তৃণমূল নেতাদের বেলাগাম ভাষা কেন? দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করতেই এই পন্থা অবলম্বন?

তৃণমূল নেতাদের বেলাগাম ভাষা কেন? দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করতেই এই পন্থা অবলম্বন?

নিজস্ব প্রতিনিধি: দুর্নীতি ইস্যুতে রাজ্য রাজনীতিতে বেশ কিছুটা ব্যাকফুটে চলে গিয়েছে তৃণমূল। বিপুল সংখ্যক আসনে জিতে রাজ্যে ক্ষমতায় আসার এক বছরের মধ্যেই তৃণমূলকে যে এই অবস্থায় পড়তে হবে তা কেউ ভাবতেও পারেননি।‌ পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ার পর তৃণমূলের অস্বস্তি রাতারাতি বহু গুণে বেড়ে গিয়েছে। আর তখন থেকে দেখা যাচ্ছে বহু মানুষ প্রকাশ্যে পার্থ, অনুব্রতদের চোর চোর বলে আওয়াজ তুলেছেন। যা কিনা কয়েক মাস আগেও ভাবা যেত না। আর সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে তৃণমূল নেতারা পাল্টা কুরুচিকর ভাষা ব্যবহার করছেন বিরোধীদের উদ্দেশে।

সবচেয়ে বড় কথা দমদমের সাংসদ সৌগত রায় শুধু একজন প্রবীণ রাজনীতিক নন, তিনি একজন শিক্ষাবিদ। সেখানে তাঁর মুখে আজকাল যেসব কথা শোনা যাচ্ছে, তাতে অবাক সবাই। তৃণমূলের সমালোচকদের গায়ের চামড়া দিয়ে জুতো তৈরির নিদান দিয়েছেন তিনি। একজন শিক্ষাবিদের মুখে এ কথা শুনে স্তম্ভিত রাজ্যবাসী। সৌগত রায়ের পাশাপাশি কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মদন মিত্র-সহ অনেকেই আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে বিরোধীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় রাজ্যের মধ্যে অত্যন্ত মার্জিত নেতা বলেই পরিচিত। দলমত নির্বিশেষে সকলেই তাঁকে অসম্ভব শ্রদ্ধা করেন। কিন্তু তাঁর মুখেও এবার অন্যরকম শব্দ শোনা গেল। ‘চোর’ স্লোগান দেওয়া বিরোধীদের ঘুসি মারার নিদান দিলেন তিনি। আসন্ন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে খড়দহ বিধানসভার বিলকান্দা ২ অঞ্চলে প্রস্তুতি কর্মিসভায় যোগ দিয়ে রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী তথা খড়দহের বিধায়ক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গায়ে কোনও কালি নেই। কেউ যদি চোর-চোর বলে, আমার গায়ে লাগে। আর তখন মনে হয় মুখটা দেখি আর একটা ঘুসি মারি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জ করে কোনও লাভ নেই।”

সরব হয়েছেন কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্রও। বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ যা বলছেন তার জবাবে তাঁকে দুটো থাপ্পড় মারা উচিত বলে মন্তব্য করলেন কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র। এর আগে বিরোধীদের শায়েস্তা করতে লাঠি সাপ্লাই করার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছিলেন তিনি। সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে রাজ্যের নানা প্রান্তে তৃণমূল নেতারা অত্যন্ত আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে বিরোধীদের জবাব দিচ্ছেন।
এর কারণ একটাই, দলের কর্মী- সমর্থকদের মনোবল চাঙ্গা করা। আসলে পার্থ-অনুব্রত গ্রেফতার হওয়ার পর রাজ্যবাসীর মনে এমন একটা ধারণা রাতারাতি হয়েছে যে, যাতে তাঁরা মনে করছেন তৃণমূলের একটা বড় অংশ দুর্নীতিগ্রস্ত। তাই বিরোধীরা সার্বিকভাবে তৃণমূলকে চোর চোর বলে আক্রমণ করছেন। অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে দলের নিচুতলার কর্মীরা তার উপযুক্ত জবাব দিতে পারছেন না। রাজ্যে টানা তিনবার ক্ষমতায় আসার পরেও তাঁরা চুপচাপ হয়ে গিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে আগামী বছরের গোড়ার দিকেই পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার তৈরি হয়। গ্রাম বাংলায় যার গুরুত্ব অপরিসীম। পঞ্চায়েতে তৃণমূলের ফল খারাপ হলে তার বড় প্রভাব পড়বে লোকসভা নির্বাচনে। তাই এখন থেকেই ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের কর্মী-সমর্থকদের চাঙ্গা করতে তাই তাঁরা উত্তেজক ভাষা ব্যবহার করছেন, এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কিন্তু তাতে তৃণমূলের সমস্যা আরও বাড়ছে না তো? সাধারণ মানুষের মনে তৃণমূল সম্পর্কে ধারণা আরও খারাপ হচ্ছে না তো? সেই প্রসঙ্গ অবধারিত ভাবে উঠছে। তাই পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্যের ভাষা আগামী দিনে পরিবর্তিত হয় কিনা সেদিকে নজর থাকবে সবার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *