কী করছে পুলিশ? রাজ্যের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠা WBCS স্ত্রীর

কলকাতা: কেটে গিয়েছে মূল্যবান ৭২ ঘণ্টা৷ এখনও নিখোঁজ নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক অর্ণব রায়৷ তিন দিন পরও স্বামীর খোঁজ না পেয়ে এবার পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন অর্ণব রায়ের স্ত্রী অনীশা যশ৷ রাজ্য প্রশানের বিরুদ্ধে কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করে WBCS অফিসার অনীশা যশ সাফ জানিয়েছেন, ‘‘সবার সহযোগিতা পাচ্ছি ঠিকই? কিন্তু, পুলিশকেও আরও বেশি সক্রিয় হওয়া

কী করছে পুলিশ? রাজ্যের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠা WBCS স্ত্রীর

কলকাতা: কেটে গিয়েছে মূল্যবান ৭২ ঘণ্টা৷ এখনও নিখোঁজ নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক অর্ণব রায়৷ তিন দিন পরও স্বামীর খোঁজ না পেয়ে এবার পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন অর্ণব রায়ের স্ত্রী অনীশা যশ৷ রাজ্য প্রশানের বিরুদ্ধে কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করে WBCS অফিসার অনীশা যশ সাফ জানিয়েছেন, ‘‘সবার সহযোগিতা পাচ্ছি ঠিকই? কিন্তু, পুলিশকেও আরও বেশি সক্রিয় হওয়া উচিত৷ তিন দিন ধরে পাগলের মতো এখানে-ওখানে ঘুরছি৷ অথচ, কেউ কিছুই বলতে পারছেন না৷ কোথায় গেলে, কীভাবে পাব আমার স্বামীর খোঁজ৷’’

তাঁর আক্ষেপ, ‘‘তিন দিন হয়ে গেল, অথচ কেউ আমার স্বামীর খোঁজ দিতে পারল না৷ আমি চাই ও সুস্থ ভাবে ফিরে আসুক৷ জেলা প্রশানের লোকজন সবরকম চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন৷ তবে, এখনও পর্যন্ত আমার স্বামীর কোনও খোঁজ পাইনি৷’’

তিনি আশাবাদী, ‘‘আমার স্বামী কোনও ভাবেই মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত বা বিভ্রান্ত ছিলেন না৷ তার কারণ, আমি বৃহস্পতিবার স্বামীর অফিসে গিয়েছিলাম৷ সব ঠিকঠাক ছিল৷’’ কমিশনের তরফে ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখানো হলেও তাঁর সাফ জবাব, ‘‘উনি আমার স্বামী৷ সেদিন ওর সঙ্গে ছ’বার কথা হয়েছিল৷ কিন্তু, হঠাৎ যে কী হল…৷’’ কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘আমি করজোড়ে প্রার্থনা করছি, সবাই মিলে চেষ্টা করুন, আমার স্বামীকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন৷ ওর বাবা-মায়ের এক ছেলে৷ ওঁদের খুব কষ্ট হচ্ছে৷ ওঁদের কাছে অর্ণবকে ফিরেয়ে দিন প্লিজ৷ কেউ আমার স্বামীকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন৷’’

গত পঞ্চায়েত ভোটে রাজকুমার রায়ের মৃত্যুর ক্ষত এখনও শুকায়নি। সেই মৃত্যুর তদন্ত ও বিচার চেয়ে বহু আন্দোলন মিটিং মিছিল এমনকী মামলা পর্যন্ত হয়েছে। এরই মধ্যে ১৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার থেকে নদীয়া জেলায় নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার অর্ণব রায়ের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। জেলার ইভিএম ও ভিভিপ্যাটের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। কর্মসূত্রে জেলার ১০০ দিনের প্রকল্পের নোডাল অফিসার তিনি।

