নাট্যকর্মীর উপর হামলা, গর্জে উঠেছেন অনির্বাণ-ঋদ্ধিরা! সর্বস্তর থেকে কেন প্রতিবাদ হল না, উঠছে প্রশ্ন!

নাট্যকর্মীর উপর হামলা, গর্জে উঠেছেন অনির্বাণ-ঋদ্ধিরা! সর্বস্তর থেকে কেন প্রতিবাদ হল না, উঠছে প্রশ্ন!

নিজস্ব প্রতিনিধি: নাট্যকর্মীর উপর হামলা। বেলেঘাটায় নাট্যকর্মী অমিত সাহা ও অরূপ খাঁড়াকে তৃণমূলের  নেতাকর্মীরা যেভাবে হেনস্থা করেছে, মারধর করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে তা নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য এবং ঋদ্ধি সেন। কিন্তু শিল্প জগৎকে অবাক করে অধিকাংশ শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী তথা সুশীল সমাজ নীরব দর্শক হয়ে শুধুই দেখে গেলেন ঘটনাটি। শাসক দলের প্রতি অগাধ ভক্তি, নাকি ভয়? কি কারণে মুখ বন্ধ করে রয়েছেন সবাই? স্বাভাবিকভাবেই এই প্রশ্ন উঠেছে। শাসক দলকে খুশি করতে না পারলে আগামী দিনে মিলবে না সম্মান ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা, কঠিন হবে সিনেমার প্রোডিউসার বা পরিচালকদের কাছ থেকে ডাক পাওয়া, এই সমস্যা তৃণমূলের আমলে ব্যাপকভাবে দেখা যাচ্ছে বলে অনেকেরই অভিযোগ। যদিও শাসক দল বারবার সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কিন্তু ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতা অন্য কথাই বলছে।

বেলেঘাটার রাসমেলার মাঠে পূর্ব কলকাতা বিদূষক নাট্যমণ্ডলী ২৪ ও ২৫ ডিসেম্বর একটি নাট্যোৎসবের আয়োজন করেছিল। কিন্তু স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি সেখানে তাদের কেক উৎসব চলবে। তাই অন্য কিছু করা যাবে না। তখন বিষয়টি নিয়ে কথা বলে সমস্যা মেটাতে চেয়েছিলেন নাট্যকর্মীরা। কিন্তু কথা বলা তো দূরের কথা, তাঁদের ব্যাপক মারধর করা হয়েছে বলে  অভিযোগ ওঠে। এরপরই সোচ্চার হয়েছেন অনির্বাণ। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “যারা মেরেছেন তাদের কেউ হয়ত আগামী দিনে রাজ্যের সংস্কৃতি মন্ত্রী হবেন। আমার পরের অভিনয় ১৫ জানুয়ারি রবীন্দ্রসদন মঞ্চে, এসে মেরে যান। আমি প্রতিবাদ করছি এটা জেনেই যে, এই প্রতিবাদ ব্যর্থ হবে। যিনি হাত তুলেছেন তিনি তাঁর সাহসে বলীয়ান হয়ে বাংলা মায়ের সুযোগ্য সন্তানের সার্টিফিকেট ঘরে বাঁধিয়ে রাখবেন। পশ্চিমবঙ্গে এক অভূতপূর্ব আনন্দযজ্ঞ শুরু হয়েছে। ভোট রাজনীতিতে কাজে আসে না এমন শিল্পীদের মেরে ঠান্ডা করে দেওয়া হচ্ছে।” একই ভাবে অভিনেতা ঋদ্ধি সেন ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন,” অমিত সাহা ও অরূপ খাঁড়ার গায়ে হাত ওঠার ঘটনায় গোটা পশ্চিমবঙ্গের শিল্পীরা এগিয়ে আসুক। দেখা যাক কতজনের গায়ে হাত তুলবে তৃণমূলের লুম্পেন গুন্ডা বাহিনী।” সেই সঙ্গে শাসক দলের সাংসদ ও বিধায়কদের নিশানা করে ঋদ্ধি লিখেছেন,” এরা না পারে অভিনয়, আর রাজনীতি তো ছেড়েই দিন। কোনওটার প্রতি কোনও কমিটমেন্ট নেই। তবুও তারা সাজানো শো-পিসের মতো এমএলএ-এমপি। কিন্তু মার খাবে তারা যারা সৎ ভাবে নিষ্ঠা নিয়ে একটা নাট্যেৎসব করার চেষ্টা করবে। ধিক তৃণমূল কংগ্রেস।”

শুধু তৃণমূল সরকারের আমল বলে নয়, বামফ্রন্ট যমুনাতেও শিল্পী ও শিল্পের উপর আঘাত নেমে এসেছিল বলে বারবার অভিযোগ উঠেছে। অর্পিতা ঘোষের ‘পশুখামার’ নাটকটিকে হুগলিতে মঞ্চস্থ করতে দেয়নি সিপিএম। তৎকালীন সিপিএম সাংসদ রূপচাঁদ পালের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে তাঁর নির্দেশেই সেই কাজ করা হয়েছিল। ব্রাত্য বসু ‘উইঙ্কল টুইঙ্কল’ নাটক দীর্ঘদিন মঞ্চস্থ হতে পারেনি সিপিএমের বাধায়। ‘টরাস’ ছবি কলকাতার হলে চালাতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছিলেন হল মালিকরা। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে, তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের হস্তক্ষেপে শেষপর্যন্ত সিনেমাটি রিলিজ করা গিয়েছিল।  তবে ওয়াকিবহাল মহল মনে করে বাম আমলে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু ঘটনা ঘটলেও বর্তমানে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললেই তাঁকে নানা দিক থেকে হেনস্থা করা হচ্ছে। শাসক দলকে খুশি না করলে টলিউডে কাজ পাওয়া যায় না বলে অনেকেই অভিযোগ করেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গের শিল্পী সমাজ অদ্ভুত দর্শক হয়ে বসে আছে। বেলেঘাটার ঘটনা নিয়েও তাঁদের মানসিকতার পরিবর্তন হয়নি। আর এরই মধ্যে ঘটনার প্রতিবাদ যেভাবে অনির্বাণ ও ঋদ্ধি করেছেন তাকে সাধুবাদ  জানাচ্ছেন শিল্প অনুরাগীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *