নিজস্ব প্রতিনিধি: ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে ধরাশায়ী হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। অবস্থা এতটাই খারাপ হয়েছে যে এক শতাংশ ভোটও পায়নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। ত্রিপুরায় নোটা যেখানে পেয়েছে ১.৩৬ শতাংশ, সেখানে তৃণমূল পেয়েছে মাত্র ০.৯ শতাংশ ভোট। একের গণ্ডিও পেরোতে পারেনি তারা। সেখানে মেঘালয়ে পাঁচটি আসনে জিতে মোটের উপর মুখরক্ষা করেছে তৃণমূল। কি কারণে দুটি রাজ্যে পৃথক ফল হয়েছে জোড়াফুল শিবিরের? সত্যিই কি মেঘালয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্যারিশমা কাজ করেছে? নাকি এর পিছনে রয়েছে অন্য কোনও ফ্যাক্টর? যথারীতি বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চর্চা।
মূলত মেঘালয়ে তৃণমূলের সাফল্য এসেছে মুকুল সাংমার ক্যারিশমার উপর ভর করেই। একটা সময়ে তিনি মেঘালয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন। তখন তিনি কংগ্রেসে ছিলেন। কিন্তু মেঘালয় কংগ্রেস রাজনীতিতে বরাবরই তিনি ভিনসেন্ট পালা জর্জের বিরোধী বলেই পরিচিত। তাই একটা সময় হাইকমান্ড ভিনসেন্টকে মেঘালয় কংগ্রেসের সভাপতি করার পরই বেঁকে বসেন মুকুল সাংমা। দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে শুরু করেন। ঠিক তখনই মুকুলকে নিজেদের শিবিরে টেনে নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মেঘালয় বিধানসভা নির্বাচনের প্রচার তথা সাংগঠনিক পুরো দায়িত্ব তাঁর উপরেই তুলে দেন তিনি। অভিজ্ঞ মুকুল বুঝে যান শুধুমাত্র গারো পাহাড় সংলগ্ন সীমান্তবর্তী অঞ্চলে তৃণমূলের ভাল ফল করার সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বহু মানুষের বসবাস রয়েছে। তাই সেখানেই বেশি মনোনিবেশ করেন তিনি। সেই কারণেই মেঘালয়ে পাঁচটি আসনে জিততে পেরেছে তৃণমূল। যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত ক্যারিশমা এর কারণ হতো, তাহলে তার ছাপ পড়ত ত্রিপুরাতেও। কিন্তু বাস্তবে মমতা-অভিষেক ফ্যাক্টর কাজ করেনি মেঘালয়ে, এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
একই ভাবে মমতা-অভিষেকের প্রচার সুপার ফ্লপ করেছে গোয়ায়। মানুষ তৃণমূলকে সত্যিই বিশ্বাস করলে গোয়াতে একটি হলেও আসল পেত তারা। কিন্তু সেটা হয়নি। একই ভাবে ত্রিপুরা প্রত্যাখ্যান করেছে তৃণমূলকে। রাজনীতির কারবারিদের একাংশ মনে করছেন তৃণমূল একমাত্র সেই রাজ্যগুলিতেই সামান্য হলেও সাফল্য পেতে পারে যেখানে সুযোগ্য নেতা রয়েছেন। মূলত রাজ্যে রাজ্যে সংগঠন বাড়ানোর লক্ষ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন নেতা-নেত্রীদেরই টার্গেট করেছে। যেখানে কংগ্রেসের প্রাক্তন নেতা-নেত্রীদের বলার মতো সংগঠন বা জনপ্রিয়তা রয়েছে, সেখানেই একমাত্র তৃণমূলের সামান্য হলেও সম্ভাবনা রয়েছে। ঠিক সেই জায়গা থেকেই মেঘালয়ে পাঁচটি আসনে জিততে পেরেছে তৃণমূল, এমনটাই মত বিশেষজ্ঞ মহলের। তাই এটা স্পষ্ট মেঘালয়ে তৃণমূলের খাতা খোলার পেছনে মমতা-অভিষেকের চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে মুকুল সাংমার। যদিও তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের দাবি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তার কারণেই মেঘালয়ে খাতা খুলতে পেরেছে জোড়াফুল শিবির। তবে এই দাবির কতটা সত্যতা রয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।