বাংলা ভোটে কতটা প্রভাব ফেলবে বাম-কংগ্রেস জোট? হঠাৎ কেন সিলমোহর কেন্দ্রীয় কমিটির?

বাংলা ভোটে কতটা প্রভাব ফেলবে বাম-কংগ্রেস জোট? হঠাৎ কেন সিলমোহর কেন্দ্রীয় কমিটির?

c81d1b766ccea9e3450e366a2a2a338e

তপন মল্লিক চৌধুরী : আগামী বছর এ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে ময়দান ইতিমধ্যেই তেতে উঠেছে৷ তার মধ্যে অতি সম্প্রতি সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে লড়াইয়ের পক্ষে সিলমোহর দিয়েছে৷ বাম-কংগ্রেসের সেই জোটবার্তা ভোটের ময়দানে লড়াই অন্য মাত্রা জুগিয়ে দিয়েছে৷

প্রসঙ্গত আর আগের ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের প্রস্তাব উড়িয়ে দিয়েছিল সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি৷ তা স্বত্বেও এ রাজ্যে বাম ও কংগ্রেস যৌথ সভা করেছিল। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও রাহুল গান্ধীকে একই মঞ্চে দেখা গিয়েছিল। সেই ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল কেন্দ্রীয় কমিটি। তা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেয়। বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্রদের মতো নেতারা রাজ্যের ভোটে পার্টির রীতিনীতি অমান্য করেছেন বলে রীতিমতো সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। আলিমুদ্দিন পরিস্থিতি সামলাতে তখনকার কংরেস-সিপিএম জোটকে নিছক ‘আসন সমঝোতা’ বলে ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। অন্যদিকে বামেরা মাঝপথ থেকে পিছিয়ে যাওয়ায় যথেষ্ট ক্ষুব্ধ হয়েছিল কংগ্রেস। গত লোকসভা ভোটের আগে সিপিএমের তরফে কংগ্রেসের সঙ্গে নমনীয় অবস্থান নেওয়া হয়েছিল। কার্যত সেবার কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের জোট হয় রাজ্যের মাত্র চারটি আসনে। তারপরের ঘটনা নতুন করে না বলাই ভাল৷

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের পক্ষে মত দিয়েছে৷ বাংলা ছাড়াও আরও ৩ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে জোট বেঁধে লড়াইয়ের সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিয়েছেন বামশিবির৷ যদিও দলের জোট লাইনের সঙ্গে একমত হতে পারেন নিকেন্দ্রীয় কমিটির ৮ নেতা। ওই ৮ সদস্য অবশ্য অন্য কোনও মত দেন নি। কমিটির বাকি সদস্যেরা দলীয় লাইনের সঙ্গে সহমত পোষণকরেছেন বলেই ধরে নেওয়া যায়। পাশাপাশিসিপিএম পলিটব্যুরো দলের এই লাইনের পক্ষে সায় দেওয়ার পরে কেন্দ্রীয় কমিটি সিদ্ধান্ত নেয়-তামিলনাড়ু, পশ্চিমবাংলা ও অসমে দল কংগ্রেস ছাড়াও অন্য ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক সংগঠনের সঙ্গে জোট বেঁধে বিধানসভা ভোটে লড়াই করবে। ব্যতিক্রম একমাত্র কেরলে। সেখানে কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা৷

সিপিএমের তরফে সীতারাম ইয়েচুরি জানিয়েছেন, দেশে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের রাজনীতি থেকে শুরু করে ধর্মীয় অস্থিরতা তৈরি করেছে বিজেপি। তারা জনগণের টাকায় দুর্নীতি করছে। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি তথা মোদী-শাহের দলের বিরুদ্ধে এই ইস্যুগুলিকে সামনে রেখেইসিপিএম গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরেপেক্ষ দলগুলির সঙ্গে একজোট হয়ে লড়তে চায়। ইয়েচুরি আরও বলেন, আসাম এবং পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির এবং তৃণমূল উভয়ই ধর্ম নিয়ে মেরুকরণের রাজনীতি করছে। ওই দুই সাম্প্রদায়িক দলের ক্ষমতাকে ধ্বংস করতে গেলে নির্বাচনে কংগ্রেস এবং অন্যান্য ধর্মনিরপেক্ষ দলের সঙ্গে একজোট হয়েই লড়াই করতেই হবে, সিপিএম সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু কেরলে কেন ব্যতিক্রম ঘটবে সে প্রসঙ্গেসিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি জানান, ভিন্ন রাজ্য হওয়ায় পরিস্থিতিও আলাদা।এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। পশ্চিমবঙ্গেও জ্যোতি বসুর আমলে সিপিএম এবং কংগ্রেস একসঙ্গে লড়াই করেছে৷ এবার বিজেপি ও তৃণমূলের মোকাবিলায় সিপিএম কংগ্রেসের সঙ্গে সমন্বয় করে চলবে৷

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে ‘বাংলায় দোস্তি, কেরলে কুস্তি’-এ ধরণের দুর্নাম থেকে মুখরক্ষা করতে সিপিএম মাঝামাঝি পথ পথ বেছে নিয়েছিল। স্পষ্টাস্পষ্টি কংগ্রেসের নাম উচ্চারণ না করে বামফ্রন্টের সব থেকে বড় শরিক জানিয়েছিল, এই রাজ্যে সাম্প্রদায়িকশক্তি ও তার লেজুরকে রুখতে নির্বাচনে ধর্মনিরপেক্ষ দলের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা করা হবে। তখন কংগ্রেসের নাম মুখে আনতে সিপিএম নেতৃত্ব লজ্জা বোধ করতেন। অথচ নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সেই দলের সঙ্গেই সমঝোতার রাস্তায় হাটতে হচ্ছে। তাই ‘ধর্মনিরপেক্ষ দল’ বলে খানিকটা শ্যাম ও কূল রাখার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তাতেও নির্বাচনী সাফল্য তো দূরের কথা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয় রাখা দায় হয়ে উঠেছিল। তার আগে প্রশ্নউঠেছিলজোটের ভবিষ্যৎ নিয়েও। কংগ্রেস গোঁ ধরে থাকায় ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে শেষ পর্যন্ত আর জোট হয়নি। যার ফলাফলসিপিএমের ভাড় শূন্য হয়ে যায়। আর শূন্য ঘরে বিজেপি তুলে নেয় ১৮টি আসন। এই পরিস্থিতির কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সিপিএম নেতৃত্বের একাংশ বলেছিলেন, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির অবস্থান দেখে সিপিএম-কংগ্রেসের জোটের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে বড়সড় সংশয় তৈরি হয়েছিল৷ তবে কি ভাবতে হবে এবার কেন্দ্রীয় কমিটি সেই পরিস্থিতি অনুধাবন করতে পেরেছেন তাই অবস্থান পরিবর্তন করলেন?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *