নয়াদিল্লি: লড়াই চলছে দুই ভিন্ন আদর্শের৷ জওহরলাল বনাম শ্যামাপ্রসাদের মতাদর্শগত লড়াই৷ নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে দেশজোড়া প্রতিবাদ চলছে৷ আবার, পাল্টা যুক্তিতে পথে নেমেছে বিজেপিও৷ সরকার বলছে এই আইন ধর্মীয় বিভেদ তৈরি করছে৷ গরীব মুসলমানরা কাগজ দেখতে পারবে না৷ তাঁরা বিদেশি হয়ে যাবে৷ আবার , বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দু দের কাগজ সরকার বানিয়ে দেবে৷ তারা ভারতীয় হয়ে যাবে৷ এ কেমন আইন৷ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় কী তাই চেয়েছিলেন, কখনোই নয়৷ বিজেপির যুক্তি শুরু হয় জওহরলাল নেহরু-লিয়াকত আলী খানের মধ্যে সাক্ষরিত নেহরু-লিয়াকত চুক্তি বা দিল্লি চুক্তি দিয়ে৷
ভারত-পাকিস্তান দুই দেশই নিজেদের দেশে সংখ্যালঘু রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল৷ শুধু রক্ষাই নয়, তাঁদের সম্পত্তি রক্ষারও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল৷ সেই সময় ভারত দাবি করেছিল, ভারতে সংখ্যালঘুরা সমান মর্যাদা পায়, সংবিধান তাঁদের এই অধিকার দেয়৷ পাকিস্তানের পাল্টা যুক্তি ছিল, সেদেশের মূল ধারণাতেই সংখ্যালঘুরা সমান অধিকার পায়৷ যদিও পাকিস্তানের সেসময়কার দাবি কতটা ফাঁপা তা পরবর্তীকালে বোঝা গিয়েছে৷ পাকিস্তান এবং পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমানে স্বাধীন বাংলাদেশ) সংখ্যালঘুদের সংখ্যা কমতে থাকে৷ বর্তমানে যা খুবই কম৷
বিজেপির যুক্তি, নেহরু-লিয়াকত চুক্তি ব্যর্থ, পাকিস্তান কথা রাখেনি৷ ভারত কথামত কাজ করেছে৷ এই চুক্তি অনুযায়ী ভারতে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা সংখ্যাগুরু হিন্দুদের তুলনায় বেড়েছে৷ এই চুক্তি ১৯৫০ সালে ৮ এপ্রিল সই হওয়ার পর নেহরুর মন্ত্রিসভা ত্যাগ করেন শ্যামাপ্রসাদ৷ কারণ তিনি চেয়েছিলেন, পাকিস্তান থেকে সংখ্যালঘুদের দেশে ফেরাক ভারত৷ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য বাড়তি জমি নিক সংখ্যালঘুদের জন্য৷ দুই দেশের জন বিনিমিয় হোক৷ আর পাকিস্তান যদি আপত্তি করে তবে যুদ্ধ হোক, দাবি করেন হিন্দু মহাসভার নেতারা৷
নেহরু যুদ্ধের দিকে পা না বাড়িয়ে চুক্তিতে সই করেন৷ শ্যামাপ্রসাদ মন্ত্রিত্ব ছাড়েন৷ দুই মতাদর্শ আলাদা হয়ে যায়৷ জনবণ্টন হলে ভারতে থাকা মুসলমানদের পাকিস্তানে পাঠাতে হতো৷ নেহরু তা মানেন নি৷ নেহরু লিয়াকত চুক্তি অনুযায়ী যেই সংখ্যালঘুরা নিজের ইচ্ছায় দেশ পরিবর্তন করতে চায় তারা করতে পারে৷ সেই রাস্তা খোলা ছিল৷ অনেক সংখ্যালঘুরাই পরবর্তীকালে পাকিস্তান থেকে ভারতে এসেছে বা ভারত থেকে পাকিস্তানে গিয়েছে৷ সুতরাং, এই লড়াই মতাদর্শগত৷ এই লড়াইতে, কংগ্রেস এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের একরখামি প্রকাশ পেয়েছে৷