কলকাতা: দোলে ‘ভারত মাতা’র জয়ধ্বনি৷ দোল শেষে বিজেপি নেতার সঙ্গে বৈঠক৷ ফের বিতর্কের বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত৷ মুকুল রায়ের সঙ্গে লুচি-আলুরদম ও খেলা নিয়ে আলোচনার পর এবার রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে গোপন বৈঠক ঘিরে ফের তুঙ্গে দলবদলের জল্পনা৷
শনিবার রাতে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গেও বৈঠক ঘটনা প্রকাশ্যে সব্যসাচী দত্ত নিজে অস্বীকার করলেও দিলীপ ঘোষের কথাতেও তা স্পষ্ট৷ এ প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ সংবাদ মাধ বলেন, ‘‘একসঙ্গে খেয়েছি৷ ওঁর সঙ্গী ছেলেরাও সেখানে ছিল৷’’
এর আগে সাংবাদিক বৈঠক করে বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত ঘোষণা করেছিলেন, ‘‘দলেই আছি৷ দলেই থাকব৷’’ এই মন্তব্যের পর নিজের দুর্গে দাঁড়িয়ে দোলের উৎসবে প্রকাশ্যে বলেছিলেন, ‘ভারত মাতা কি জয়৷’
বসন্ত উৎসবের মঞ্চে উঠে প্রকাশ্যে মেয়র থাকা না থাকা নিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেন সব্যসাচী দত্ত৷ জানান, তিনি মেয়র বা বিধায়ক থাকবেন কি না, তা নিয়ে তিনি চিন্তত নন৷ কারণ, তিনি মেয়র হয়ে জন্ম দেননি৷ হিন্দিতে শ্লোক আকার নিজের মন্তব্য শেষে মাইক হাতে প্রকাশ্যে বিজেপি দলে বহুল প্রচলিত স্লোগন ব্যবহার করেন৷
বৃহস্পতিবার দুপুরে সল্টলেকের সিএফ পার্কে মারোয়ারি সমাজের হোলিতে অংশ নিয়ে তৃণমূল বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত যা যা বললেন, তা তাঁর তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ার জল্পনাকে আরও তীব্র করল বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহলের একাংশ৷
সদ্য মিটেছে ভুল বোঝাবুঝি৷ দলের তরফেও দেওয়া হয়েছে শেষ সুযোগ৷ ঢাকঢোল পিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেও ভুল স্বীকার করে দিয়ে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর আনুগত্যও দেখিয়েছেন৷ কিন্তু, ভুল বোঝাবুঝি মিটতেই গত ১৪ মার্চ ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেন বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত৷
বিজেপি নেতা মুকুল রায় যদি ফের তাঁর বাড়িতে গিয়ে লুচি-আলুরদম খেতে চাইলে তাঁকে স্বাগত৷ বৃহস্পতিবার বারাসতে একটি রাজনৈতিক মামলায় হাজিরা দিতে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এই মন্তব্য করেন বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত। জানান, লুচি-আলুরদমের সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই৷ শুধু মুকুল রায় নন, যে কেউ লুচি, আলুরদম খেতে চাইলে তাঁকেই খাওয়াবেন। তবে, লুচি-আলুরদম তৈরির জন্য একটু সময় দিতে হবে৷
এদিন রায়চকে শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘিরে বিক্ষোভ প্রসঙ্গে সব্যসাচী বলেন, এই ধরনের উচ্ছৃঙ্খলা তিনি সমর্থন করেন না। কারও ব্যক্তিগত বিষয়ে ঢুকতেও চান না৷ অর্জুন সিংয়ের দিল্লি যাত্রা প্রসঙ্গে সব্যসাচী মত, ‘‘কাজ থাকলে আমিও দিল্লি যাব৷’’
গত ১০ মার্চ সমস্ত জল্পনায় জল ঢেলে মেয়র সব্যসাচী দত্তকে পাশে দাঁড় করিয়ে মুকুলকে আক্রমণ করেন ফিরহাদ হাকিম৷ দলবদলের জল্পনায় জল ঢেলে মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন ফিরহাদ৷ বিধাননগরে দলের জরুরি বৈঠক শেষে ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘ভিক্ষের ঝুলি নিয়ে ঘুরে বেরাচ্ছে মুকুল রায়৷ শুক্রবার বিনা নেমন্ত্রণে সব্যসাচীর বাড়িতে গিয়েছিল মুকুল রায়৷ পূর্বের সম্পর্ক থাকার কারণে তাঁকে ফিরিয়ে দিতে পারেনি সব্যসাচী৷ কিন্তু, ও বুঝতে পারেনি মুকুল রায় তাঁর বাড়িতে খেয়ে গিয়ে সংবাদ মাধ্যমে দলবদলের জঙ্গলনা বাড়াবে৷ সংবাদমাধ্যম এই বিভ্রান্তি তৈরি করেছে৷’’
১০ মার্চ দীর্ঘ বৈঠকের পর সব্যসাচী দত্ত গত ৮ মার্চ শুক্রবার রাতের গোটা ঘটনার কথা সংবাদমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেন৷ বলেন, ‘‘আমি তৃণমূলেরই ছিলাম৷ তৃণমূলেই আছি৷’’ এদিন ঠিক কী কারণে মুকুল রায় তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন, তাও ব্যাখ্যা দেন তিনি৷ সূত্রের খবর, শুক্রবার রাতের ঘটনায় দলের অন্দরে তিনি ভুল স্বীকার করেন৷
শুক্রবার সন্ধ্যায় বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্তের বাড়িতে যান বিজেপি নেতা মুকুল রায়৷ প্রায় দেড় ঘণ্টা সব্যসাচীর বাড়িতে মুকুল ছিলেন বলে জানা গিয়েছে৷ মুকুল রায় তৃণমূল কংগ্রেসে থাকাকালীন তাঁর অন্যতম ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন সব্যসাচী দত্ত৷ তবে এদিন সব্যসাচী দত্তর বাড়িতে যাওয়ার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই বলে পরে সাংবাদিকদের দাবি করেছেন মুকুল৷ তিনি বলেন, ‘‘সব্যসাচী আমার ভাইয়ের মতো। আমাদের মধ্যে দাদা-ভাইয়ের সম্পর্ক৷ খিদে পলেই এখানে আসি এই বাড়িতে৷ লুচি আলুর দম খেয়েছি৷ ছানার জিলিপি খেয়েছি৷ রাজনীতির কোনও আলোচনা হয়নি৷’’ মুকুল-সব্যসাচী সাক্ষাৎ ঘিরে তৃণমূল-বিজেপির অন্দরে শুরু হয় কানাঘুষো৷ গোটা বিষয়টি পর্যবেক্ষণের জন্য জরুরি ভিত্তিতে বৈঠকে বসে তৃণমূল৷