বীরভূমের সংগঠন এবার নিজেই দেখবেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী! অনুব্রত-হীন বীরভূম নিয়ে কতটা চিন্তিত তৃণমূল?

বোলপুর: বিরোধীদের অভিযোগ বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের অনুমতি ছাড়া ওই জেলায় গাছের একটি পাতাও নাকি মাটিতে পড়ে না। গোটা জেলার মানুষ স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার হারিয়েছেন অনুব্রতর ভয়ে। এমন অভিযোগ বহুদিন ধরেই করে আসছেন বিরোধীরা। সেই দোর্দণ্ডপ্রতাপ অনুব্রত গরু পাচার মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর দীর্ঘদিন ধরে জেলে রয়েছেন। এই অবস্থায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বীরভূম জেলার সাংগঠনিক দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
খোদ মুখ্যমন্ত্রী একটি জেলার সংগঠনের দায়িত্ব নিচ্ছেন এমন ঘটনা বাংলায় কবে ঘটেছে তা কেউ মনে করতে পারছেন না। তবে কি বীরভূম জেলা নিয়ে বেশ চিন্তায় রয়েছে তৃণমূল? তাই কি দলীয় নেতাকর্মীদের মনোবল বাড়াতেই মুখ্যমন্ত্রী এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন? এই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠছে।
পঞ্চায়েত নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। প্রধান বিরোধী দল বিজেপি রাজ্য জুড়ে সভা সমাবেশ করছে। বসে নেই শাসক দলও, তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব নিজেদের মতো করে জেলাওয়ারি মিটিং মিছিল করছেন। কিন্তু বীরভূমে দলের ক্যাপ্টেন এতদিন জেলে থাকায় বেশ মুষড়ে পড়েছেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা। পঞ্চায়েত নির্বাচনে কোন স্ট্র্যাটেজিতে দল লড়বে, কারা কোথায় প্রার্থী হবেন, এরপর সামনের বছর লোকসভা নির্বাচনে দল কীভাবে ময়দানে নামবে, ইত্যাদি খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত বীরভূম জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। কারণ অনুব্রত এতদিন নিজের হাতেই সবটা সামলাতেন। সেখানে কাউকে মাথা ঘামাতে হতো না। এই আবহের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী এটা স্পষ্ট বুঝেছেন অনুব্রত জেলে থাকায় বীরভূমে দ্বিতীয় কোনও যোগ্য নেতা নেই যার হাতে সংগঠনের ভার ছেড়ে দিয়ে তিনি নিশ্চিন্ত হতে পারেন। কারণ তাতে গোষ্ঠীকোন্দল বীরভূমে আরও বেড়ে যাবে বলে হয়ত মনে করেছেন তিনি। সেই কারণেই জেলা সংগঠনের দায়িত্ব রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হিসেবে হাতে তুলে নিয়েছেন তিনি।
গত বিধানসভা নির্বাচনে বীরভূমের ১১টি আসনের মধ্যে দশটিতেই জিতেছিল তৃণমূল। কিন্তু তা সত্ত্বেও ভোটের ফল বলছে জেলায় বিজেপির ব্যাপক ভোট বৃদ্ধি হয়েছিল। একাধিক আসনে তৃণমূলের সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর দেয় বিজেপি। তাই অনুব্রত যখন বীরভূম জুড়ে স্বমহিমায় রাজ করেছেন তখন বিজেপির এই উত্থান কিছুটা হলেও চিন্তায় ফেলেছে শাসক দলকে। সেখানে পঞ্চায়েত নির্বাচনে অনুব্রতর না থাকাটা যে তৃণমূলের মাইনাস পয়েন্ট হতে পারে সেটা সহজেই বোঝা যায়। যে জেলায় এতদিন বিরোধীরা দাঁত ফোটাতে পারেনি সেখানে পঞ্চায়েতে যদি তৃণমূলের ফল একটু হলেও খারাপ হয়, তার প্রভাব লোকসভা নির্বাচনে অবশ্যই পড়বে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করে। তাই এখন থেকে বীরভূম সংগঠনের হাল নিজের হাতে ধরে মমতা গোটা দলকে এই বার্তাই দিতে চাইছেন যে, অনুব্রত জেলে থাকলেও ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আর খোদ নেত্রী যখন দলের হাল ধরলেন তাতে কর্মীদের মনোবল যে বহু গুণে বেড়ে গেল সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।