ঐক্য মঞ্চের সীমাবদ্ধতা ও সাফল্য

কিংকর অধিকারী: শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চের নেতৃত্বে আন্দোলনের সাফল্য থেকে অনেকের আকাঙ্ক্ষা বেড়ে গিয়েছে এই মঞ্চের প্রতি। এতো আন্দোলন এবং ৯০%-এর বেশি কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগ সত্ত্বেও যেভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অনিয়ম পরিলক্ষিত হচ্ছে সেই জায়গা থেকে স্বাভাবিকভাবে অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এই উদ্বেগ আমরা সবাই অনুভব করি। কিন্তু ঐক্য মঞ্চের নিজস্ব একটা চলার উদ্দেশ্য রয়েছে তা

f967cebae00e94197009f3b5fae1bc8c

ঐক্য মঞ্চের সীমাবদ্ধতা ও সাফল্য

ঐক্য মঞ্চের সীমাবদ্ধতা ও সাফল্য
কিংকর অধিকারী

কিংকর অধিকারী: শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চের নেতৃত্বে আন্দোলনের সাফল্য থেকে অনেকের আকাঙ্ক্ষা বেড়ে গিয়েছে এই মঞ্চের প্রতি। এতো আন্দোলন এবং ৯০%-এর বেশি কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগ সত্ত্বেও যেভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অনিয়ম পরিলক্ষিত হচ্ছে সেই জায়গা থেকে স্বাভাবিকভাবে অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এই উদ্বেগ আমরা সবাই অনুভব করি। কিন্তু ঐক্য মঞ্চের নিজস্ব একটা চলার উদ্দেশ্য রয়েছে তা কোনোভাবেই একটা রাজনৈতিক দলের মতো করে নয়। মনে রাখবেন, তরুণ শিক্ষক রাজকুমার রায়ের করুণ পরিণতির পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতার রাজপথে ২৪ শে মে বিশাল প্রতিবাদ মিছিল এবং তারপর আশুতোষ কলেজে গত ৭ ই জুন, ২০১৮, কনভেনশনের মধ্য দিয়ে দলমত নির্বিশেষে শিক্ষক শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে গড়ে উঠেছিল শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ।

এখনো আমাদের সংগঠনের বয়স এক বছর সম্পুর্ণ হয়নি। তা সত্ত্বেও আপনাদের সকলের শুভেচ্ছা ও সক্রিয় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আমরা যেভাবে তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমে অনেকটা দাবি আদায় করতে পেরেছি সেটা ইতিহাস হয়ে থাকবে। হ্যাঁ, নিশ্চয়ই ১০০% সফলতা অর্জন করা একটা আন্দোলনের মাধ্যমে সম্ভব নয়। তাই প্রতিটি প্রশ্ন বা বক্তব্য রাখার সময় মনে রাখতে হবে আমরা ঐক্যমঞ্চের এক এক জন শুভাকাঙ্ক্ষী বা সংগঠক। ঐক্য মঞ্চের মধ্যে থেকে কোন রাজনৈতিক দলের নেতা বা কর্মীর মতো করে আমাদের আচরণ বা মন্তব্য করা ঠিক নয়। তাতে অন্যদের কাছে আমাদের সম্পর্কে ভুল বার্তা যাবে।

ভোট কর্মী হিসেবে আমাদের মূল দাবি হলো জীবনের নিরাপত্তা, অনৈতিক কাজ না করে মর্যাদার সাথে মাথা উঁচু করে নিজেদের দায়িত্ব পালন করা এবং বুথের মধ্যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রক্ষা করা। প্রতিটি বিষয় নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত। এই প্রধান দাবিগুলির ছাড়াও ভোট কর্মী হিসেবে আমাদের অনেক দাবি রয়েছে। এর বাইরে রাজনৈতিক পরিসর বিরাট। সেখানে আমরা ঐক্য মঞ্চগত ভাবে কোন মন্তব্য বা ভূমিকা রাখতে পারি না। এই বিষয়টি সামগ্রিক রাষ্ট্রীয় পরিচালন ব্যবস্থা সঙ্গে জড়িত। আমরা তো কোন রাজনৈতিক দলের মতো ভূমিকা পালন করতে পারি না। সেই বিষয়টা মাথায় রেখে আমরা কর্মসূচি বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। আসলে যে দল যখন ক্ষমতায় আসে তখন তার ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে চায়। বিকল্প সুস্থ রাজনীতিই পারে তার মোকাবিলা করতে। রাজনীতির সেই বৃহৎ টানাপোড়েনের জায়গায় প্রবেশ করে তার মোকাবিলা করা ঐক্য মঞ্চের পক্ষে সম্ভব নয় বা উদ্দেশ্যও নয়।

