মেডেলের লোভে নিরীহ মানুষকে হত্যা করে সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা করছে কাশ্মীরে সেনা?

মেডেলের লোভে নিরীহ মানুষকে হত্যা করে সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা করছে কাশ্মীরে সেনা?

তপন মল্লিক চৌধুরী :  কাশ্মীরে স্থানীয় অধিবাসীদের ওপর সেনাবাহিনীর অত্যাচার ও হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। পাশাপাশি ক্ষমতার অপব্যবহার করে বা বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজিয়ে নিরীহ কাশ্মীরিদের হত্যার কথা স্বীকারের ঘটনাও বেশ বিরল। গত জুলাই মাসে করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউনের মধ্যে তিন কাশ্মীরি শ্রমিককে হত্যার সময় ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে বলে স্বীকার করেছে ভারতীয় বাহিনী।

শুক্রবার ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, গত ১৮ জুলাই সেনাবাহিনী জানিয়েছিল, তারা শোপিয়ানের আমশিপোরা গ্রামে অজ্ঞাত তিন ‘বিদ্রোহীকে’ হত্যা করেছে। পরে তদন্তে দেখা গেছে, তারা রাজৌরি জেলার বাসিন্দা, যাদের সাজানো বন্দুকযুদ্ধে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছিল তাদের পরিবার।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল রাজেশ কালিয়া বিবৃতিতে বলেছেন,  ভারতীয় সেনার নির্দেশ অনুসারে আমশিপোরা অভিযানের বিষয়ে তদন্ত শেষ হয়েছে। তদন্তে প্রাথমিকভাবে বেশ কিছু প্রমাণ মিলেছে যাতে মনে হয়েছে, অভিযানের সময় সশস্ত্র বাহিনী বিশেষ ক্ষমতা আইন (এএফএসপিএ) প্রয়োগ করার মাত্রা ছাড়িয়ে ফেলেছিল’।

কর্নেল রাজেশ কালিয়া এও জানান, ‘তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, আমশিপোরা অভিযানে নিহত তিন জন হলেন ইমতিয়াজ আহমেদ, আবরার আহমেদ ও মোহাম্মদ ইবরার। তারা রাজৌরি থেকে ফিরছিলেন। এখন তাদের ডিএনএ রিপোর্ট হাতে পাওয়ার অপেক্ষা। তারপরই সন্ত্রাস বা সে সম্পর্কিত কর্মকাণ্ডে তাদের যোগসূত্রের বিষয় পুলিশ আরও তদন্ত করবে’।

এর আগে পুলিশের বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছিল, ওই অভিযানে সেনা কর্মকর্তাদের ওপর গুলি চালানো হয়। এই ঘটনার কিছুদিন পরে নিহত তিন ব্যক্তির ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে পড়ে। সেখান থেকেই তাদের শনাক্ত করেন বাড়ির লোক এবং বেআইনি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ করেন।

শুক্রবার ভারতীয় সেনাবাহিনী এই বেআইনি হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকারের পর নিহত ইবরারের খুড়তুতো ভাই নসিব খাতানা জানান, নিহতরা সবাই একে অপরের খুড়তুতো ভাই ছিলেন। তারা কাজের উদ্দেশ্যে রাজৌরি থেকে শোপিয়ান গিয়েছিলেন। কিন্তু সেনাবাহিনী তাদের সন্ত্রাসবাদী বলে দাবি করে। এভাবে তারা এর আগেও নিরপরাধ মানুষদের সঙ্গে এই অন্যায় করেছে’। ভুক্তভোগী আরেকটি পরিবারের সদস্যরা  জানান, স্বজনদের ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফলের জন্য দীর্ঘদিন ধরে ঘুরেও তারা এখনও রিপোর্টের হদিস পাননি। কাশ্মীরের এই সব পরিবার চাইছে তাদের সব্জনদের হত্যাকারীদের প্রকাশ্যে এনে সাজা দেওয়া হোক। জুলাই মাসে ওই মিথ্যা বন্দুকযুদ্ধে নিহতদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন ইবরার। তিনি পড়াশোনার জন্য দিনমজুরের কাজ করে অর্থ জমাচ্ছিলেন বলে জানিয়েছে তার পরিবার।

মানবাধিকার কর্মীদের দাবি, কাশ্মীরে ভারতীয় সেনারা আর্থিক সুবিধা ও মেডেলের জন্য বেসামরিক লোকদের হত্যা করে অনেক সময় ‘বিদ্রোহী’ বলে চালিয়ে দেন। আগেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। ২০১০ সালের মে মাসে মাচিল এলাকায় নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে ভারতীয় সেনাদের সাজানো বন্দুকযুদ্ধে তিনজন বেসামরিক নাগরিককের প্রাণ যায়, কাশ্মীর পুলিশের তদন্তে এই তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর বিক্ষোভ উপত্যকায় ছড়িয়ে পড়ে। সেনারা পুরস্কারের লোভে ওই তিন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে ‘সশস্ত্র বিদ্রোহী’র তকমা  লাগিয়ে দিয়েছিল। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × 4 =