হাসপাতাল ফেলে দেয়, কুকুর খুবলে খায়! আর তদন্ত চলতে থাকে

হাসপাতাল ফেলে দেয়, কুকুর খুবলে খায়! আর তদন্ত চলতে থাকে

তপন মল্লিক চৌধুরী: হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটারে সদ্যোজাতকে খুবলে খেয়েছ কুকুর। ফারুকাবাদের একটি বেসরকারি হাসপাতালের ঘটনা। এর ঠিক কয়েক মিনিট আগে পৃথিবীর আলো দেখেছিল শিশুটি। শিশুর মাকে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করে বেডে দিতে গিয়েছিল নার্সরা। তার মধ্যেই ঘটে যায় এই মর্মান্তিক ঘটনা। চোখের পলকে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে সদ্যোজাত-র উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে কুকুরটি।

প্রায় নিভে যাওয় চিতার চারপাশে ঘুরছে কুকুরের দল। তাদের মধ্যে একটির মুখে আধপোড়া দেহাংশ। হায়দরাবাদের একটি শ্মশানে এমন এক দৃশ্য দেখা গেছে দিন কয়েক আগে। যে দেহটি ওরকম ভাবে কুকুরের মুখে ঘুরছিল, তা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত এক ব্যক্তির দেহ। সেটিই চিতা থেকে টেনে ছিঁড়ে খাচ্ছিল কুকুর।

ঘটনাগুলি এখানেই থেমে জায়  না। একের পর এক ঘটেই চলে। কোনও সরকারি হাসপাতালের গেটে পড়ে থেকে মারা যাচ্ছে করোনায় আক্রান্ত রোগী। কোথাও আবার রোগীর স্ট্রেচারই জুটছে না। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার নামে অনেক ঘটনাই ঘটে, তবে করোনার সময়ে আরও বেশি ঘটছে। যেন করোনা মহামারির সময় সরকারি হাসপাতালগুলির আসল চেহারা আরও বেশি করে ফুটে বেরচ্ছে।

সরকারি হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে এতদিনে কোটি কোটি অভিযোগ উঠেছে। সেগুলি সবই গা সওয়া হয়ে গেছে। অতএব কী করে হাসপাতাল চত্বরে খোলা জায়গায় করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃতদেহ ফেলে রাখতে পারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ- এই ঘটনা শোনা মাত্র সাধারণ মানুষের রক্ত হিম হয়ে গেলেও হাসপাতাল কতৃপক্ষের যে কিছুই আসবে যাবে না তা আর এমন কি নতুন কথা।

অন্ধ্রপ্রদেশের ওঙ্গোলের সরকারি হাসপাতাল কতৃপক্ষের বিরুদ্ধে রোগীর আত্মীয়েরা চরম গাফিলতির অভিযোগ করেছেন। করতেই পারেন। এর আগেও সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের গাফিলতি, স্বাস্থ্যকর্মীদের দুর্ব্যবহার ইত্যাদি নিয়ে কয়েক হাজার কোটি অভিযোগ জানিয়েছেন রোগীর বাড়ির লোক, সাধারণ মানুষ, যারা সধারণ অসুখ থেকে জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য পুরোপুরি সরকারি হাসপাতালের ওপর ভরসা করে থাকেন। কিন্তু তাদের অভিযোগ হাসপাতাল কতৃপক্ষের কান পর্যন্ত কি পৌঁছেছে?  তাই হাসপাতাল চত্বরে খোলা জায়গায় করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃতদেহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কি করে ফেলে রাখতে পারে এ নিয়ে প্রশ্ন তোলাটা কি হাসির খোরাক জোগানো নয়?

ঘটনাটি ঘটেছিল গত সোমবার। দু’দিন সবাই চুপচাপ। হটাত বুধবার থেকে তা নিয়ে হইচই শুরু হল। এক নিরাপত্তাকর্মী প্রথম দেখেন, হাসপাতালের একটি শেডের নিচে পড়ে আছে করোনা আক্রান্ত রোগীর দেহ আর কুকুরের দল খুবলে খাচ্ছে সেই দেহ। তিনিই প্রথম কুকুরের দলটিকে তাড়িয়ে দেন। কিন্তু ততক্ষণে সেই মৃত ব্যক্তির মুখের একাধিক জায়গা থেকে মাংস খুবলে নিয়েছে কুকুরগুলি। সেই নিরাপত্তারক্ষী মারফত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানতে পারেন  যে ওই ম্রিত দেহটি কান্তা রাও নামের যে ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন তাঁর। এরপর মৃতদেহ শেডের নিচে রেখে দিয়েছিল কেউ বা কারা।

ঘটনার তদন্তে জানা গিয়েছে যে কান্তা রাওকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভর্তিই নেয়নি।  ৫ অগাস্ট তাঁকে হাসপাতালে ভর্তির জন্য আনা হয়েছিল। কান্তা রাও মারা যান ১০ অগাস্ট। তা হলে কি পাঁচ দিন তিনি ওই শেডের নিচেই পড়ে ছিলেন! বিনা চিকিত্সাতেই কি তাঁর মৃত্যু? প্রশ্ন তো একটা নয়, একের পর এক প্রশ্ন উঠছে। আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গা ঝাড়তে চাইছে। যে রোগীকে হাসপাতাল ভর্তিই নিল না তার মৃত্যু কী করে হাসপাতাল চত্বরে তা জানার দায় হাসপাতালের নয়। যেন হাসপাতাল শুধুমাত্র ভরতি নেওয়া রোগীর জীবনের দায় নিয়ে থাকে।

আরও জোরদার প্রশ্ন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আনা হয়েছিল কান্তা রাওকে। কিন্তু, হাসপাতাল তাঁকে কেন ভর্তি নেয়নি, কেন কোভিড আক্রান্ত একজন রোগীকে পাঁচ দিন বিনা চিকিত্‍‌সায় শেডের মধ্যে কাটাতে হল, তার উত্তর হল তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অনন্ত তদন্ত যে চলছে সে কথা ঠিক কিন্তু তারপর?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *