তপন মল্লিক চৌধুরী : একথা মানতে হয়, বিজেপিযুব মোর্চার নবান্ন অভিযান বৃহস্পতিবার খুব তাড়াতাড়ি ধুন্ধুমার পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পেরেছিল। কিন্তু সেদিন শহরের ওই অবস্থার মধ্যে একটি ঘটনার কথা বিশেষভাবে উল্লেখের দাবি ররাখে। কারণ সেই ঘটনার জের প্রায় সবার মধ্যেই কমবেশি প্রতিক্রিয়া তৈরি করে ছিল।সেই ঘটনাটি আর কিছুই নয়, মিছিলে বলবিন্দর সিং নামে এক বিজেপি কর্মীর থেকে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার। তবে মিছিলের মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্র রাখা যদি শুধুমাত্র উদ্বেগের ঘটনায় সীমাবদ্ধ থাকত তাহলে আর সেটা নিয়ে কথা বলার কোনও মানেই ছিল না। কিন্তু তাতে লেগে গেল জাতি বৈষম্যের রং।
ওই বিজেপি কর্মী শিখ হওয়ায় তাঁকে নিয়ে শুরু হয়েছিল নানা চাপানউতোর। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ, গ্রেপ্তারের সময় ধস্তাধস্তিতে শিখ ব্যক্তির পাগড়ি টেনে খুলে দেওয়া হয়েছে, এমন অভিযোগ উঠেছে। ফলে ওই ঘটানা ঘিরে চারপাশে নানাধরনের মত পালটা মত চালাচালি শুরু হয়ে যায়। যার সবটাই খুবই আপত্তিজনক। ঘটনার গতিবেগ এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যাতে প্রতিবাদ জানিয়ে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হন ক্রিকেটার হরভজন সিং। ক্ষুব্ধ হন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিংও।এরপরও বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ তা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে বসেন।
লাগাতার এধরনের বিভ্রান্তিমূলক আলোচনা যখন চলতেই থাকে তখন টুইট করে জবাব দেয় রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তর। অভিযোগওঠে; একটি সাধারণ ঘটনাকে সাম্প্রদায়িকতার রং দিয়ে একটা রাজনৈতিক দল রাজ্যের শান্তি বিঘ্নিত করার চেষ্টা করছে।শুধু এক থাবললেই সমস্যাটা মিটে যাচ্ছে না। আসলে গেরুয়া শিবিরের কর্মী-সমর্থকরা নবান্ন অভিযান কর্মসূচিতে নামলেন, দিনভর তাণ্ডব বা আন্দোলন চালালেন, কিন্তু তারপরেও তাঁরা নবান্নে পৌঁছতে পারলেন না। হাওড়া ময়দানের মিছিল আটকে এক ব্যক্তিকে ধাওয়াকরল পুলিশ। তার কাছ থেকে পুলিশকর্মীরা আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের পর আকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ।ওই ব্যক্তির নাম বলবিন্দর সিং। রাজ্য বিজেপির দাবি, ওই আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স আছে। হাওড়া সিটি পুলিশের দাবি, ওই আগ্নেয়াস্ত্রটির লাইসেন্স দিয়েছিল জম্মু-কাশ্মীরের রাজৌরির জেলাশাসক। আগ্নেয়াস্ত্রটি ওই জেলার বাইরে নিয়ে যাওয়ার নিষিদ্ধ৷ তারমানে বলবিন্দর বেআইনিভাবে আগ্নেয়াস্ত্রটি বাংলায় নিয়ে এসেছিলেন। অন্ততপুলিশের দাবি সেটাই। কিন্তু তা নিয়ে উত্তেজনা বাড়তেই থাকে।
মানা যায় যে ধুন্দুমার কাণ্ড বিজেপি যুব মোর্চা সৃষ্টি করেছিল তাতে উত্তেজনার পারদ চড়ে গিয়েছিল। কিন্তু ফের তা নিয়ে শনিবার বর্ধমানে বিজেপি রাজ্য সভাপতি মন্তব্য করে বসলেন, ‘একজন শিখবলে পাগড়ি খুলে দিয়েছে। যারা বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত তাদের লাথি খেয়ে শান্তিমিছিল করে। আমরা আইন মানি বলেই এসব হচ্ছে। এসব অগণতান্ত্রিক এবং তোষণের রাজনীতি’।এ কথার মানে কি দাঁড়াল। তিনি যে ভাষা ব্যবহার করলেন, তাতে তো এবার তো তিনি স্পষ্টভাবেই সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করলেন। মিছিলে এভাবে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আসা যায় কিনা সে প্রশ্ন তো বিজেপি নেতা একবারও করলেন না।
তবে পালটা টুইট করেছে স্বরাষ্ট্র দপ্তর।এ রাজ্যে শিখ ভাইবোনেরা যে শান্তিতেই বসবাস করেন। সেদিন বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র-সহ এক শিখের গ্রেপ্তারির ঘটনাকে যে অন্যভাবে দেখা হচ্ছে তার উল্লেখ করে এও লেখা হয় যে, একটি রাজনৈতিক দল সংকীর্ণতাবশত রাজ্যের শান্তি বিঘ্নিত করার চেষ্টা করছে।
এদিকে, বলবিন্দরের সঙ্গে পুলিশের এই আচরণের প্রতিবাদে রাজ্যপালের দ্বারস্থ হয় শিখ গুরুদ্বার ম্যানেজমেন্ট কমিটি। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন রাজ্যপাল ধনকড়।তারপর টুইট করে তিনিও তীব্র প্রতিবাদ জানান। কিন্তু টুইটারে তিনি যা লেখেন তা রাজ্যের শান্তি শৃঙ্খলার উপযোগী নয় একেবারেই।বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ যেমন বলেছেন, ‘গোলটুপি হলে এ ঘটনা হতো না’। রাজ্যপালের টুইটের ভাষাও তেমন ভয়ঙ্কর।সাধারণ ঘটনাকে সাম্প্রদায়িকতার রং দিয়ে একটি রাজনৈতিক দল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে রাজ্যের শান্তি বিঘ্নিত করার চেষ্টা করবে আর রজ্যপাল তাতে মদত দেবেন; এটা বিপজ্জনক।
বলবিন্দরের পাগড়ি খুলে যাওয়াযর সময় গোটা শহর বিজেপি যুব মোর্চার নেতা-কর্মো-সমর্থকেরা প্রবলউত্তেজনায় ফুটছেন। চারপাশের মিছিল আর প্রতিবাদের মধ্যে গোটা বিষয়টিকেসম্পূর্ণ অন্যদিকেঘুরিয়ে দেওয়া সম্পূর্ণত উদ্দেশ্য প্রণোদিত। শিখ সম্প্রদায়ের মানুষ বলেই হেনস্থা করা হয়েছে, মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ হলে এরকম হত না বলে একাধিক বিজেপি নেতার ওই সময়কার মন্তব্য আগুনে ঘি ঢালার মতো।সাম্প্রদায়িক রং দিয়ে অশান্তি বাঁধানোর চেষ্টা।