নিজস্ব প্রতিনিধি: গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকেই ভাটপাড়া, জগদ্দল-সহ বিস্তীর্ণ অঞ্চল বার বার খবরের শিরোনামে এসেছে। কখনও তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির বিরোধ, কখনও আবার দুষ্কৃতীদের এলাকা দখলের লড়াই, ব্যাপক হিংসা ছড়িয়েছে সেখানে। হিংসা থামাতে হিমশিম খেয়েছে পুলিশ। কিন্তু স্থানীয় মানুষের অভিজ্ঞতা বলছে মাঝে মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও সারা বছর তাঁদের আতঙ্কে থাকতে হয়। যা নতুন করে দেখা গেল কালীপুজোর সময়। উৎসবের মরশুমেও উত্তপ্ত হয়ে উঠল উত্তর ২৪ পরগনার জগদ্দল।
দীপাবলির আলোর উৎসবের মধ্যেই দুষ্কৃতীদের গুলিতে গুরুতর জখম হলেন যুব তৃণমূল নেতা রাজ পাণ্ডে। দুষ্কৃতীরা মোটরবাইকে করে কালীপুজোর মণ্ডপের সামনে এসে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। তৃণমূল নেতার হাতে গুলি লেগেছে। ঘটনার পরই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। বর্তমানে তিনি বিপন্মুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার রাতে। তবে সোমবার বিকেল পর্যন্ত দুষ্কৃতীদের পুলিশ ধরতে পারেনি। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, গুলিবিদ্ধ যুব তৃণমূল নেতা রাজ পাণ্ডে ভাটপাড়া পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের তিনসুতিয়া লাইন এলাকার বাসিন্দা। রবিবার রাতে ওই এলাকার একটি কালীপুজোর মণ্ডপে তিনি বসেছিলেন। আরও কয়েকজন ছিলেন সেখানে। হঠাৎই তিনটি মোটরবাইকে ছয় দুষ্কৃতী এসে রাজকে লক্ষ্য করে গুলি চালাতে শুরু করে। একটি গুলি রাজের হাতে লাগে। তখন রাজের সঙ্গীরা সেখানে এসে দুষ্কৃতীদের তাড়া করে। তখন দুষ্কৃতীরা আরও ছয় রাউন্ড গুলি চালিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। সেই মণ্ডপে উপস্থিত থাকা লোকজন দ্রুততার সঙ্গে রাজকে ভাটপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। এরপর কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয়। বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন তিনি।
স্বাভাবিকভাবেই উৎসবের সময় এই দুষ্কৃতী হামলার ঘটনায় এলাকা জুড়ে তীব্র আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। কারা যুব তৃণমূল নেতার উপরে এভাবে হামলা চালাল তা বোঝা যাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর মনোজ পান্ডে বলেন, “বহুদিন ধরেই ওখানে কালীপুজো হয়। রাত একটা নাগাদ কালী মূর্তি আনা হয়েছিল। তখন তিনটি ছেলে বাইকে করে এসে রাজকে ওর নাম জিজ্ঞাসা করে মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে দেয়। বন্দুক সরাতে গিয়ে রাজের হাতে গুলি লাগে। পুজোমণ্ডপের সামনে এসে দুষ্কৃতীরা গুলি চালিয়েছে। সাংঘাতিক ব্যাপার। এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। প্রশাসনকে এ ব্যাপারে কঠোর হতে হবে। দুষ্কৃতীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে।”
এর আগেও একাধিকবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভাটপাড়া। বেশ কিছু রাজনৈতিক হিংসার ঘটনাও ঘটেছে সেখানে। কিছুদিন আগেই ভাটপাড়ার সাত নম্বর ওয়ার্ডে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছিল। তবে রবিবার রাতে যেখানে গুলি চলেছে জগদ্দল থানা সেখান থেকে বেশি দূরে নয়। তাই থানার অদূরে এই দুষ্কৃতী হামলার ঘটনা ঘটায় চিন্তিত এলাকাবাসী। আর রবিবার রাতের পর মঙ্গলবার সকালেই বোমা ফেটে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। এদিন সকালে ভাটপাড়ার ২৮ নম্বর রেলগেটের কাছে ঘটনাটি ঘটে। পুলিশের অনুমান সমাজবিরোধীরা বোমাটি সেখানে ফেলে রেখে গিয়েছিল। আর সেই বোমা প্রাণ কেড়ে নিল এক কিশোরের। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ কিছু একটা হলেই সামনে চলে আসে রাজনৈতিক তরজা। শুরু হয়ে যায় চাপানউতোর। তাই এই পরিস্থিতি থেকে দ্রুত মুক্তি পেতে চাইছেন সাধারণ মানুষ। ইতিমধ্যেই ঘটনাগুলি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। তবে এলাকার মানুষের দাবি পুলিশের সক্রিয়তা আরও বহু গুণে বাড়াতে হবে। একমাত্র তাতেই পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে তাঁদের বিশ্বাস।