করোনা ও সাম্প্রদায়িকতা, দু’টি ভাইরাসের সঙ্গে একত্রে লড়ছে ভারত!

করোনা ও সাম্প্রদায়িকতা, দু’টি ভাইরাসের সঙ্গে একত্রে লড়ছে ভারত!

0f45110a9229fece4323ec215e2acfdd

নয়াদিল্লি: করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করছে দেশ। কিন্তু, আমাদের সবার অজান্তেই সাম্প্রদায়িকতার ভাইরাস আবার মাথাচড়া দিয়ে উঠেছে। হা, এই ভাইরাসকে নিশ্চিহ্ন করার শক্তি ভারতীয় গণতন্ত্রের গণতন্ত্রের রয়েছে। সেই কারণেই তা পৃথিবীর সর্ববৃহৎ এবং সর্বোত্তম গণতন্ত্র। কিন্তু, দেশ যখন করোনা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, ঠিক সেই সময় পিছনের দরজা দিয়ে অতর্কিত আক্রমণ করেছে সাম্প্রদায়িক ভাইরাস। যার মূল Modas Operandi হল যে কোন একটি কারণে হিন্দুর বিরুদ্ধে মুসলমান বা মুসলমানের বিরুদ্ধে হিন্দুকে লড়িয়ে দেওয়া। এই ভাইরাস দেশের আত্মায় প্রবেশ করে 'ভারতীয়তা'য় হামলা চালায়।

ভারতীয় গণতন্ত্রের Immunity Power হল Community Power। “নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান, বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান।” – অতুলপ্রসাদ সেনের সেই মর্মস্পর্শী লাইন, যা বারবার আমাদের চেতনা ফিরিয়েছে। বলা ভাল, এই ভারতীয়তাই আমাদের Immunity Power। যা, মহামারীর এই চরম দূর্দিনের আমাদের সজীব রাখবে।

দিল্লিতে তবলিগি জামাতরা একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে চরম দায়িত্ব জ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছিল। সেই সময় দেশে সবে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু হয়েছে। আড়মোড়া ভেঙে অধিকাংশ ভারতবাসী সামাজিক দুরত্ব বা 'Social Distsncing' কী তা বুঝতে শুরু করেছে। সে সময়, এই ধরণের ঘটনা অনভিপ্রেত। আয়োজকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থারও বিরোধিতা করেনি দেশের অধিক অংশ।
কিন্তু, ঘটনা সেখানেই থেমে থাকেনি। এই একটি ঘটনাকে হাতিয়ার করে দেশে আবার প্রবেশ করল সাম্প্রদায়িক ভাইরাস। বলা বাহুল্য, আজকাল ভারতে এই ভাইরাস সারা বছরই অল্প বিস্তর যাতায়ত করে থাকে। করোনার আবহে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক প্রচার জোরদার হয়ে ওঠে। কারণটা স্বাভাবিক। কিছু মানুষ, সারা বছর ধরেই এই ধরণের সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন। 'তবলিগি জামাত' ইস্যু তাদের নতুন সুযোগ দিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া, facebook, What's App-এ বিদ্বেষ বার্তায় ভরে যাচ্ছে – ভারতে করোনার জন্য দায়ী মুসলমানরা! এই বিষাক্ত প্রচারে অংশ নিয়েছেন সমাজের কিছু পরিচিত ব্যক্তিও। সারা পৃথিবীতে,  বিতর্ক তুঙ্গে, চিনের গবেষণাগারে নাকি তৈরি হয়েছে করোনা ভাইরাস (Covid 19)। সে বিতর্ক সরিয়ে রেখে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, 'দ্বেষপ্রেমী' ভারতীয়রা দেশেই সম্প্রদায়িক ভাইরাস তৈরি করেছেন।

চিকিৎসকরা বলেছেন, হাঁচি, কাশি, থুতু বা droplet-এর মাধ্যমে করোনা সংক্রমণ এক মানুষ থেকে অন্য মানুষে ছড়িয়ে পড়ে। জানলে অবাক হবেন সাম্প্রদায়িক ভাইরাসের বৃদ্ধিও একইরকম। এক্ষেত্রে হাঁচি, কাশি, থুতু, কফ, droplet নয়, বরং –  সোশ্যাল মিডিয়া, ফেসবুক, What's App বিশ্ববিদ্যালয় সেই ভূমিকা নিয়ে থাকে।

মহারাষ্ট্রের পালঘরে দুই সাধুকে পিটিয়ে হত্যা করেছে উন্মত্ত জনতা। কারণ স্থানীয় গ্রামবাসীর মনে হয়েছিল তাঁরা চুরি করতে এসেছিল। সম্পূর্ন ভুল বোঝাবুঝি থেকে এই নৃশংস ঘটনাটি ঘটে যায়। অভিযুক্তরা, যারা গ্রেফতার হয়েছেন, তারা মধ্যে কেউ মুসলমান নন। ভুক্তভোগীরাও মুসলমান নন। কিন্তু, এই ঘটনা নিয়ে উগ্র সাম্প্রদায়িক প্রচার শুরু হয়েছে। সমাজের কিছু দায়িত্বশীল মুখ (এবং খবরের চ্যানেল) সরাসরি এই ঘটনার জন্য মুসলমানদের দায়ী করেছে!

আজ, ভারত দুটি ভাইরাসের সঙ্গে একত্রে লড়াই করছে – করোনা এবং নতুন করে গজিয়ে ওঠা সাম্প্রদায়িকতা। তবে, হ্যাঁ, ভারতীয় গণতন্ত্রে Immunity Power রয়েছে। কারণ, ভারতে Community is Immunity ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *