২১-এর নির্বাচনে বাংলায় বাম-কংগ্রেস জোট কি গড়ে উঠবে? নাকি যাবে ভেস্তে?

২১-এর নির্বাচনে বাংলায় বাম-কংগ্রেস জোট কি গড়ে উঠবে? নাকি যাবে ভেস্তে?

 

তপন মল্লিক চৌধুরী :  আসন রফা  কি হবে জানা নেই কারও তবে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বাম-কংগ্রেস জোট প্রায় পাকা। অধীররঞ্জন চৌধুরীপ্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে সরাসরি বামেদের জোটবার্তা দেন । একই সময় এক টুইটে কংগ্রেসকে জোটবার্তা দেন সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম। তাতে এটা বোঝা যাচ্ছে যে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে দুদলই মরীয়া হয়ে উঠেছে।  

২০১১-য় ক্ষমতা হারানোর পর থেকেই সিপিএম ক্ষয়রোগে আক্রান্ত। কংগ্রেসের সমর্থনও কমতে কমতে তলানিতে ঠেকেছে তৃণমূল কংগ্রেস গঠনের পর থেকে। এই পরিস্থিতিতে ২০১৬ সালে আসন সমঝোতা করে ভোটে লড়ে বাম ও কংগ্রেস। তাতে বামেদের থেকে বেশি আসন পায় কংগ্রেস। এর পর লোকসভা নির্বাচনে নিজেদের দিকে পাল্লা ভারী রাখতে গিয়ে কঠিন শর্তে দরকষাকষি শুরু করে সিপিএম। যার ফলে শেষ পর্যন্ত আর আসন সমঝোতা হয়নি। শুধুমাত্র ২টি আসনে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রার্থী দেয়নি সিপিএম। ২টি আসনেই জেতে কংগ্রেস। ১টি আসনে সিপিএমের বিরুদ্ধে প্রার্থী দেয়নি কংগ্রেস। সেখানে দ্বিতীয় হয় সিপিএম।

২০১৬ র বিধানসভা নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস জোট হয়েছিল ঠিকই কিন্তু দু’দিকের ভূমিকা এবং আচরণের জন্য জনগণ তাদের যথেষ্ট বিশ্বাস করতে পারেন নি। আর তারপর যা হবার তাই ঘটল। তাঁরা পরস্পরের হাত ছেড়ে দিলেন।  জনসাধারণের বুঝতে কোনও অসুবিধাই হল না যে তাঁরা ক্ষমতার জন্যই ওই জোটবন্ধন তৈরি করেছিলেন। যদিও নির্বাচনে তাঁরা একসাথে লড়েননি কিন্তু এর পরেও বিভিন্ন ইস্যুতে বাম ও কংগ্রেস নেতারা একজোট হয়েছেন। কিন্তু কেন, তা কেউ জানেন না। তবে এটা কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে সত্যি, যে একসঙ্গে লড়াই করলে আস্তে আস্তে হলেও অতীতের গ্লানি মুছে ফেলা যায়। সাধারণ মানুষের কাছে বিশবাসযোগ্য হয়ে ওঠা সম্ভব।  ইতিহাসে এমন নজির প্রচুর আছে। পশ্চিমবঙ্গে বাম কংগ্রেস জোট একসঙ্গে লড়লেই যে ক্ষমতায় এসে যাবে এমনটা কেউ বলছেন না। অবে এ রাজ্যেই যদি এমন রাজনীতির নজির গড়ে তোলা যায় তবে তার প্রভাব জাতীয় রাজনীতির স্তরে পড়তে বাধ্য।

বামদের তরফে সেলিম জানিয়েছেন বিজেপি ও তৃণমূলের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে বাম ও কংগ্রেস আগেও যৌথ কর্মসূচি নিয়েছে, ভবিষ্যতেও নেবে। এর থেকে এটা স্পষ্ট বাম-কংগ্রেস আসন রফা নিয়ে আলোচনা বাকি রেখেই আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে হাত মেলাতে ব্যস্ত। তাতেই বোঝা যায় দুই দলই বাংলায় তাদের অস্তিত্ব ধরে রাখতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে।

এটাও ঘটনা বাংলাকে জাতীয়তাবাদী হিন্দু্ত্বের হাত থেকে বাঁচাতে গেলে কংগ্রেস, বাম এবং সমস্ত বামপন্থী শক্তিকে একজোট হতে হবে। লোকসভা নির্বাচনের আগে যে কোনও কারণেই হোক সেই জোট হয়নি। অর্ধেক অর্ধেক করে বিজেপি আর তৃণমূল ভোট ভাগ করে নিয়েছে। তাতে রাজ্যকেই ভুগতে হচ্ছে। আজ মানুষের বিপদের সময় তাদের দেখা নেই। কংগ্রেস এবং তৃণমূল শেষ একসাথে লড়েছিল ২০১১ তে, বাম সরকারের পতন ঘটাতে। কিন্তু বছর না ঘুরতেই সেই জোট ভেঙে গেল। তারপর থেকে শুধু তো পরস্পর বিরোধিতা। সেখানে কীভাবে সম্ভব অতীতের তিক্ততা ভুলে আবার একজোট হওয়া? এটা সম্ভব হয় একই রাজনীতির নানা রূপের মধ্যে। বিশেষত বিরোধী ময়দানে। যেমন বহু বিভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও বামপন্থীরা একে অপরের হাত ধরে আছেন।

টুইটে সেলিম লিখেছেন, ‘অধীরবাবুকে শুভেচ্ছা। বিজেপি ও তৃণমূলের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে বাম ও কংগ্রেস আগেও যৌথ কর্মসূচি নিয়েছে, ভবিষ্যতেও নেবে।’ ভিডিয়ো বার্তার সেলিমকে বলতে শোনা যায়, 'মানুষের নানা ইস্যুতে যে লড়াই তাতে আমাদের মধ্যে বোঝাপড়া আরও বেড়েছে। আজকে যদি পশ্চিমবঙ্গকে বাঁচাতে হয় তাহলে কংগ্রেস, বাম এবং সমস্ত বামপন্থী শক্তিকে একজোট হতে হবে। বিজেপি ও তৃণমূল বিরোধী ভোট এক জায়গায় করতে হবে। লোকসভা নির্বাচনের আগে যে কোনও কারণেই হোক জোট হয়নি। তাতে রাজ্যের ভাল হয়নি। যে কোনও কারণেই হোক, অর্ধেক অর্ধেক করে বিজেপি আর তৃণমূল ভোট ভাগ করে নিয়েছে। কিন্তু মানুষের বিপদের সময় তাদের দেখা যায়নি। সেলিমের টুইটে উৎসাহিত অধীর চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘সেলিম ভাইয়ের টুইট আমায় উৎসাহিত করল, একসঙ্গে লড়ব।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen − 12 =