কলকাতা: নাম না করে সরকারি কর্মী ও অনশনরত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় বার্তা দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ শনিবার ২১ জুলাই শহিদ দিবসের মঞ্চ থেকে মমতার ঘোষণা, কেন্দ্রীয় হারে বেতন চাইলে কেন্দ্রে চলে যাও। সেখানে চাকরি করো৷ কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের পর সোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে ছড়িয়েছে বিতর্ক৷ ২০১৯ সালে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারি কর্মীদের হুঁশিয়ারি ও ২০০৭ সালে ৭ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যের ‘পার্থক্য’ তুলে ধরে মমতাকে পাল্টাকে আক্রমণের পথে হাটতে শুরু করেছেন নেটিজেনদের একাংশ৷
২০০৭ সালে ৭ ফেব্রুয়ারি রানি রাসমণি রোডে পাশ্বশিক্ষকদের আন্দোলনে দাঁড়িয়ে মমতার দেওয়া প্রতিশ্রুতির পেপার কাটিং এখন সোশ্যাল দুনিয়ায় ভাইরাল৷ খুব সম্ভবত সংবাদ প্রতিদিনে প্রকাশিত পেপার কাটিংয়ে দেখা যাচ্ছে, ‘‘মমতার অভিযোগ, অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় এই রাজ্যের পার্শ্বশিক্ষকরা কম বেতন পান৷ এই বৈষম্যের জন্য সিপিএম রাজ্য সরকারকে দায়ী করে রানি রাসমণি রোডে পার্শ্বশিক্ষকদের সভায় মমতা বলেন, আর মাত্র কটা দিন৷ কয়েকটা মাস৷ একটু কষ্ট করুন৷ কোন প্ররোচনায় পা না দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যান৷ সিপিএম আপনাদের দাবি না মানলে ওরা যেদিন বাংলা থেকে যাবে, সেদিন তৃণমূল ক্ষমতায় এসে আপনাদের দাবি মিটাবে৷ মমতার বক্তব্য, পার্শ্ব শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি ও স্থায়ীকরণের দাবি যথাযথ৷ তারা এই আন্দোলনের পাশে রয়েছেন এবং থাকবেন৷ তাঁর কথায়, নির্বাচনের সময় সিপিএম নানা কায়দায় বেকারদের চাকরিদেয়৷ চুক্তিতে শ্রমিক নিয়োগের মতো৷ আর ভোটের পর তারা ভুলে যায়৷…. আন্দোলনকারী পার্শ্ব শিক্ষকদের প্রতি তার হুঁশিয়ারি, আমি আপনাদের এবং অন্য রাজ্য সরকারি কর্মীদের দাবি নিয়ে বলছি বলে ভোটের আগে সিপিএম দুই কিস্তিতে ভিক্ষা দেবে কিন্তু পুরোটা দেবে না আপনারা সেই ভিক্ষা ভুলবেন না৷’’ হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকজুড়ে ইতিমধ্যেই তা ছড়িয়ে পড়েছে হাতেহাতে৷ ভাইরাল হওয়া ওই বার্তার শেষে রেখা, ‘‘সেদিনের মমতা আজ বদলে গিয়েছেন!সদুত্তর দিয়ে বাধিত করবেন৷’’
রবিবার ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে নাম না করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এখন দেখছি কাজ নেই কর্ম নেই বসে আছে রাস্তায়। সবাইকে নাকি টাকা দাও। আর কেন্দ্রীয় সরকারের সমান মাইনে দাও। আমি বলি যারা কেন্দ্রীয় সরকারের সমান মাইনে চান তারা কেন্দ্রে চলে যান। দিল্লির চাকরি করুন আমার কোন আপত্তি নেই। আমি খুশি হব। রাজ্যে করলে রাজ্যের মত কেন্দ্র করলে কেন্দ্রের মত। কেন্দ্রের একটা সিস্টেম আছে রাজ্যের একটা সিস্টেম আছে।’’ এদিন দিন পে কমিশন ইস্যুতেও মুখ খোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বলেন, ‘‘পে কমিশন রিপোর্ট দিলে যথাসাধ্য চেষ্টা কবব৷ আমরাই দেশে সব থেকে বেশি পরিমাণ ডিএ দিয়ে থাকি৷’’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্য নিয়ে ইতিমধ্যেই কটাক্ষ করেছে বিজেপি ও বাম শিবির৷ মমতার মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেন বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ৷ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তাঁদের সরকার নাকি শিক্ষকদের সব থেকে বেশি সম্মান করেন৷ কিন্তু, আজ শিক্ষকরা তাঁদের দাবি নিয়ে অনশন করছেন৷ মুখ্যমন্ত্রীর সময় হল না তাঁদের সঙ্গে দেখা করে কথা বলার৷ আজ বললেন, কেন্দ্রের হারে বেতন চাইলে কেন্দ্রে চলে যান৷ এটাই কি শিক্ষকদের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর সম্মান?’’ বলেন, ‘‘কেন্দ্রের হারে বেতন পেতে আর দিল্লি যেতে হবে না৷ এখানেই দিল্লির সরকার গঠন হবে৷ তখন বেতন কেন্দ্রের হারেয় দেওয়া হবে৷’’
তৃণমূল নেত্রীর মন্তব্যে তীব্র বিরোধিতা করেন বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী৷ এদিন মমতাকে পাল্টা আক্রমণ করে বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আনতাবড়ি বকছেন৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রাথমিক শিক্ষকদের দাবিটা কী, তা বুঝতেই পারেননি৷ ওঁরা একবারও বলেননি, কেন্দ্রের হারে বেতন চাই৷ ওঁদের দাবি, যোগ্য অনুযায়ী বেতন কাঠামো পরিবর্তন করা৷ অন্য রাজ্যে যে হারে শিক্ষকরা বেতন পান, তা থেকে কম বেতন পান বাংলার শিক্ষকরা৷ মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য আমরা তীব্র ভাবে বিরোধিতা করছি৷’’