আজ বিকেল: এশিয়ার বৃহত্তম গ্রাম বাঁকুড়ার পুনিশোল। যেখানে মোট ভোটারের সংখ্যা ২৩ হাজার। বিষ্ণুপুরের পুরসভা এলাকার তৃণমূলী হাওয়াকে মুহূর্তে বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে পুনিশোল। কেননা তৃণমূলের অধীনে থাকা পঞ্চায়েত কোনওরকম উন্নয়নের দার ধারেনি, এমনটাই অভিযোগ স্থানীয়দের। রাস্তাঘাট যেমন ছিল তেমনই রয়ে গিয়েছে। পানীয়জলের সমস্যা নিয়ে পঞ্চায়েত ভোটের আগে নানাবিধ আলোচনা হলেও সমাধানের তেমন কোনও রাস্তা কেউই দেখাতে পারেননি। জলের জন্য সাবমার্সিবল বসানোর কথা হলেও তা প্রয়োজন অনুযায়ী অনকে কম বসানো হয়েছে। যদিও বাসিন্দাদের এই উন্নয়ন না হওয়ার অভিয়োগ মানতে নারাজ পঞ্চায়েত প্রধান রেজাউল মণ্ডল।
এই গ্রামে ১৪জন রাজনৈতিক প্রতিনিধির মধ্যে ১১জনই তৃণমূল, বাকিরা নির্দল। যদিও ভোটটা শেষমেশ তৃণমূলেই গিয়ে পড়ে। মজার বিষয় হল, যতই ২০১১ সাল থেকে উন্নয়নের ফিরিস্তি দিক রেজাউলবাবু, তৃণমূলের অনেক স্থানীয় নেতাই তা মানতে নারাজ। তাঁদের মতে, সাড়ে চারশো নলকূপ বসানোর কথা হলেও তার কোনওরকম বন্দোবস্ত হয়নি। মাত্র একটি হাইস্কুল রয়েছে। মাধ্য়মিক স্কুলও একটি। প্রাইমারি স্কুল গুটি কয়েক। ২৭০০ জন পড়ুয়া। সবমিলিয়ে উন্নয়ন এখানে দূরবিন দিয়ে দেখার জিনিস। সাতটা প্রাইমারি স্কুলে ৭০০ থেকে ৮০০ জন পড়ুয়া রয়েছে। ১৪টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কোথাও উন্নয়নের ছিটেফোটা দেখা যায়নি।
স্থানীয় গৃহবধূরা এই গরমে জল আনতে বাড়ি থেকে অনেক দূরের নলকূপকেই ভরসা করেন। সন্তানসম্ভবা মহিলা থেকে শুরু করে বৃদ্ধা প্রায় সকলের ভরসা রাস্তার পাশের সবেধন নীলমণি নলকূপটি। এদিকে গরম বাড়তেই জলের স্তর নামতে শুরু করেছে, তাই দিনের অর্ধেক সময় তাতে জলও তাকে না। যেকোনওমুহূর্তে নলকূপ খারাপ হলে পানীয়জলের অভাবে মরতে পর্যন্ত হতে পারে। ২০১১ থেকেই রাস্তাঘাটের তেমন কোনও উন্নতি হয়নি। বর্ষা এলেই জলকাদায় এমন দশা হয় যে ধানের খেতের সঙ্গে পায়েচলা পথের আর পার্থক্য বোঝা যায় না। যদিও রেজাউলবাবুর দাবি, উন্নয়ন পুনিশোলে কম হয়নি। ২৭ কিলোমিটার রাস্তা ঢালাই করে দেওয়া হয়েছে। এটাতো আদপে গ্রাম যদিও বাসিন্দারা পুরসভার দাবি জানাচ্ছে। এমন দাবি তো মেনে নেওয়া যা না। নলকূপও বসেছে অনেক জায়গায়, কিন্তু একেবারে উন্নয়ন চোখে না দেখা গ্রামে সার্বিক উন্নয়ন এত অল্পদিনে সম্ভব নয়, লোকে যাই বলুক না কেন।
এদিকে ১২-মে ষষ্ঠদফার ভোট হতে চলেছে বাঁকুড়াতেই। বিষ্ণুপুরের পাশাপাশি তৃণমূলের বোট বৈতরণী পেরোতে অনেকাংশেই সহায়তা করবে বিশ্বের এই সংখ্যালঘু অধ্যুষিত গ্রাম। উন্নয়নের অন্তরায় যে তৃণমূলকে ছেড়ে পুনিশোলের বোটকে বিরোধীদের দিকে নিয়ে ফেলবে কি না তা ১২তারিখেই নির্ধারিত হয়ে যাবে।