এই নিখোঁজ সংবাদ নিয়ে বিতর্কও তুঙ্গে উঠেছে। শুক্রবার নির্বাচন দপ্তরের বিশেষ পর্যবেক্ষক অজয় নায়েক দাবি করেন, অর্ণববাবু মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। অন্যদিকে অর্ণব রায়ের স্ত্রী অনীতা যশ ফেসবুকে খোলা বার্তা দিয়েছেন, তাঁর স্বামী কোনও অবসাদে ভুগছিলেন না। তিনি এই নিয়ে কোনও রটনা-জল্পনা না করার জন্য সকলকে অনুরোধ করেছেন৷ তাঁর খোঁজ দেওয়ার জন্য সমস্ত সাধারণ মানুষের কাছেই সাহায্য চেয়েছেন।

এই নিখোঁজ সংবাদ অন্য সাধারণ ভোটকর্মীদের মধ্যেও আশংকা তৈরি করেছে। শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চের পক্ষ থেকে কিংকর অধিকারী জানান, নির্বাচন প্রক্রিয়া চলাকালীন একরম দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন অফিসারের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে বর্তায় নির্বাচন কমিশনের ওপর৷ তিনি দ্রুত অর্ণববাবুর সুস্থভাবে ফিরে আশার কামনাও করেন। নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির রাজ্য নেতা কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, এই ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ও এত গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা একজন অফিসারের জন্য নির্বাচন কমিশনের আরও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার প্রয়োজন ছিল। এই অবস্থায় কত শীঘ্র অর্ণববাবুর সন্ধান পাওয়া যায়, সেটাই সকল ভোটকর্মী ও সাধারণ মানুষের কাছে দেখার বিষয়।

কী করছে পুলিশ? রাজ্যের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠা WBCS স্ত্রীর৭২ ঘণ্টা অতিক্রান্ত৷ এখনও নিখোঁজ ভোটের দায়িত্বে থাকা নদিয়ার নোডাল অফিসার অর্ণব রায়৷ WBCS অফিসার নিখোঁজ রহস্যের পিছনে ‘ব্যক্তিগত’ কারণ থাকতে পারে বলে আশঙ্কা স্পেশাল অবজার্ভার অজয় ভি নায়েকের৷ সংবাদমাধ্যমে তিনি জানিয়েছেন, গোটা বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করছে৷ এই ঘটনার সঙ্গে ভোটের কোনও সম্পর্ক নেই৷ ব্যক্তিগত কারণ থাকতে পারে৷

৭২ ঘণ্টা নিখোঁজ থাকার পর শনিবার সকাল পর্যন্ত অর্ণব রায় নিখোঁজ রহস্যের জট এখনও কাটাতে পারেনি পুলিশ৷ WBCS অফিসার অর্ণবের গাড়ির চালকে জেরা করেও মেলিনি কোনও সমাধান সূত্র৷  নোডাল অফিসারের খোঁজে পুলিশের তরফে তদন্ত শুরু হলেও এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তারি কিংবা আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের কোনও খবর পাওয়া যায়নি৷

প্রায় দেড় দিন নিখোঁজ থাকায় অর্ণবের পরিবারের মধ্যে শুরু হয়েছে তীব্র উৎকণ্ঠা৷ আসানসোলের বাড়িতে বসে ছেলের অপেক্ষায় কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মা৷ ছেলের খোঁজে নাওয়া-খাওয়া ভুলে পাথর অর্ণবের বাবাও৷ ছেলের ফেরার অপেক্ষায় গোটা পরিবার৷

ভোটের কাজে গিয়ে রাজকুমার রায়ের মতোই নিখোঁজ নদিয়ার নোডাল অফিসার অর্ণব রায়৷ ইভিএম ও ভিভিপ্যাটের দায়িত্বে ছিলেন তিনি৷ অভিযোগ, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে আর কোনও খোঁজ মিলছে না নোডাল অফিসার অর্ণব রায়ের৷

