ঝাড়গ্রাম: রাজ্য সরকার ও মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া পুলিশ সেবা মেডেল ও বিশেষ পদক ফেরত দিয়েছেন বলে জানালেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার প্রাক্তন পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ৷
ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর মিলিয়ে তিনি টানা ৪ বছর জঙ্গলমহলে কাজ করেছেন৷ তাঁর সময়েই মাওবাদী নেতা কিষেনজী গুলি করে হত্যা করে পুলিশ৷ বুধবার তাঁর দাসপুরের বাড়িতে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, যে সরকার আমার কাজের সুনাম করে। আবার সেই অফিসারকে দিয়ে অন্যায় কাজ করায়। সেই অফিসার তা না করতে চাইলে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা সাজিয়ে তাঁকে হেনস্থা করা হয়। এই দ্বিচারিতা চলতে পারে না। আত্মসম্মান বোধ আছে এমন কোনো অফিসারের এই রাজ্য সরকারের কাছ থেকে কোনো পদক নেওয়া উচিত নয় বলে তিনি মনে করেন।
রাজ্যে সিভিল সার্ভিসে কাজ করা পদস্থ আমলাদের প্রতি তার বার্তা, যাঁরা আধিকারিকদের সম্মান জানাতে জানে না, যাঁদের মানসিকতা নিচু মানের সেই রাজ্য সরকারের কাছে কিছুই আশা করা উচিত নয় বলে তিনি মনে করেন৷ পাশাপাশি তিনি জানান, এটা আমি শুরু করেছি৷ অন্যান্য আধিকারিকরা যারা মনে করছেন রাজ্য সরকার তাদের দিয়ে অন্যায় কাজ করাচ্ছে তাঁরাও বেরিয়ে এসে প্রতিবাদ করুন। মেডেল ফেরত দিন। আত্মসমানে আঘাত লাগলে চাকরি ছেড়ে দিন। প্রতিবাদ অবশ্যই করতে হবে। এই অন্যায় চুপ করে সহ্য করা যায় না।
কে এই ভারতী ঘোষ? নোটিবন্দির পর পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার থেকে তাঁকে ব্যারাকপুরে বদলি করায় ২০১৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর চাকরিতে ইস্তফা দেন ভারতী৷ এরপর থেকেই তিনি ও তাঁর দেহরক্ষী গা ঢাকা দেন৷ একাধিকবার তাঁর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে নগদ দু’কোটি টাকা উদ্ধার হয়৷ এছাড়াও একাধিক তথ্যপ্রমাণ উদ্ধার করে সিআইডি৷
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুডবুকে থাকা ভারতী ঘোষের উত্থান শুরু কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে৷ তার আগে বাম জমানায় তিনি ছিলেন সিআইডির সন্ত্রাসদমন শাখার অফিসার৷ পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক পালাবদলের পর ভারতীকে ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার অতিরিক্ত সুপার (সদর) পদে নিয়ে আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ ২০১২ সালের এপ্রিলে ঝাড়গ্রামের এসপি হন তিনি৷ ২০১৩-র অগস্টে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার এসপি হন ভারতী৷ সেইসঙ্গে ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার ভারপ্রাপ্ত এসপিরও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাঁকে৷ অতীতে অনেক মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছেন ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ৷ মমতা-বন্দনা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে ‘জঙ্গলমহলের মা’ আখ্যাও দেন তিনি৷