কলকাতা: প্রায় এক মাস হতে চলল, বন্ধ রাজ্যের সব আদালত৷ জারি অচলাবস্থা চলছে৷ এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে হাওড়া আদালতের আইনজীবীদের উপর পুলিশের নির্মম লাঠি চালানোর ঘটনায় এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করল কলকাতা হাইকোর্ট৷ আগামী ৩ মাসের মধ্যেই তদন্ত কমিটিকে রিপোর্ট পেশের নির্দেশ আদালতের৷ আদালতের তরফে এই রায় নির্দেশ জারি হওয়ার পর আদৌও কাটবে জট? নাকি জারি থাকবে অচলাবস্থা?
গত ২৪ এপ্রিল হাওড়া আদালতের আইনজীবীদের উপর পুলিশের নির্মম লাঠি চালানোর প্রতিবাদে রাজ্যের সমস্ত আদালতের আইনজীবীরা কাজ বন্ধ রেখেছেন৷ তাঁদের দাবি, ওই ঘটনায় জড়িত পুলিশ কর্মীদের শাস্তি চাই৷ ২৫ এপ্রিল থেকে আইনজীবীরা কর্মবিরতি শুরু করেছেন৷ কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি এই ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেছেন৷ তাতেও সমস্যা মেটেনি৷ মঙ্গলবার তদন্তকমিটিও গঠন করে দিয়েছে আদলাত৷ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আদামী ২৫ তারিখ আইনজীবীদের বৈঠক রয়েছে৷ মনে করা হচ্ছে, ওই দিনই কর্মবিরতি তুলে নিতে পারেন আইনজীবীরা৷
কেননা, আদালত বন্ধ থাকায় রাজবী কুমার মামলা সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আপাতত পণ্ড৷ দেশের সর্বোচ্চ আদালতও রাজ্যের আদালতগুলির অচলাবস্থা নিয়ে মুখ খুলেছে। শীর্ষ আদালতের বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার বেঞ্চ সামগ্রিক পরিস্থিতিকে অস্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেছেন৷ তাঁদের পর্যবেক্ষণ, আইনজীবীদের কাজ বন্ধের জন্য প্রচুর মানুষ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে৷
সর্বোচ্চ আদালতের এই পর্যবেক্ষণ রাজ্য বার কাউন্সিলের কানে পৌঁছেছে কি না, জানা যায়নি৷ মঙ্গলবার বার কাউন্সিল পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করবে বলে ঠিক করেছিল৷ কিন্তু তাদের বৈঠকে কোনও সমাধান হয়নি। ফলে হাজার হাজার বিচারপ্রার্থী মহা সমস্যায় পড়েছেন। এমনিতেই রাজ্যের আদালতগুলিতে মামলার পাহাড় জমে রয়েছে। বহু মানুষ আদালতে এসে ফিরে যাচ্ছেন। কারও হয়তো জামিন পাওয়া আটকে রয়েছে, কেউ খোরপোসের মামলার ফয়সালা হচ্ছে না বলে সমস্যায় পড়েছেন, কেউ হলফনামা করাতে পারছেন না। কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার আদালতের কর্মবিরতির জন্য তাঁর একটি মামলায় আগাম জামিনের আবেদন করতে পারছেন না৷ তিনি বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছেন৷
আইনজীবীদের উপর পুলিশের লাঠি চালানো অবশ্যই নিন্দনীয়। ওই ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবিও অযৌক্তিক নয়। কিন্তু তাই বলে এক মাস ধরে কলকাতা হাইকোর্ট সহ রাজ্যের সমস্ত আদালতে কোনও কাজ হবে না, মানুষ দিনের পর দিন বিচার না পেয়ে ফিরে যাবেন। এ কেমন কথা? পুলিশ তো অনেক সময় সাধারণ মানুষকে নানা কারণে হেনস্তা করে, মারধর করে। তাদের প্রতিবাদ করার কোনও জায়গা নেই। তাই তাদের মুখ বুজে সব সহ্য করতে হয়। আর আইনজীবীদের ক্ষমতা আছে বলেই তাঁরা এভাবে মানুষকে বিপদে ফেলবেন? এখন রাজ্যের পুলিশ প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের হাতে। তারাই বা কী করছে? আশার কথা, ভোট পর্ব মিটলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার কাউন্সিলের সঙ্গে কথা বলবেন। দেখা যাক, তাঁর হস্তক্ষেপে আদালতের অচলাবস্থা কাটে কি না৷