কলকাতা: বিরোধীরা জানিয়েছিলেন, রাজ্যে কমপক্ষে ১৪৭ কোম্পানি বাহিনী আনানো হোক৷ কিন্তু, বিরোধীদের সেই দাবি অভূতপূর্ব ভাবে পূরণ করতে চলেছে নির্বাচন কমিশন৷ সূত্রের খবর, সব ঠিকঠাক চললে বাংলায় আসতে পারে ৬০০-৭০০ কোম্পানি বাহিনী৷ যা নজিরবিহীন ঘটনার শামিল বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহলের একাংশ৷
জানা গিয়েছে, এবার রাজ্যের সব বুথে থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনী৷ স্পর্শকাতর ও অতি স্পর্শকাতর বুথেও দখল থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর হাতেই৷ স্পর্শকাতর এলাকায় চলবে টহল৷ ভোটার যাতে নিশ্চিন্তে ভোট দিতে যেতে পারেন, তা নিশ্চিত করতেই কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দিয়ে রুট মার্চ করানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন৷ কিন্তু, কেন্দ্রীয় বাহিনীর বাড়ি বাড়ি গিয়ে শাঁসাচ্ছেন বলে অভিযোগ তৃণমূলের৷
রুটমার্চের নামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনী৷ এই অভিযোগ তুলে সোমবার নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্ত হতে চলেছে তৃণমূল৷ রবিবার মেয়র ফিরহাদ হামিক জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী যেভাবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে, তা বিরুদ্ধে আমরা কমিশনে অভিযোগ জানাবো৷
শাসক দলের অভিযোগ, রুটমার্চের নামে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে মহিলাদের শাঁসিয়ে আসছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা৷ প্রকাশ্যে বলা হচ্ছে, কেউ যে দাদাগিরি না করেন৷ যদি কেউ দাদাগিগি করে, তার ফল খুবই খারাপ হবে৷ কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের মুখে এহেন ‘দাদাগিরি’র মন্তব্য শুনে স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষুব্ধ শাসক তৃণমূল৷ কেন্দ্রীয় বাহিনী তহল দিতে গিয়ে এই ধরনের হুমকি দিতে পারে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ অভিযুক্ত জওয়ানদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে কমিশনে অভিযোগ করা হবে বলেও সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হামিক৷
নজরুল মঞ্চে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের কর্মী সভায় চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করেন মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে মুখ খুলে পার্থবাবুর মন্তব্য, ‘‘রুটমার্চের নামে কেন্দ্রীয় বাহিনী এলাকায় আতঙ্ক তৈরি করছে৷’’ এদিন কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘কাশ্মীরের থেকে বেশি কেন্দ্রী বাহিনী রাজ্যে আনা হয়েছে৷’’ বিরোধীদের তোলা রাজ্যের শান্তি-শৃঙ্খলা নিয়েও আক্রমণ করেন তিনি৷ জানান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাংলায় শান্তি ফিরিছে৷ কিন্তু, বিরোধীরা ভোটের বাজারে আতঙ্ক ছড়াতে বেশি তৎপর হয়ে উঠেছে৷’’
এদিনের এই কর্মীসভা থেকে দলীয় কর্মীদের একগুচ্ছ নির্দেশ দেন৷ ইভিএম ও ভিভিপ্যাটের উপর দলীয় কর্মীদের নজর রাখার উপরও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ারও নির্দেশ দেন৷ ভোট লুট রুখতে কর্মীদের সজাগ থাকাও বার্তা দেন তিনি৷ এদিন নজরুল মঞ্চে তৃণমূলের কর্মী সভায় এসে দলে যোগ দেন আরএসপি কাউন্সিলর নিবেদিতা শর্মা৷
দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি বিজেপিকেও আক্রমণ করেন তিনি৷ বলেন, ‘‘বিজেপি বাহুবলী হওয়ার চেষ্টা করছে৷ মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে৷ তবে, বিজেপি যাই করুক, ওদের মনে রাখতে হবে এটা বাংলা৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্ব রয়েছেন৷ এখানে বিজেপির কোন চাল কাজে আসবে না৷’’
ভোটের প্রতি আস্থা বাড়াতে, ভোটারদের মনোবল দৃঢ় করতে শহরের বিভিন্ন জায়গায় চলছে রুটমার্চ। রবিবার সকাল থেকেই খিদিরপুর, একবালপুরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর রুটমার্চ শুরু হয়। ওয়াটগঞ্জ থানার অন্তর্গত বিভিন্ন এলাকায় পুলিসের সঙ্গে টহল দেয় সেন্ট্রাল ফোর্স। লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রতিটি এলাকা ঘুরে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। অন্যদিকে, নিউ আলিপুরের বিভিন্ন অঞ্চলেও চলে রুটমার্চ। কমিশন সূত্রে খবর, দুদফায় রুটমার্চ করবে কেন্দ্রীয় বাহিনী।