অনেকের আবেদন, আমরা যেন সামগ্রিকভাবে ভোট রাজনীতির স্বচ্ছতা আনার জন্য সমস্ত রকমের পদক্ষেপ গ্রহণ করি। এমন কি কেউ কেউ দাবি জানিয়েছেন আমরা ঐক্য মঞ্চের পক্ষ থেকে যেন পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবীও জানাই। সুনিশ্চিত নিরাপত্তার দাবি নিয়ে যা যা করা দরকার আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করে চলেছি। এর বাইরে গিয়ে হঠাৎ করে ঐক্য মঞ্চের পক্ষ থেকে কোনো ভাবেই রাজনৈতিক দলগুলোর মত ময়দানে নেমে সমস্ত অনিয়ম বা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে দিতে পারি না। ভোট কর্মীর মধ্যে অনেকে যাঁরা সক্রিয় ভাবে কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থক বা কর্মী রয়েছেন তাঁদের অনেকেই ঐক্য মঞ্চকে সেই রকম ভূমিকায় দেখতে চান। তাই তাঁরা সরাসরি রাজনৈতিক বিষয়ের মধ্যে ঐক্যমঞ্চকে পাওয়ার চেষ্টা করছেন। আমরা তাঁদের উদ্দেশ্যে পরিষ্কারভাবে বলে দিতে চাই যে, আমরা কিন্তু এই মঞ্চের পক্ষ থেকে কোনভাবেই শাসক বা বিরোধীদলের পক্ষে বা বিপক্ষে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারি না। সে ভূমিকা রাজনৈতিক দল পালন করতে পারে, আমরা পারি না। তাই কোন রাজনৈতিক দল প্রসঙ্গে কোন কুৎসা বা প্রশংসা কোনোটাকেই আমরা উৎসাহ দেই না।

সকলের কাছে অনুরোধ ব্যক্তিগতভাবে আপনার হয়তো কোন রাজনৈতিক পছন্দ-অপছন্দ থাকতে পারে। কিন্তু মনে রাখবেন সেটি প্রকাশ করার জায়গা ঐক্যমঞ্চ নয়। ঐক্য মঞ্চের পরিসরের বাইরে গিয়ে অন্যত্র আপনি আপনার রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করলেন কি করলেন না তা আমাদের দেখবার বিষয় নয়। ফলে শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের পথ চলার ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আশা করি সবাই তা বুঝবেন। সেই গণ্ডির মধ্যে থেকে আমাদের যা কিছু করণীয় আমরা নিশ্চয়ই তা করবার চেষ্টা করব। ফলে ঐক্য মঞ্চের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলির মত ভূমিকা যাঁরা আশা করছেন তাঁরা মনে রাখবেন আমরা কিন্তু সেই পথের পথিক নয়। আমাদের লড়াই শাসকের রং বদলালেও একইভাবে জারি থাকবে।

ভবিষ্যতে যদি আমরা দেখি প্রতিটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগের মাধ্যমেও আমাদের নিরাপত্তার দিকটি যথাযথ ভাবে সুনিশ্চিত হচ্ছে না তবুও কি আমরা এই দাবিতে অনড় থাকবো? নিশ্চয়ই না। তখন আমাদের সুনিশ্চিত নিরাপত্তার দাবিতে আরো জোরালো আন্দোলনে যেতে হবে।

সাদাকে সাদা, কালো কে কালো বলার অঙ্গীকার নিয়েই পথ চলা শুরু করেছে শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ। আসুন দলমত ভুলে আমাদের সীমাবদ্ধতার কথাগুলি মাথায় রেখে বৃহৎ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার মাধ্যমে আমাদের অপূরিত দাবি গুলি আদায় করার অঙ্গীকার গ্রহণ করি।

কিংকর অধিকারী, যুগ্ম সম্পাদক, শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *