বিহারে কমিউনিস্ট পার্টি কীভাবে ধুয়ে-মুছে সাফ? কোথায় গেল ‘বিহারের লেনিনগ্রাদ’?

বিহারে কমিউনিস্ট পার্টি কীভাবে ধুয়ে-মুছে সাফ? কোথায় গেল ‘বিহারের লেনিনগ্রাদ’?

 

দেবময় ঘোষ:

পর্ব – ১

২০১৯ সাল। লোকসভা নির্বাচন। বিহারের বেগুসরাই সারা দেশেই আলোচনার বিষয়বস্তু। এই নির্বাচনী অঞ্চলটিতে একদিকে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) গেরুয়া তরঙ্গ প্রবাহিত হতে থাকে। অন্যদিকে ‘বাম রাজনীতির পুনর্জাগরণ’। ১৯৬০ থেকে ১৯৯০ – এমনকি নয় দশকের শেষ ভাগ পর্যন্ত বাম দলগুলি, প্রধানত ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআই) এই এলাকার রাজনীতিতে প্রাধান্য বিস্তার করেছে।  সেসময় বেগুসরাইকে ‘বিহারের লেলিলগ্রাদ’ বলা হত।

আজ বেগুসরাই দক্ষিণপন্থী রাজনীতির দিকে ঝুঁকে। এক সময়ে আকাশের সেই রক্তিম আভা যেন ফিকে। কেউ যেন মুঠো মুঠো গেরুয়া আবীর আকাশের দিকে ছুঁড়ে দিয়েছে। গত কয়েক দশক ধরে বামপন্থী রাজনীতি যেন প্রচণ্ড আঘাতে বিপন্ন।

গত বছর লোকসভা ভোটে কানহাইয়া কুমারের পরাজয় রাজ্যে সিপিআইয়ের উপস্থিতিকে আরও ম্লান করেছে। এই বিধানসভা ভোটে রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) এবং কংগ্রেস দলের সাথে মহাজোটের ছত্রছায়ায় সিপিআই ছয়টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে যার মধ্যে তিনটি – বাখরি, তেঘড়া এবং বাছওয়ারা – বেগুসরাই জেলার অন্তর্ভুক্ত। ছয়টি আসনের মধ্যে কমপক্ষে দু’টি আসনের জয়ের দাবি করা হয়েছে দলের পক্ষে বেশি।

বেগুসরাই জেলায় এই অঞ্চলের সংখ্যাধিক্য এবং আর্থিকভাবে ধনী সম্প্রদায়ের উচ্চ বর্ণের ভূমিহার ভোটারদের একটি শক্ত ঘাঁটি ছিল। জেলার ১৯ লক্ষ ভোটারের মধ্যে ভূমিহার সম্প্রদায়ই প্রায় ১৯ শতাংশ ভোটার রয়েছে। তারপরে মুসলিম ভোট ১৫ শতাংশ, যাদবরা ১২ শতাংশ এবং কুর্মি ৭ শতাংশ। যাইহোক, গত দুই দশকে সম্প্রদায়ের ভোটগুলি বিজেপির দিকে ক্রমশ পরিবর্তন হতে দেখা গিয়েছে এবং এই অঞ্চলে বাম দলগুলিকে প্রবল ধাক্কা দিয়েছে।

বেগুসরাইয়ের বাম রাজনীতির কথা উল্লেখ করতে হলে কেদারনাথ সিংয়ের কথা বলতেই হয়। সে সময় ফরওয়ার্ড কমিউনিস্ট পার্টির এই নেতার বক্তৃতা বিতর্কের উদ্রেক করেছিল। কেদারনাথ সিং বনাম বিহার রাজ্যে – বহু চর্চিত একটি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী বেগুসরাইয়ের একটি জনসভায় কেদারনাথ বলেছিলেন, সিআইডি-র কুকুরগুলি বরাউনি (বেগুসরাই) এর চারপাশে অপেক্ষা করছে। অনেক সরকারী কুকুর এমনকি এই সভায় বসে আছে। ভারতের জনগণ এই দেশ থেকে ব্রিটিশদের তাড়িয়ে দিয়ে এই কংগ্রেস গুন্ডাদের নির্বাচিত করেছেন গাদিতে।  তারা (বাম) এই কংগ্রেস গুন্ডাদেরও মেরে তাড়িয়ে দেব। পরে অবশ্য কংগ্রেসেই যোগদান করেন কেদারনাথ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *