জমিতে চাষ করেই সংসার ঠেলছেন স্নাতক বাংলার দুই বোন

বারাসত: যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে! না, বলা ভাল, যে চাষ করে সেও ধরে কলম৷ শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক হলেও জোটেনি চাকরি৷ আর তাই বাধ্য হয়ে দু’বেলা দু’মুঠো অন্নের জন্য দুই বোনকে যেতে হয় মাঠে৷ ফলাতে হয় ফসল৷ এভাবেই জীবনযুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন দুই বোন৷ পেটের টানে অনেক ছাত্রকেই পড়াশোনার পাশাপাশি চাষের কাজ করতে হয়৷ কিন্তু

জমিতে চাষ করেই সংসার ঠেলছেন স্নাতক বাংলার দুই বোন

বারাসত: যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে! না, বলা ভাল, যে চাষ করে সেও ধরে কলম৷ শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক হলেও জোটেনি চাকরি৷ আর তাই বাধ্য হয়ে দু’বেলা দু’মুঠো অন্নের জন্য দুই বোনকে যেতে হয় মাঠে৷ ফলাতে হয় ফসল৷ এভাবেই জীবনযুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন দুই বোন৷

পেটের টানে অনেক ছাত্রকেই পড়াশোনার পাশাপাশি চাষের কাজ করতে হয়৷ কিন্তু বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে মেয়েদের যে এইভাবে চাষ না করলে খাওয়া জুটবে না, এমনটা অভাবনীয়৷ হাবরার কুমড়া পঞ্চায়েতের আনখোলা গ্রামের দুই বোনই এখন বাংলার উন্নয়নে নয়া বিজ্ঞাপন৷ 

আনখোলা গ্রামে বাসিন্দা ভোলানাথ মণ্ডল৷ স্বামী স্ত্রী ও ছয় মেয়েকে নিয়ে ছিল কষ্টের সংসার৷ সম্বল বলতে ছিল পৌনে চার বিঘা চাষের জমি৷ কিন্তু পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে শয্যাশায়ী ছিলেন তিনি৷ ২০১৫ সালে তাঁর মৃত্যু হয়৷ যদিও মৃত্যুর আগেই চার মেয়েকে বিয়ে দিতে সক্ষম হন তিনি৷ একদিকে বাবার চিকিৎসার খরচ জোগানো, অন্যদিকে দু’বেলা-দু’মুঠো জোগাড়ে কার্যত বাধ্য হয়েই দুই বোন সমাপ্তি ও দীপিকা মাঠে চাষ করতে নামতে বাধ্য হন৷ শিখে নেন হল ধর৷ ধান কাটা৷ ধান ঝাড়া৷ ধান রোয়া৷ তবে, এত কষ্টের পরও পড়াশুনো ছাড়েননি দুই বোন৷ 

সমাপ্তি ভূগোলে অনার্স৷ আর দীপা স্নাতক৷ সরকারি চাকরি তো দূরঅস্ত৷ সামান্য উপার্জনের মতো বেসরকারি সংস্থায় কাজ মেলেনি, ইংরেজি বলতে না পারায়৷ জোটেনি কোন সরকারি সুযোগ-সুবিধাও৷ তাঁদের অভিযোগ, আবাসন প্রকল্পে বাড়ি পর্যন্ত তাঁদের দেয়া হয়নি৷ আবেদনের পরও মেলেনি বিধবা ভাতা৷ ভোলানাথবাবুর বিধবা স্ত্রী অঞ্জলিদেবী জানান, জামাইদের সহযোগিতার একটি ছোট্ট বাড়ি বানিয়ে কোনরকমে মাথা গোঁজার ঠাঁই করেছেন তাঁরা৷ আর মেয়েরা মাঠে যাই বলেই দু’বেলা দু’মুঠো ভাত জোটে৷

ফেসবুক-টিকটকের যুগে যখন সবাই মত্ত, তখন সমাপ্তি, দীপা মাঠে রোদে পুড়ে জলে ভিজে হাল ধরেন৷ ধরেন সংসারের হাল৷ তারই ফাঁকে সময় করে পড়াশোনা৷ শিখছেন কম্পিউটার। একটু বেশি রোজগারের আশায় প্রাইভেট টিউশনিও পরান দীপা৷ মা অঞ্জলি মণ্ডল জানিয়েছেন, দুই মেয়ে চাষ করার কষ্টে সংসার চলে তাঁদের৷ চান সরকারি সাহায্য৷ একটু সাহায্য মিললে দুই মেয়ে বিয়ে দিয়ে দিতে পারলে নিশ্চিতে দু’চোখ বন্ধ করতে পারেন তিনি৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *