কোচবিহার: তৃণমূল-বিজেপির সংর্ঘষে রণক্ষেত্র কোচবিহারের দিনহাটা৷ ভোট শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বুথ থেকে ভোটারদের মেরে তাড়ানোর অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে৷ পাল্টা হমলা বিজেপির৷ তৃণমূল-বিজেপির সংঘর্ষে জখম উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন৷ বৃহস্পতিবার সকাল ন’টা ১৫ নাগাদ সংঘর্ষের খবর পাওয়া গিয়েছে দিনহাটার রসমণ্ডা স্কুলে৷ এদিনের এই ঘটনায় এলাকায় চাপা উত্তেজনা তৈরি হয়েছে৷
অভিযোগ, এদিন বুথ দখল করতে এসে ভোটদের মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়৷ এলাকায় তৃণমূলী তাণ্ডব দেখে পাল্টা হামলা চালায় বিজেপি৷ বাঁশ, লাঠি হাতে একে অপরের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালায়৷ সংঘর্ষে এক বিজেপি কর্মীর মাথা ফাটে বলে খবর৷ এলাকায় অশান্তির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় নিরাপত্তা বাহিনী৷ কিন্তু, নির্বাচন কমিশনের তরফে এত তৎপরতা থাকা সত্ত্বেও কেন এই সংঘর্ষ? প্রশ্ন তুলছেন বাসিন্দারা৷
অন্যদিকে, ভোট শুরু হওয়ার আগেই উত্তাল হয়ে ওঠে কোচবিহার৷ মাথাভাঙা ও দিনহাটায় পৃথক দুটি ঘটনায় থমথমে গোটা এলাকা৷ মাথাভাঙায় তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধানকে মেরে হাসপাতালে পাঠানোর অভিযোগ বিজেপির বিরুদ্ধে৷ নাটাবাড়ি এলাকায় বুথ জ্যামের চেষ্টা তৃণমূলের৷ বিজেপি এজেন্টকে মেরে তারিয়ে দেওয়ার অভিযোগ৷
জানা গিয়েছে, ভোট শুরুর আগে বুধবার গভীর রাতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে মাথাভাঙা এলাকায়৷ অভিযোগ, বিজেপি কর্মীরা স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানের উপর আক্রমণ চালায়৷ রাস্তায় ফেলে মারা হয় তাঁকে৷ করা হয় বোমাবাজি৷ পঞ্চায়েত প্রধানকে মারধরের পর চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা৷ পরে স্থানীয়রা পঞ্চায়েত প্রধানকে উদ্ধার করে জেলা হাসপাতালে ভর্তি করান৷ এদিন রাতের এই ঘটনায় পঞ্চায়েত প্রধান সহ- আরও তিন তৃণমূল কর্মী জখম হয়েছেন বলে খবর৷
অন্যদিকে, ভোট শুরু হতেই আশান্তি ছড়িয়েছে দিনহাটায়৷ নাটাবাড়ি এলাকায় বুথ জ্যামের চেষ্টা তৃণমূলের৷ বিজেপি এজেন্টকে মেরে তারিয়ে দেওয়ার অভিযোগ৷ নিপাপত্তা বাহিনী থাকা সত্ত্বেও কীভাবে এই ঘটনা ঘটল, তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন৷
প্রথম দফার নির্বাচনে নিরাপত্তার বন্দোবস্ত যা করা হয়েছে, তাতে আশান্তির আশঙ্কা আগেই করে রেখেছিলেন পর্যবেক্ষক মহল৷ প্রথম দফা নির্বাচনে দুটি কেন্দ্রে সব বুথে নেই না আধা সামরিক বাহিনী৷ অধিকাংশ বুথেই রয়েছে ‘মমতা’র পুলিশ৷
জানা গিয়েছে, কোচবিহারের ৮৫৭টি বুথে নেই আধা সামরিক বাহিনী৷ বাহিনী রয়েছে ১১৫৩টি বুথে৷ আলিপুরদুয়ারে ১০২০ বুথে নেই বাহিনী৷ বাহিনী থাকছে ৮১৪টি বুথে। তবে, কেন্দ্রীয় বাহিনী না থাকা বুথে ওয়েবকাস্টিং ব্যবস্থা রয়েছে৷
কমিশন সূত্রে খবর, এবার কোচবিহারে মোট বুথ ২০১০টি৷ আলিপুরদুয়ারে বুথের সংখ্যা ১৮৩৪টি৷ দু’টি কেন্দ্রেই রয়েছে বহু সংখ্যক স্পর্শকাতর বুথ৷ আলিপুরদুয়ারে ১৮৩৪টি বুথের মধ্যে ৫৪৪টি বুথ স্পর্শকাতর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে৷ কোচবিহারে স্পর্শকাতর বুথসংখ্যা ১১৫৩৷ অভিযোগ, যে বুথগুলিকে স্পর্শকাতর হিসেবে দেখানো উচিত ছিল, সেই বুথগুলির অধিকাংশই স্পর্শকাতরের তালিকায় বাইরে রাখা হয়েছে৷ স্থানীয়দের অভিযোগ, আর তাতেই দানা বেধেছে বিতর্ক-অশান্তি৷
কমিশন আগেই জানিয়ে দিয়েছে, কোচবিহারের ৮৫৭টি বুথে এবং আলিপুরদুয়ারের ১০২০ বুথে থাকবে না কেন্দ্রীয় বাহিনী৷ কোচবিহারে মোট ৪৭ কোম্পানি বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে বুথ পাহারায় থাকবে ৪৫ কোম্পানি৷ কোচবিহারের ১টি ভোটকেন্দ্রে ২টি বুথ পর্যন্ত ৪ জন করে আধাসেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ ১টি ভোটকেন্দ্রে ২টির বেশি বুথ থাকলে মোতায়েন থাকবে ৮ জন করে আধাসেনা৷ বাকি ২ কোম্পানির মধ্যে ১ কোম্পানি আধাসেনা কুইক রেসপন্স টিমে কাজ করবে৷ আর ১ কোম্পানি বাহিনী স্ট্রংরুমের নিরাপত্তায় থাকবে৷
আলিপুরদুয়ারে ১৮৩৪টি বুথের মধ্যে ৫৪৪টি বুথ স্পর্শকাতর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে৷ আলিপুরদুয়ারে মোট ২৭ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে মোট ৮১৪টি বুথে৷ ১০২০টি বুথে থাকবে রাজ্য পুলিশ৷ দুই জেলা মিলিয়ে ৫৩৩টি বুথে ওয়েব কাস্টিংয়ের ব্যবস্থা থাকছে বলে জানিয়েছে কমিশন৷ মোবাইল নিয়ে বুথে ঢোকা যাবে না৷ ভোট করাতে গিয়ে কোনও ভোটকর্মীর মৃত্যু হলে নিয়ম অনুসারে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে৷