নিজস্ব প্রতিনিধি: একুশে জুলাইয়ের শহিদ দিবসের মঞ্চ থেকে এবার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি বার্তা দেন সেটা রাজ্য রাজনীতিতে অন্যতম কৌতূহলের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতদিন বাম, কংগ্রেস এবং বিজেপি তিনটি দলকেই সমানভাবে নিশানা করে এসেছেন মমতা। কিন্তু বেঙ্গালুরুতে জোট বৈঠক অর্থাৎ ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ তৈরির পর রাহুল গান্ধীকে নিয়ে মমতার অ্যালার্জি পুরো কেটে গিয়েছে। তাই এবার মমতা আগের মতো কংগ্রেসকে আক্রমণ করবেন না বলেই মনে করা হচ্ছে। কংগ্রেসের পাশাপাশি সিপিএমের প্রতিও মমতার নরম অবস্থান নেওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। যেহেতু সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি জোট বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, তাই তাঁদের প্রতিও মমতা কড়া বার্তা দেবেন না বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে।
যদিও রাজ্য রাজনীতির বাধ্য বাধকতার কারণে রাজ্য কংগ্রেস বা সিপিএম নেতৃত্বকে মমতা নিশানা করতেই পারেন। সেক্ষেত্রে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীকে ঘুরিয়ে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করবেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। শুধু মমতা নয়, একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের কাছ থেকে বকেয়া টাকা পাওয়ার দাবিতে নতুন করে ‘দিল্লি চলো’র যে ডাক দেবেন তা বোঝাই যাচ্ছে। কারণ পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারে নেমে এই বিষয়টি নিয়ে অভিষেক লাগাতার নিশানা করে গিয়েছেন বিজেপিকে। তাঁরা যে দিল্লিতে দরবার করবেন সেটাও একাধিকবার বলেছেন।
এই আবহের মধ্যে একটাই প্রশ্ন, এবারের শহিদ দিবসের মঞ্চের তাৎপর্য কতটা রয়েছে? এবার শহিদ দিবস কর্মসূচির ৩০ বছর পূর্ণ হচ্ছে। সেই মঞ্চ থেকে সর্বভারতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটকেই মূলত তৃণমূল নেত্রী যে বেছে নেবেন, তা স্পষ্ট। সেটা না হলে ‘ইন্ডিয়া’ জোট আগামী দিনে জোর ধাক্কা খাবে। সেক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিজেপি বিরোধিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যাবে। তাই রাজনৈতিক মহল নিশ্চিত এবার মমতা মূলত বিজেপিকেই মূল টার্গেট করবেন। বর্তমানে বিভিন্ন দুর্নীতির মামলার তদন্তে গতি বাড়িয়েছে সিবিআই এবং ইডি। তাই মমতার নিশানায় বিজেপির পাশাপাশি সিবিআই এবং ইডিও যে থাকবে, তা একপ্রকার নিশ্চিত। তবে পঞ্চায়েত ভোটকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া বেলাগাম হিংসা মুখ্যমন্ত্রীকে যে যথেষ্ট অস্বস্তিতে ফেলেছে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
মূলত এই ইস্যুতে রাজ্যের কংগ্রেস, সিপিএম এবং বিজেপি তৃণমূলের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার হয়েছে। তাই একুশের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী ভোট হিংসা নিয়ে মুখ খোলেন কিনা তা নিয়েও যথেষ্ট কৌতূহল রয়েছে বাংলার রাজনীতি সচেতন মানুষের। এবারের একুশের সমাবেশের দিকে কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্বের যে বিশেষ নজর থাকবে তা বোঝাই যাচ্ছে। কারণ মমতা যেভাবে বিরোধী জোট গঠনে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন তাতে নিঃসন্দেহে চিন্তা বেড়েছে বিজেপির। তাই লোকসভা নির্বাচনের আগে মমতার প্রতিটি কর্মসূচির দিকে বিজেপি বিশেষ নজর থাকবে, এবং তার পাল্টা কর্মসূচি তারা করবে এটা বোঝাই যাচ্ছে। সব মিলিয়ে এবারের একুশের সমাবেশ বাংলা তথা কেন্দ্রীয় রাজনীতিকে যথেষ্ট আন্দোলিত করবে বলেই মনে করা হচ্ছে।