কলকাতা: প্রতিবেশী কাকুর বাড়িতে গেলে অপরাধ কোথায়? মঙ্গলবার বিজেপির পার্টি অফিসে বসে সাংবাদিক বৈঠক করে ‘কাকা-ভাইপো’র সম্পর্ক নিয়ে মুখ খুললেন অনুপম৷ গোটা ঘটনাটি চক্রান্ত বলেও দাবি করেন তিনি৷ আগে থেকেই চিত্রনাট্য সাজিয়ে রাখা হয়েছিল বলেও অভিযোগ তোলেন অনুপম৷ মিডিয়া তাঁকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর খবর ছড়িয়ে বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি৷
বলেন, ‘‘মিডিয়া সব ঘটনা দেখায়নি৷ আমাকে নিয়ে এভাবে চক্রান্ত করা হবে, তা আমার আগে জানা ছিল না৷ কাকিমার মৃত্যুর পর আমি অনুব্রত কাকুর বাড়িতে গিয়েছিলাম৷ আমি কাল বীরভূমে গিয়েছিলাম, ভোট দিতে৷ তারপর অনুব্রতর সঙ্গে দেখা করি৷’’ অনুপমের যুক্তি, ‘‘আপনার প্রতিবেশীর বাড়িতে যদি কারার মৃত্যু হয়, তাহলে আপনি যাবেন না? মুখ দেখাদেখি বন্ধ থাকলেও একবার হলেও আপনি যাবেন৷ আমি অধ্যাপক মানুষ৷ আবেগপ্রবণ৷ তাই আমি আমার প্রতিবেশী অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে দেখা করি৷’’
চতুর্থ দফার ভোটে ‘কাকা-ভাইপো’র সম্পর্ক ঘিরে তুঙ্গে বঙ্গ রাজনীতি৷ সৌজন্যে, অনুব্রত-অনুপমের সাক্ষাৎকার৷ অনুপমের সঙ্গে অনুব্রতর সাক্ষাত ঘিরে ক্ষুব্ধ বিজেপি নেতৃত্ব৷ দলের রীতি ভেঙে কেন বিরোধী নেতার সঙ্গে বাড়িতে প্রার্থী? অবিলম্বের ব্যাখ্যা জানানোর নির্দেশ বিজেপি নেতৃত্বের৷ জেলা নেতৃত্বের কাছে পূর্ণ রিপোর্ট পেশের নির্দেশ দলীয় নেতৃত্বের৷
বিজেপি সূত্রে খবর, এদিন দিলীপ ঘোষ রাজ্য বিজেপির সদর দপ্তরে গিয়ে অনুপমের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। বলেন, ‘‘ভোট চলাকালীন কেন এমন কাজ করল যাদবপুরের বিজেপি প্রার্থী অনুপম হাজরা? এতে কর্মীদের মনোবল ভেঙে পড়ছে৷’’ এরপরই অনুপমকে শোকজ সিদ্ধান্ত নেয় বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব৷
একদিকে যখন তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে মাঠে ময়দানে মার খাচ্ছেন দলীয় কর্মীরা, ঠিক তখনই আচমকা অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে সাক্ষাত করতে সটাল বোলপুরে হাজির অনুপম হাজরা৷ শুধু দেখাই করা নয়, পাত পেরে জমিয়ে খেলেন যাদবপুরের বিজেপি প্রার্থী৷
অনুব্রত-অনুমপের সাক্ষাৎকারে রাজনীতিক জল্পনা বেশ খানিকটা চড়িয়ে দিয়েছেন বীরভূমের জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল৷ ভাইপোকে দেখে স্নেহের সুরে কাকা অনুব্রত বলেন, ‘‘বোকামি করেছে। ওকেই প্রার্থী করতাম৷ তোকে আবার দলে ফিরিয়ে নেব৷’’
কমিশনের তরফে নজরবন্দি করা হলেও আজ সোমবার দলীয় দপ্তরে বসে ভোট পরিচালোনা করছিলেন অনুব্রত মণ্ডল৷ হঠাৎ তাঁকে ফোন করে অফিসে আসেন বিজেপির প্রার্থী৷ অফিসে ঢুকে অনুব্রতর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেন অনুপম৷ জানিয়ে দেন, ‘‘কাকার কাছে এসেছি। বীরভূমে অনুব্রতই শেষ কথা৷’’ প্রণাম করার পাশাপাশি কাকে জড়িয়ে ছবিও তোলেন অনুমপ৷
দলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করার দায়ে দল থেকে সাসপেন্ড হন অনুপম হাজরা৷ যোগ দেন বিজেপিতে৷ যাদবপুর কেন্দ্রের প্রার্থীও হন তিনি৷ বিজেপিতে যোগ দিয়ে কাকার বিরুদ্ধে মুখ খোলেন অনুপম৷ তৃণমূলের অন্দরের কথাও তুলে ধরেন তিনি৷ কিন্তু, বিজেপির টিকিটি ভোটের প্রচারে বেরিয়ে বিজেপি কর্মীদের প্রকাশ্যে ‘অপদার্থ’ বলেও কটাক্ষ করেন অনুপম৷ দলীয় কর্মীদের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করার দু’দিনের মধ্যেই অনুব্রত’র স্মরণে অনুপম৷ সৌজন্য সাক্ষাৎকার হলেও গোটা ঘটনার পিছনে ‘সেটং’ দেখছে বাম-কংগ্রেস৷ শুরু তর্জা৷