কলকাতা: তৃণমূলের পর এবার বনগাঁ পুরসভার দখলের দাবি জানান বিজেপি৷ আজ, দুপুরে বনগাঁ পুরসভার তৃণমূল চেয়ারম্যান জানান, অনাস্থা আনা কাউন্সিলররা ছিলেন না৷ বনগাঁ পুরসভার কার্যনির্বাহী আধিকারিক (ইও) তৃণমূল নেতা শম্ভু দাসকে সভাপতি করে ১০-০ ভোটে বর্তামান পুর-বোর্ডকে চালিয়ে যেতে নির্দেশ দেন৷ এরপর ঘণ্টা দুয়েক পর পাল্টা দাবি করে বিজেপি৷ বিজেপির তরফে জানানো হয়, হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে ১১ জন কাউন্সিলর বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসের সভাপতিত্বে বনগাঁ পুরসভার কার্যনির্বাহী আধিকারিক (ইও)র কাছে অনাস্থা জানিয়ে আসেন৷ ১১-০ ভোটে সেখানে বিজেপি জয়ী হয়েছে বলে দাবি জানানো হয়৷ পরে, অনাস্থ ভোট নিয়ে মুখ খোলেন বনগাঁ পুরসভার কার্যনির্বাহী আধিকারিক৷
বর্তামন পুরবোর্ড কার দখলে থাকবে? সাংবাদিকদের জবাব এড়িয়ে গেলেও বনগাঁ পুরসভার কার্যনির্বাহী আধিকারিক জানান, আস্থা ভোট হয়েছে৷ একটি মাত্র রেজুলেশন হয়েছে৷ কিন্তু, কেউ যদি কোনও কোনও দ্বিতীয় রেজুলেশন আনেন আমার কিছু করার নেই৷ আমি আমার রিপোর্ট জেলা অফিসে পাঠিয়ে দেব৷ আমি এই নিয়ে কিছু বলব না৷’’
বনগাঁ পুরসভার বিজেপির দুই কাউন্সিলর কার্তিক মণ্ডল ও হিমাদ্রি মণ্ডলকে আগামী সাত দিন গ্রেপ্তার করতে পারবে না পুলিশ৷ নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চের৷ অভিযোগ ওঠে, আস্থা ভোটের সময় হাইকোর্টের নির্দেশের পরও ওই দুই কাউন্সিলকে পুরসভার মধ্যেই ঢুকতে দেওয়া হয়নি৷ এমনকি, বিরোধী দলের ৯ জন কাউন্সিলরকে তালা বন্ধ করে রাখা হয় বলেও অভিযোগ ওঠে৷ ফলে, কার্যত বিরোধী-শূন্য আস্থা ভোট করা হয় বনগাঁ পুরসভায়৷ পরে, বিরোধী দলের কাউন্সিলরদের হাজির না থাকায় জয়ী হয় তৃণমূল৷
পরে, হাইকোর্টের নির্দেশ দেখিয়ে পুরসভায় ঢোকেন বিজেপির কাউন্সিলরা৷ সেখানে পুরসভার আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন তাঁরা৷ সেখানে বিজেপি বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসকে সভাপতি করে পুরসভার কার্যনির্বাহী আধিকারিক বা ইওকে ১১-০ ভোটে অনাস্থা আনেন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া কাউন্সিলরা৷ ওই বৈঠকে তৃৃণমূলের কোনও কাউন্সিলরা ছিলেন না৷ তবে, এদিনের আস্থা ভোট নিয়ে উভয় দলের তরফে জয়ের দাবি করা হলেও প্রশাসনের তরফে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি৷
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে আজ ছিল বনগাঁ পুরসভার আস্থা ভোট৷ তিনটে থেকে ভোট নেওয়ার কথা থকলেও পুরসভা চত্বরে বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন করে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশান৷ অভিযোগ, তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে নাম লেখানো ৯ কাউন্সিলরকে পুরসভার গ্যারেজের মধ্যে তালা বন্ধ করে রাখা হয়৷ বাকি দুই কাউন্সিলর কার্তিক মণ্ডল ও হিমাদ্রি মণ্ডলকে আটকে দেয় পুলিশ৷ বিজেপির অভিযোগ, হাইকোর্টের নির্দেশ দেখানোর পরও তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি৷ ততক্ষণে তৃণমূলের তরফে ১০ জন কাউন্সিলরকে নিয়ে আস্থা ভোট কানিয়ে নেন নির্বাচনী আধিকারিক৷ তিনটেয় ভোট হওয়ার কথা থাকলেও ৩টে ২৫ মিনিটে বর্তমান পুরবোর্ডের উপর আস্থা রাখা হয়৷ পুরসভার কার্যনির্বাহী আধিকারিক (ইও) তাঁর প্রশাসনিক কাজ শেষ হওয়ার পর বিজেপির ১১ কাউন্সিলরকে ছেড়ে দেওয়া হয়৷ পরে, বনগাঁ পুরসভার তৃণমূল চেয়ারম্যান বলেন, যাঁরা অনাস্থা এনে ছিল, তাঁরা কেউ উপস্থিত ছিলেন না৷ ফলে, ইও আমাদের বোর্ড চালিয়ে যেতে ছাড়পত্র দিয়েছেন৷
অভিযোগকারী তৃণমূল কাউন্সিলর শম্পা মোহান্তের দাবি, তাঁর বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে অপহরণ করা হয়৷ চাওয়া হয় ২০ লক্ষ টাকার মুক্তিপণ৷ ৩ লক্ষ টাকা দেওয়ার পরেও মুক্তি না দেওয়ার তিনি কোনওক্রমে পালিয়ে বনগাঁ থানায় অভিযোগ করেন৷ বনগাঁ আদালতে তাঁর জবানবন্দি নেওয়া হয়৷ অভিযুক্ত দুই কাউন্সিলরের খোঁজ পুলিশ৷ গোটা ঘটনা ‘সাজানো’ বলে দাবি করে বিজেপি৷ গেরুয়া শিবিরের দাবি, পুরসভা দখল করতে তৃণমূল পুলিশকে কাজে লাগিয়ে বিরোধী কাউন্সিলরদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে৷
দুই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর দায়ের করে দায়ের পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন জানান৷ মঙ্গলবার মামলার শুনানি চলাকালীন মামলার কেস ডায়েরি আদালতে জমা না হওয়ার কারণে আগামী সাতদিন এই দুজন বিজেপির কাউন্সিলরকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারবে না। অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশে বিচারপতি বাকচীর৷ নির্দেশদেন, প্রতিদিন বনগাঁ থানার তদন্তকারী আধিকারিকের কাছে এই দুই কাউন্সিলর হাজিরা দিয়ে আসবেন৷