কেন ভিন্ রাজ্যে যেতে হচ্ছে বাংলা শ্রমিকদের? নেপথ্যে কী?

কলকাতা: অবশেষে ঘরে ফিরলেন পেটের দায়ে কাশ্মীরে শ্রম বিক্রি করতে যাওয়া ১৩৩ জন বাঙালি শ্রমিক৷আজ রাজ্য সরকারের উদ্যোগে কাশ্মীরে থাকা আতঙ্কিত শ্রমিকদের সরকারি ব্যবস্থাপনায় ঘরে ফেরানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷ কলকাতা স্টেশন থেকে শ্রমিকদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য সরকারি বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ আজ স্টেশনে গিয়ে শ্রমিকদের রাজ্যে স্বাগত জানান মেয়র ফিরহাদ হামিক৷ আতঙ্কিত শ্রমিকদের পাশে

কেন ভিন্ রাজ্যে যেতে হচ্ছে বাংলা শ্রমিকদের? নেপথ্যে কী?

কলকাতা: অবশেষে ঘরে ফিরলেন পেটের দায়ে কাশ্মীরে শ্রম বিক্রি করতে যাওয়া ১৩৩ জন বাঙালি শ্রমিক৷আজ রাজ্য সরকারের উদ্যোগে কাশ্মীরে থাকা আতঙ্কিত শ্রমিকদের সরকারি ব্যবস্থাপনায় ঘরে ফেরানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷ কলকাতা স্টেশন থেকে শ্রমিকদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য সরকারি বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷

আজ স্টেশনে গিয়ে শ্রমিকদের রাজ্যে স্বাগত জানান মেয়র ফিরহাদ হামিক৷ আতঙ্কিত শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাসও দিয়েছেন মেয়র৷ রাজ্যে ফিরে অবশেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস শ্রমিকদের৷ তবে, আগামী দিন কীভাবে চলবে সংসার? চোখে মুখে ভুটে উঠছে সেই উদ্বেগ৷ কিন্তু, কেন পরিবার ছেড়ে কেন ভিন্ রাজ্যে যেতে বাধ্য হচ্ছেন বাংলার শ্রমিকরা? সমস্যাটা ঠিক কোথায়?

কাশ্মীরে শোফিয়ান জেলায় পাক জঙ্গিদের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে বাংলার পাঁচ শ্রমিক৷ এই খবর গোটা দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়তেই শ্রমিকদের মধ্যে শুরু হয়েছে আতঙ্ক৷ সেই আতঙ্কে এবার তাড়া করে বেড়াচ্ছে ভিন্ রাজ্যে থাকা শ্রমিকদের মধ্যেও৷ এর আগেও একাধিক ঘটনা বাঙালি শ্রমিকদের বিড়ম্বনায় ফেলেছিল৷ কিন্তু, এবার সরাসরি জঙ্গিদের টার্গেট হওয়ার ঘটনায় লাগেজ গুটিয়ে বাড়ি ফেরার তোরজোর শুরু করছেন বাঙালি শ্রমিকদের বড় অংশ৷
কিন্তু, হঠাৎ তাদের বাংলা ছাড়তে হচ্ছে কেন? দুটো টাকা উপার্জনের জন্য কেন ছেড়ে যেতে হচ্ছে পরিবারকে?

শ্রমিকদের একাংশই জানিয়েছেন, প্রশিক্ষণ লাগে না এমন কাজের জন্য তামিলনাড়ু, রাজস্থান, কাশ্মীর যথেষ্ট কাজের সুযোগ রয়েছে৷ এই রাজ্যের তুলনায় ভিন রাজ্যের পোশাক শ্রমিকরা অনেক বেশি মজুরি পান৷ কাশ্মীরে যে সমস্ত শ্রমিকরা কাজ করতে গিয়েছিলেন, তাঁদের বেশিরভাগই উত্তর দিনাজপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ জেলার সংখ্যালঘু পিছিয়ে পড়া পরিবারের সদস্যরা৷ এঁরা মূলত আপেল বাগানের কাজ করতেন৷ থাকতেন আপেল বাগানের মধ্যেই৷ বা ভাড়া বাড়িতে৷

জানা গিয়েছে, প্রতিমাসে উত্তর ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, দুই বর্ধমান, দুই মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার হাজার শ্রমিক ভিন রাজ্যে কাজের খোঁজে পাড়ি দেন৷ এদের মধ্যে সোনারূপো দক্ষ কারিগর যেমন আছেন, তেমনই জুতোর মিস্ত্রি, রাজমিস্ত্রি রয়েছেন৷ তেমনি রয়েছে অদক্ষ শ্রমিকরা৷ প্রশিক্ষণ-অপ্রশিক্ষিত শ্রমিকরা শ্রমের বিনিময়ে মাসে ১৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা সর্বোচ্চ রোজগার করেন৷ কোথাও কোথাও প্রবল কটাক্ষ, উপেক্ষা, হেনস্থা শুনেও রোজগারের আশায় বাংলার শ্রমিকরা মুখ বুজে কাজ করেন৷

শ্রমিকদের একাংশ জানিয়েছেন, বাংলায় এই মুহূর্তে অদক্ষ শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি সাড়ে তিনশ টাকার কাছাকাছি৷ কিন্তু সেই একই কাজে তামিলনাড়ু, রাজস্থান, কাশ্মীরের মতো রাজ্যে সেই মজুরি বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা৷ খাওয়ার খরচ দিয়ে থাকে বিভিন্ন ঠিকাদারি সংস্থা৷ একদিনে অন্তত দুটি হাজিরা কাজ করার সুযোগ পান তাঁরা৷ অর্থাৎ এক হাজিরা দিয়ে যদি সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা মজুরি মিলে৷ দ্বিতীয় হাজিরার ক্ষেত্রেও সমপরিমাণ মজুরি পাওয়া সম্ভব৷ ফলে, একটু বেশি পরিশ্রম করলে দিনে অন্তত হাজার টাকা উপার্জন করা সম্ভব৷

শ্রমিকদের একাংশ জানিয়েছেন, ভিন রাজ্যে ঠিকঠাক কাজ করতে পারলে মেরে থাকা খাওয়া খরচা বাদে কিছু না হলেও ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা ঘরে পাঠানো সম্ভব৷ কিন্তু, বাংলায় সেই পরিস্থিতি নেই বলে মনে করছেন শ্রমিকদের একাংশ৷ আর সেই কারণেই বিপুল মাত্রায় শ্রমিক ভিন রাজ্যে গিয়ে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × four =