তৃণমূল কংগ্রেসের ভিতরে একইসঙ্গে দুটি দল! যার পরিনাম কোন্দল

তৃণমূল কংগ্রেসের ভিতরে একইসঙ্গে দুটি দল! যার পরিনাম কোন্দল

তপন মল্লিক চৌধুরী : জলপাইগুড়ি জেলার রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতে, এমনিতেই জলপাইগুড়ি তৃণমূলের অবস্থা ভাল নয়। উনিশের ভোটে তাদের পায়ের তলার মাটি অনেকটাই সরে যায়। তার উপর গত কয়েক মাস ধরে দলে শুরু হয়েছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। যা দলের ভিতর থেকে নেমে এসেছে প্রকাশ্যে। একেবারে খোলা রাস্তায়। জলপাইগুড়ি জেলার তৃণমূল জেলা সভাপতি ও প্রাক্তন সভাপতির লড়াই এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে জেলায় তৃণমূলের মধ্যেই দুটি দল সমান্তরাল ভাবে চলছে।

আসন্ন ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের আগে জেলায় জেলায় একতার বার্তা দিয়েছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তাঁর সেই আবেদন শিকেয় তুলে সমানে চলছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। কিছুদিন আগে জলপাইগুড়ি জেলায় নতুন জেলা ও ব্লক কমিটি ঘোষণা হয়। জলপাইগুড়ি শহরে দলের জেলা কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে নতুন কমিটি ঘোষণা করেন অরূপ বিশ্বাস, মলয় ঘটক ও গৌতম দেব। এর পরই তৃণমূল কার্যালয়ে শুরু হয় তুমুল বিক্ষোভ।

তৃণমূল নেতৃত্ব ময়নাগুড়ি ব্লকের সভাপতি হিসাবে মনোজ রায়ের নাম ঘোষণা করায় ক্ষেপে ওঠেন বিরোধী গোষ্ঠীর লোকেরা। তাঁরা দলের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান বিক্ষোভে বসেন। তৃণমূলের নতুন ব্লক কমিটি অভিযোগ, টাকার বিনিময়ে কেনাবেচা চলছে দলীয় পদের। ২ মন্ত্রী মলয় ঘটক ও অরূপ বিশ্বাসকে আটকে বিক্ষোভ দেখায় দলেরই কর্মীরা।

জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূলের কোন্দল এখানেই থেমে নেই। বিদ্রোহী নেতা পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান মোহন বসুর বিরুদ্ধেও এবার ঘূঁটি সাজানো শুরু হয়ে গিয়েছে। তৃণমূল জেলা সভাপতির সঙ্গে যুব সভাপতিও তাঁর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমুলে এখন দুই প্রতিপক্ষ হলেন জেলা সভাপতি বনাম প্রাক্তন পুর চেয়ারম্যান।

আসলে করোনা লকডাউন পরিস্থিতিতে জলপাইগুড়ি তৃণমূলের যে সংকট তা পুরসভার মেয়াদ শেষে প্রশাসক পদে বসানো নিয়ে। সেই পদ না পেয়ে জলপাইগুড়ি পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান মোহন বসু ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন জেলা তৃণমূলের সভাপতি কিষাণকুমার কল্যাণীর বিরুদ্ধে। তিনি জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, ওই সভাপতিকে না সরালে তিনি সমান্তরাল দল চালাবেন।

অন্যদিকে তাঁর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ ওঠে যুব তৃণমূলের পক্ষ থেকে, তিনি বিজেপিকে সুবিধা করে দিয়েছেন। বেআইনিভাবে তাঁদের অফিস গড়ার অনুমতি দিয়েছেন। যদিও মোহন বসু জানান, আইন মেনেই তিনি কাজ করেছেন। কোনও বেআইনি করেননি। স্পষ্টতই জলপাইগুড়ি জেলায় তৃণমূল দু-ভাগ হয়ে পড়েছে। একদিকে বিধায়ক, বিদায়ী চেয়ারম্যান, অন্যদিকে জেলা সভাপতি-যুব সভাপতিরা।

একাধিক তৃণমূল নেতা-নেত্রীর হস্তক্ষেপেও জেলা তৃণমূলের এই কোন্দল মেটেনি। দুই নেতাই তাঁদের তাঁদের জায়গায় অনড় রয়েছেন। ফলে ২০২১ নির্বাচনের আগে বেশ চাপেই রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলে নেতৃত্বেরও অভাব রয়েছে, তাতে সংকট বাড়ছে। একই দলের মধ্যে সমান্তরালভাবে দল চালাচ্ছেন জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূলের সভাপতি কিষাণকুমার কল্যাণীর এবং জলপাইগুড়ি পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান মোহন বসু।

প্রশ্ন উঠেছে জেলা সভাপতির সঙ্গে যদি এভাবেই বিরোধের মাত্রা বাড়তে থাকে, তৃণমূলের পক্ষে আসন্ন ২০২১-এর নির্বাচনে জলপাইগুড়ি জেলায় ভাল ফল করা কঠিন হয়ে যাবে। দলের অন্দরেই বিভাজন রেখা স্পষ্ট, একই দলের মধ্যে চলছে দুটি দল। এই পরিস্থিতিতে এই জেলায় তৃণমূল নানা রকম সমস্যায় পড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা।

প্রথমত,  তৃণমূলের এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে বিরোধীরা বাজিমাত করার চেষ্টা করবে। আবার এমনও হতে পারে তৃণমূলের এই গোষ্ঠী কোন্দলকে কাজে লাগিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস ভাঙিয়ে বিজেপি বা বিরোধী দল শক্তি বাড়াবে। যে শক্তির জোগানদার তৃণমূল দল নিজেই।  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × 1 =