বঙ্গ জয়ে লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রীত্বের মুখ কে? উত্তর খুঁজছে বঙ্গ বিজেপি

বঙ্গ জয়ে লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রীত্বের মুখ কে? উত্তর খুঁজছে বঙ্গ বিজেপি

দেবময় ঘোষ: বাংলার রাজনীতিতে মুখ কেন এত প্রাসঙ্গিক। প্রশ্ন উঠতে পারে। উত্তরটি শুধু বাংলার ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়। কারণ, মুখ বিহীন ভারতীয় রাজনীতি সম্ভব নয়। কোনও রাজনৈতিক মতাদর্শের গতিধারা হয়ে ভারতীয় জনতা সরকার নির্বাচিত করেছে, তা আংশিক ভাবে সত্য। কোনও উচ্চ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের উপর ভরসা করেই ভোটবাক্সে সুনামি উঠেছে, তা-ই বরং বৃহৎ সত্য। ইন্দিরা থেকে নরেন্দ্র মোদি – এই ঐতিহ্য চলছেই। বাংলার রাজনীতি তার থেকে পৃথক বলে আমি মনে করিনা। ১৯৭৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে সব থেকে বড় পরিবর্তন আসে। বাম সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নেন জ্যোতি বসু। বামফ্রন্ট যতই যুক্তি দিক যে, বঙ্গবাসী কমিউনিস্ট আদর্শে বিশ্বাসী হয়েই বারবার বাম সরকারকে ফিরিয়ে এনেছে এবং এতে কোনও ব্যক্তিগত কৃতিত্ব নেই – তা অনেকাংশেই বাস্তব চিত্র নয়। জ্যোতিবাবুর দিকে তাকিয়ে মানুষ বামফ্রন্টকে ভোট দিয়েছে। তিনি মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার ছাড়ার ১০ বছরের মধ্যেই বামফ্রন্টকে রাইটার্স ছাড়তে হয়।

র্তমানে বাংলার শাসকদলের নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হ্যা, ভুল লিখিনি। বাংলায় বাম বিরোধিতার প্রধান মুখ ছিলেন মমতা। প্রায় এক দশক বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মানুষ তৃণমূল কংগ্রেসকে দেন শুধুমাত্র মমতার কথা ভেবেই। তৃণমূলের তাবড় নেতা অস্বীকার করার দুঃসাহস দেখবেন না। আর তাই জন্যই হয়ত, আজ একটি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন মাঝে মধ্যেই উঠে আসে, তৃণমূলে মমতার পর কে? হয়ত নিশ্চয়ই কেউ আছেন। তাকে সন্তর্পনে তৈরি করে রাখা হচ্ছে। হয়ত আমার আপনার নজরে বাইরে তিনি তৈরি আছেন। বা ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছেন। কিন্তু, একথা অস্বীকার করা যায় না, সেই ব্যক্তিত্বকে মমতার ছায়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। মমতার ছায়া'ই তার সব থেকে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারে।

২০২১ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীত্বের মুখ কে? মুখ কী থাকতেই হবে? এতগুলি কথার পর এই প্রশ্ন অপ্রাসঙ্গিক। বিজেপি মুখ বিহীন রাজনীতি করে না। ১৬ দিনের অটল বিহারী বাজপেয়ীর সরকার পরে গিয়েছিল, সেদিনও তিনি বিজেপির মুখ ছিলেন। আপনাদের জেনে রাখা ভাল, ১৯৯৬ সালের ওই লোকসভা নির্বাচনের আগেই বাজপেয়ীকে প্রধানমন্ত্রী পদের মুখ হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন স্বয়ং লালকৃষ্ণ আদবানি। খুশি ছিলেন না বাজপেয়ী। আরে, আগে ভোটে তো জিতুক পার্টি। ভোটে বিজেপি সর্ব বৃহৎ পার্টি হয়। রাষ্ট্রপতি শংকর দয়াল শর্মা বাজপেয়ীকে সরকার গড়তে ডাকেন। দেশের ১০ম প্রধানমন্ত্রী তো হয়েছিলেন বাজপেয়ী, কিন্তু সংসদে সংখ্যা গরিষ্টতা প্রমান করতে পারেননি।

তারপরও, ১৯৯৮ সালেও প্রধানমন্ত্রীত্বের মুখ ছিলেন বাজপেয়ী। বিজেপি তাকে সামনে রেখেই নির্বাচনে লড়াই করেছিল। সেই সরকারও টিকেছিল ১৩ মাস। এরপর তৃতীয় ধাপে, ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ – প্রথম একক সংখ্যা গরিষ্ঠ সরকার গঠন করেন বাজপেয়ী। দল ও সরকারের মুখ ছিলেন তিনিই।

জনপ্রিয় মুখ নরেন্দ্র মোদিকে সামনে রেখেই ২০১৪ সালে নির্বাচনে নেমেছিল বিজেপি। পিছিয়ে যান শিবরাজ সিং চৌহান, নিতিন গটকরি। মুখ ছাড়া এতবড় নির্বাচনে লড়াই করবে না বিজেপি। রাজ্য বিজেপির সভাপতি হিসাবে সেটা ভাল করেই জানেন দিলীপ ঘোষ। রাজ্যে বিজেপির নির্বাচনের অন্যতম দায়িত্বে রয়েছেন মুকুল রায়। তিনি কী মুখ্যমন্ত্রীর মুখ হতে পারেন, নাকি দিলীপ ঘোষ? নাকি অন্য কেউ অজানা …। উত্তর নেই। উত্তর খুঁজছে বিজেপি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ten − five =