রাজ্যের ‘সক্রিয়তা’য় বাড়ছে শুভেন্দুর ‘গ্রেফতারি’র সম্ভবনা! উঠছে গুরুতর অভিযোগ

রাজ্যের ‘সক্রিয়তা’য় বাড়ছে শুভেন্দুর ‘গ্রেফতারি’র সম্ভবনা! উঠছে গুরুতর অভিযোগ

 

কলকাতা: নন্দীগ্রামের বিধায়ক তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর গ্রেফতারির সম্ভবনা ক্রমেই জোরাল হচ্ছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷ সৌজন্যে, একাধিক মামলায় শুভেন্দুর নাম জড়িয়ে যাওয়া এবং প্রতিটি ক্ষেত্রেই রাজ্যের ‘অতি সক্রিয়তা’!

রাজনৈতিক মহলের আশঙ্কা যে অমূলক নয়, তা স্পষ্ট করেছেন শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ বিজেপি নেতা হিসেবে পরিচিত কনিষ্ক পণ্ডা৷ পূর্ব মেদিনীপুরের দাপুটে এই বিজেপি নেতার দাবি, ‘‘এখন রাজ্য সরকারের মাথা ব্যাথার অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে শুভেন্দু অধিকারী৷ আসলে দাদা ওদের (তৃণমূলের) অপকর্মের বিরুদ্ধে সরব৷ তাই যেন তেন প্রকারেন দাদাকে জেলে ঢোকানোর চক্রান্ত করছে তৃণমূল৷’’ অতীতে বাম সরকারও শুভেন্দুকে নানা মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করেছিল অভিযোগ করে কনিষ্কর দাবি, ‘‘লড়াকু নেতাকে এভাবে কেউই থামাতে পারবে না৷’’

ঘটনার সূত্রপাত, আড়াই বছর আগে নিরাপত্তা রক্ষীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার তদন্তভার নেওয়ার পর বুধবারই শুভেন্দুর বাড়ির চৌকাঠে হানা দেয় সিআইডি দল৷ শুভেন্দুকে না পেয়ে দীর্ঘক্ষণ তাঁরা জেরা করেন তাঁর ভাই তথা তমলুকের তৃণমূল সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারীকে৷ তার আগে এই খুনের মামলায় প্রায় ৪০ মিনিট কাঁথির থানায় আইসি অমলেন্দু বিশ্বাসকে জেরা করেন তদন্তকারীরা।

২০১৮ সালের অক্টোবরে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় শুভেন্দুর অন্যতম দেহরক্ষী শুভব্রত চক্রবর্তীর৷ গত ৭ জুলাই কাঁথি থানায় স্বামীর মৃত্যুর তদন্ত চেয়ে মামলা দায়ের করেন প্রয়াত শুভব্রতর স্ত্রী সুপর্ণা কাঞ্জিলাল চক্রবর্তী। তাতে সরাসরি শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ আনা হয়৷ সুপর্ণাদেবীর অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট মামলায় শুভেন্দু সহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ও ১২০ (বি) ধারায় মামলার রুজু করে পুলিশ৷ এরপরই তদন্তভার যায় সিআইডির হাতে৷ তারপরই দফায় দফায় এলাকায় হানা দিচ্ছেন তিন সদস্যের সিআইডি দল৷

এখানে উল্লেখ করা থাক, কাঁথি পুরসভা এলাকার ত্রিপল লোপাটকাণ্ডেও নাম জড়িয়েছে শুভেন্দুর৷ এফআইআরের এক নম্বরে নাম রয়েছে তাঁর৷ এবিষয়ে সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টে শুভেন্দুর তরফে স্থগিতাদেশের যে আর্জি জানানো হয়েছিল, তাও খারিজ করে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট৷ মেলেনি আদালতের রক্ষাকবচ৷ পরিস্থিতি যা, তাতে তদন্তের স্বার্থে রাজ্য পুলিশ যেকোনও মুহূর্তে গ্রেফতার করতে পারে শুভেন্দু অধিকারী এবং তাঁর ভাই সৌমেন্দু অধিকারীকে, আশঙ্কা পর্যবেক্ষক মহলের একাংশ৷ যদিও, এই আশঙ্কার কথা আগেই জানিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী স্বয়ং৷  বিধানসভায় দাঁড়িয়ে শুভেন্দু সাফ জানান, ‘‘আমাকে ভয় দেখিয়ে, পুলিশ দেখিয়ে লাভ নেই৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে দিন, নন্দীগ্রামে আমি তাঁকে হারিয়েছি৷ তাই কয়েক মাস আমাকে জেলে যেতে হবে৷ আমি সেই নির্দেশ আমি মেনে নেব৷ তিনি আমার থেকে বয়সে বড়, তাই বললাম৷’’

একই সঙ্গে সমবায় কেলেঙ্কারিতেও বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছে শাসকদল তৃণমূল৷ ২০০৯ সালে তমলুকের সাংসদ হওয়ার সময় থেকেই দুই মেদিনীপুরের একাধিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন শুভেন্দু৷ ইতিমধ্যেই তাঁর বিরুদ্ধে সমবায়ে বেনিয়মের অভিযোগ শুরু হয়েছে সরকারি পর্যায়ে তদন্ত৷ স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী এবিষয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন৷ তৃণমূলের দাপুটে নেতা তথা রাজ্যের মৎস্য মন্ত্রী অখিল গিরি দাবি করেছেন, ‘‘স্বর্ণযুগ নয়, কাঁথি কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের পরিচালন কমিটির মাথায় থেকে বিগত ১২ বছর ধরে অন্ধকার যুগ নামিয়ে এনেছে শুভেন্দু৷’’

স্বাভাবিকভাবেই ঘটনার পরম্পরা সামনে রেখে রাজনৈতিক মহলের অভিমত, যেভাবে একের পর এক অভিযোগ উঠছে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে, তাতে তাঁর গ্রেফতারির সম্ভবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷ শুভেন্দুর অবশ্য এবিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি৷ তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ শিবিরের দাবি, ‘এভাবে দাদার কন্ঠ রোধ করা যাবে না৷’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

15 + sixteen =