয়া শিবির। সেই জন্য রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের ধারণা, বিজেপির কৌশল শুধুমাত্র বাংলা জেতা বা দখল করা নয়, বিজেপির লক্ষ্য বিরোধী-শূন্য রাজনীতি। সে কারণেই বাংলার বিকাশের প্রতিশ্রুতিকে হাতিয়ার বানিয়ে তারা আদতে চাইছে মমতাকে পরাস্ত করে বিরোধী শূন্য রাজনৈতিক মহল গড়ে তোলার। বিধানসভা নির্বাচনের আবহে বিগত কয়েক সপ্তাহে যতবার বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব বাংলায় এসেছেন এবং এখনো আসছেন, তাতে হলফ করে বলা যায়, অন্য কোনও রাজ্যের তুলনায় বাংলা দখল করার ‘জেদ’ বিজেপির সবথেকে বেশি। তাই অবশ্য ভাবে প্রশ্ন উঠবেই যে বিজেপির এই মানসিকতা হঠাৎ কেন। আর সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বিশ্লেষণ করলে বোঝা যাবে, কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারানো বিজেপি শিবিরের জন্য এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ।