ত্রিপুরা তাঁর ঘরের মতো, বলছেন মমতা! গোয়াতেও একই কথা বলতে শোনা গিয়েছিল!

আগরতলা: ২০১১ সাল। ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে বাংলায় ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। ক্ষমতায় আসার কিছুদিন পর থেকেই প্রায় প্রতি সপ্তাহে নিয়ম করে তৃণমূলের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক তথা দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড মুকুল রায় হাত ধরে বাম-কংগ্রেসের নেতাকর্মী বা বিধায়ক দল ছেড়ে শাসক দলে নাম লেখাতেন। প্রত্যেকের মুখে একটা কথাই শোনা যেত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য জুড়ে যে উন্নয়ন শুরু করেছেন তার শরিক হওয়ার জন্যই তাঁরা নাকি তৃণমূলে যোগদান করছেন। বছরের পর বছর এই ধারা চলছে বাংলায়। হালে কিছুদিন তা বন্ধ থাকলেও ফের সেই ধারা আবার শুরু হয়েছে৷ এই ধারায় সর্বশেষ সংযোজন আলিপুরদুয়ারের বিজেপি বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলালের ঘাসফুলে যোগ৷ মজার কথা হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের পড়শি রাজ্য ত্রিপুরাতেও তৃণমূলের হাত ধরেই দলবদলের ধারা শুরু হয়।
একটা সময় সুদীপ রায় বর্মন-সহ কংগ্রেসের একাধিক বিধায়ক দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করেন মুকুল রায়ের উপস্থিতিতে। পরে আবার তাঁরা চলে যান বিজেপিতে। দলত্যাগী বিধায়ক বা নেতাদের নিয়ে বিজেপি ভোটে নেমে গত বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসে। এরপরে আবার বিজেপিও ভেঙেছে। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ত্রিপুরায় প্রচার শুরু করেছেন। আর ত্রিপুরায় প্রচারে নেমেই মমতাকে বলতে শোনা গিয়েছে তিনি ত্রিপুরাই লোক।
মজার কথা হচ্ছে কার্যত প্রায় একই কথা মমতাকে বলতে সময় গিয়েছিল বাংলার শেষ বিধানসভার নির্বাচনী প্রচারে৷ এরপর গোয়া বিধানসভার প্রচারে গিয়েও কার্যত প্রায় একই কথা বলতে শোনা গিয়েছিল তৃণমূল সুপ্রিমোকে৷ কিন্তু সেখান থেকে পুরো খালি হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। এখন তিনি ত্রিপুরাকে নিজের ঘরের সঙ্গে তুলনা করছেন। অথচ ত্রিপুরা বিধানসভার অর্ধেক আসনেও প্রার্থী দিতে পারেনি তৃণমূল। তাই ত্রিপুরা নিয়ে মমতা যে দাবি করছেন তা নিয়ে বাম-কংগ্রেস থেকে শুরু করে বিজেপির তরফেও তোলা হয়েছে একাধিক প্রশ্ন৷
ত্রিপুরা নির্বাচনে মূলত বিজেপি বনাম বাম-কংগ্রেস জোটের লড়াই হতে চলেছে। অন্তত ভোটের উত্তাপ সেই কথাই বলছে৷ লড়াইয়ে আছে ত্রিপরামোথাও৷ সেখানে অন্য কোনও শক্তি দাঁত ফোটাতে পারবে না বলেই রাজনৈতিক মহল মনে করে। এতে বিজেপির লড়াইটা কঠিন হয়ে গিয়েছে। কারণ একের বিরুদ্ধে এক লড়াই হলে ভোট ভাগ হয় না। সেক্ষেত্রে শাসক বিরোধী ভোটের প্রায় পুরোটাই যে বাম-কংগ্রেসের দিকে চলে যাবে সেটা স্পষ্ট। তবে তৃণমূলের দাবি পশ্চিমবঙ্গে যে সমস্ত সামাজিক প্রকল্প তারা চালু করেছে সেগুলি প্রচারে তুলে ধরে তার ফসল ভোটবাক্সে তুলবে তারা। তাই দেখা যাচ্ছে ত্রিপুরা নির্বাচনে বাংলার বিভিন্ন প্রকল্পের কথা বারবার তুলে ধরছেন মমতা।
কিন্তু তাতে কি আদৌও লাভ হবে? ইভিএমে ম্যাজিক আদৌও দেখাতে পারবে তৃণমূল? ত্রিপুরা বিধানসভার অর্ধেক আসনেও তো প্রার্থী দিতেই পারেনি তৃণমূল! তাহলে সরকার গঠন হবে কীভাবে? যদি সত্যিই তৃণমূল বড় ফ্যাক্টর হতো ত্রিপুরায়, তাহলে কোন সব আসনে প্রার্থী দিতে পারল না তৃণমূল? কেনই বা বিরোধী জোটে অংশ নিল না তৃণমূল? ভোটের বাজারে ত্রিপুরার রাজনীতির মদয়ানে উঠছে নানান প্রশ্ন৷ সব মিলিয়ে ত্রিপুরা নির্বাচনে সর্বভারতীয় তৃণমূলের ভাল ফল করার দাবি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। বাকিটা জবাব দেবে ত্রিপুরার ইভিএম৷