জানা গিয়েছে, নির্বাচনে কাজের জন্য বৃহস্পতিবার সকালেও বীপ্রদাস পালচৌধুরী পলিটেকনিক কলেজে যান অর্ণব রায়। এদিন দুপুরে খাওয়ার পর তাঁকে আর দেখা যায়নি। তিনি যে গাড়িটি ব্যবহার করতেন সেটিও রয়েছে। গাড়ির চালকের কাছে অর্ণবের কোনও খবর নেই৷ অর্ণব রায়ের সহকর্মীদের বক্তব্য, বহু জায়গায় খুঁজেও তাঁর কোনও সন্ধান পাওয়া যাননি৷ দুটি মোবাইলও সুইচড অফ৷ রাতভর তাঁর খোঁজ না মেলায় অর্ণব রায়ের স্ত্রীকে নিয়ে কোতয়ালি থানায় যান জেলার এসপি ও জেলাশাসক৷ সেখানে তাঁরা একটি নিখোঁজ ডাইরি করেন৷

জেলা প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের অভিযোগ, অর্ণববাবুকে কোনও একটি বিষয় নিয়ে প্রশাসনের উচ্চপদস্থ এক কর্তা ধমক দেন। গত বুধবার তাঁকে ওসি ইভিএমের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে ডিপিআরডিও আজমল হোসেনকে সেই কাজ দেখতে বলা হয়। এই ঘটনার পর ওই অফিসারের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। যদিও অভিযোগের বিষয় মানতে চাননি নদীয়ার জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা। নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকেও জানানো হয়েছে, ঘটনার পিছনে ভোট সংক্রান্ত কোনও বিষয় নয়, কোনও ব্যক্তিগত কারণ থাকতে পারে। পরিস্থিতি দেখে অন্য কাউকে ইভিএমের দায়িত্ব দেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে নিখোঁজ ওই ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। ওই দিন গভীর রাতে তাঁর স্ত্রী কৃষ্ণনগর কোতোয়ালি থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। শুক্রবার রাত পর্যন্ত তাঁর খোঁজ মেলেনি। তাঁর দু’টি মোবাইলও বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বন্ধ। অর্ণববাবুর স্ত্রী অনীশা যশ নদীয়ায় জেলাশাসকের দপ্তরেই কর্মরত। তিনিও ডব্লিউবিসিএস (এক্সিকিউটিভ) অফিসার। স্বামীকে ফোনে না পেয়ে অনীশাদেবী জেলাশাসকের কাছে যান। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে খোঁজ চালিয়েও রাত পর্যন্ত অর্ণববাবুর খোঁজ না পেয়ে রাত ১টা নাগাদ কৃষ্ণনগর কোতোয়ালি থানায় গিয়ে নিখোঁজ ডায়েরি করেন। বৃহস্পতিবার মোবাইলের শেষ টাওয়ার লোকেশন শান্তিপুর পাওয়া গিয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, অর্ণববাবুর বাড়ি আসানসোলে। ২০১৬ সালে নদীয়ায় জেলাশাসক দপ্তরে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে আসেন। এখানে তিনি ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে নোডাল অফিসার। লোকসভা নির্বাচনে ওসি ইভিএমের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে।

এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর শিক্ষক শিক্ষা কর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের যুগ্ম সম্পাদক কিংকর অধিকারী জানান, এই ঘটনায় তাঁরা চিন্তিত৷ বলেন, ‘‘কোনও প্রলোভনে পা নয়৷ ১০০ শতাংশ বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিতে জেলায় জেলায় তীব্র আন্দোলন জারি থাকবে৷ দলমত নির্বিশেষে এগিয়ে আসুন সবাই৷ আমাদের দাবি যে কতটা বাস্তবসম্মত তা প্রমাণিত হচ্ছে৷’’

পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় গত ১৪ মে ইটাহারে ভোট গ্রহণের কাজে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন ৪৮ নম্বর বুথের প্রিসাইডিং অফিসার রায়গঞ্জের বাসিন্দা রাজকুমার রায়। পরদিন ১৫ মে সন্ধ্যায় রায়গঞ্জের সোনাডাঙা এলাকায় রেললাইনের ধার থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। রাজকুমার রায়ের মৃত্যু ঘিরে উত্তাল হয়ে ওঠে বাংলা৷ সিবিআই তদন্ত চেয়ে দায়ের হয় কলকাতা হাইকোর্টে৷ সেই মামলার সমাধান এখনও সময়নি৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × 2 =