বঙ্গ বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে শক্তি বাড়াচ্ছে তৃণমূল! ২১’-এ পরিবর্তন না প্রত্যাবর্তন?

বঙ্গ বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে শক্তি বাড়াচ্ছে তৃণমূল! ২১’-এ পরিবর্তন না প্রত্যাবর্তন?

তপন মল্লিক চৌধুরী :  কিছুদিন ধরেই রাজ্য বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দল চূড়ান্ত অবস্থায় পৌঁছেছে। কখনও দিল্লিতে বিজেপির সাংগঠনিক বৈঠকে রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন অর্জুন সিং। তার আগেকেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছেও তিনি মুকুল রায় দিলীপ ঘোষের একাধিপত্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। কিন্তু বিজেপিরাজ্য সভাপতিঅর্জুন সিং-এর অভিযোগের পাল্টা উত্তরে অর্জুন সিং-কে একটু খাটো করেই যে মন্তব্য করেন তাতে রাজ্য বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ্যে এসে পড়ে।

অন্যদিকে বিজেপির অন্দরে দিলীপ বিরোধী বলে পরিচিত এক নেতার কথায়, ‘দিলীপ দার এইসব প্ররোচনামূলক মন্তব্য তৃণমূলের হাত শক্ত করে দিচ্ছে। দিল্লি আমাদের বারবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করার কথা বলছে অথচ আমরা নিজেদের মধ্যে দড়ি টানাটানিতে ব্যস্ত’।

সম্প্রতি বিজেপি থেকে দলে দলে তৃণমূলে যোগদানের পিছনেও কিন্তু একটা বড় কারণ বিজেপি দলের অন্দরের এই গোষ্ঠী কোন্দল। যা শাসক দলের সাংগঠনিক শক্তিকে আরওমজবুত করছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।এর সঙ্গে অবশ্য বিজেপির বেশ কিছু সিদ্ধান্তকে ঘিরে ক্রমশ বাড়ছে জনরোষ। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাজ্য বিজেপির অন্দরে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে গোষ্ঠী কোন্দল। এই দুইয়ের জেরে বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের অবস্থান আরও যে মজবুত হয়েছে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

গত লোকসভা নির্বাচনে ভাল ফল করার পর থেকেই রাজ্যে তৃণমূলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে বিজেপি। লোকসভায় বিজেপি যেভাবে তৃণমূলের ভোটে থাবা বসিয়েছে তার প্রেক্ষিতেই বিধানসভা ভিত্তিক পর্যালোচনা করলে দেখা যাচ্ছে তৃণমূলের সঙ্গে তুল্যমূল্য পাল্লা দিয়েছে গেরুয়া শিবির। বহু বিধানসভা এলাকায় তৃণমূল তাদের ক্ষমতা অনুযায়ী ভোট একেবারেই নিজেদের পক্ষেআনতে পারেনি।সেই ফায়দা পুরোপুরি লুটেছে বিজেপি। কোথাও বাম-কংগ্রেস বিরোধি ভোটকেও নিজেদের দিকে টে নিতে সমর্থ হয়েছেবিজেপি।

তুলনামূলকভাবে তৃণমূলের সবচেয়ে করুণ অবস্থা হয়েছে উত্তরবঙ্গে।ক্ষমতায় এসে যেখানে উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী সেখানে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে শাসক দলের মুখ থুবড়ে পড়টাবিজেপিকে দারুণ উদ্দীপ্ত করে বিজেপিকে। কিন্তু নিজের পায়ে নিজে কুড়ুল মেরে কীভাবে যাত্রা ভঙ্গ করতে হয় তার বোধহয় প্রকৃষ্ট উদাহরণ রাজ্য বিজেপির হালচাল। দলের গোষ্ঠী কোন্দলএমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলি থেকে দলে দলে নেতা কর্মী বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেয়।

শুধু কি তাই, গত কয়েকমাস ধরে বিজেপি তথা কেন্দ্রীয় সরকারের নেওয়া প্রায় সমস্ত সিদ্ধান্তই সাধারণ মানুষকে তাদের প্রতি ক্ষুব্ধ করেছে।শুরু হয় অসমে এনআরসি’র চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর।সেখানে তিন লাখেরও বেশি হিন্দু মানুষের নাম বাদ যায় নাগরিকত্ব তালিকা থেকে। অথচ বিজেপি এতদিন হিন্দু ভোট পাওয়ার জন্য প্রচার করে এসেছে। তাহলে হিন্দুদের নাম বাদ পরে কিভাবে। এর ফল-গত বছরপশ্চিমবাংলায়তিনটি বিধানসভা উপনির্বাচনে বিজেপি মুখ থুবড়ে পড়েছ। তার মধ্যে দুটি বিধানসভায় বিজেপির বিপুল লিড ছিল লোকসভা ভোটে।

নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম ঠেকানো তো দূরের কথা চলে গেছে নাগালের বাইরে। লকডাউনের মধ্যেইকেন্দ্রের বিজেপি সরকার পাস করিয়ে নিল কৃষি বিল। যা নিয়ে গ্রামেগঞ্জে কৃষিনির্ভর মানুষের ক্ষোভ এখন তুঙ্গে। দেশজুড়ে কৃষি বিলের বিরুদ্ধে আন্দোলন অব্যাহত।

এছাড়া পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি এবং সর্বোপরি ব্যাংকের সুদ যেভাবে প্রায় প্রতি মাসে নিয়ম করে কমছে তাতে বিপদে পড়ছেনসাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষ। নানা কারণে বিরক্ত হয়েই গত লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্যের একটা বড় অংশের মানুষ উজাড় করে ভোট দিয়েছিল বিজেপিকে। কিন্তু তারপর থেকেই অবস্থাটা বদলাতে শুরু করে।

দক্ষিণবঙ্গ থেকে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলি কোথাও বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থেমে নেই। চার দশক ধরে বিজেপি করে আসা দলের অন্যতম নেতা তথা প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহা কে কেন্দ্রীয় পদ থেকে সরানোর পর বিজেপির অন্দরেগোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নতুন করে শুরু হয়েছে। এর পাশাপাশি মুকুল রায় ও দিলীপ ঘোষের অনুগামীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সেই প্রথম দিন থেকেই। সামনের বিধানসভা নির্বাচনে এর একটা বড় প্রভাব যে পড়বে তা বুঝতে পারছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।সে কারণেই সম্প্রতি বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বকে দিল্লির কেন্দ্রীয় নেতারা ডেকে পাঠিয়েছেন বিষয়টা নিয়ে বিশদে আলোচনা করার জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *