কলকাতা: গোটা দেশজুড়ে উঠেছে সমালোচনার ঝড়৷ তুঙ্গে উঠেছে রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুড়ি পালা৷ বাঙালির আবেগে কালী ছিটিয়ে ভাঙা হয়েছে বিদ্যাসাগরের মূর্তি৷ সৌজন্যে তৃণমূল-বিজেপির সংঘর্ষ৷ শিক্ষামহল থেকে চলচ্চিত্র জগৎ থেকেও এসেছে তুমুল সমালোচনা৷ পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে ভাঙা মূর্তির পরিবর্তে পঞ্চধাতুর বিদ্যাসাগরের মূর্তি গড়ার মোদির প্রস্তাব আগেই পত্রপাঠ উড়িয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তির পর এবার ভাঙা মূর্তি বদলে রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর নতুন মূর্তি গড়বে বলে ঘোষণা করলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷
আজ, বেহালায় সাংবাদিক বৈঠক করে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়ে দেন, ‘‘রাজ্য সরকারের টাকায় বিদ্যাসাগর কলেজে ভাঙা মূর্তি সরিয়ে নতুন করে মূর্তি গড়বে শিক্ষা দপ্তর৷ একই সঙ্গে বিদ্যাসাগরের নামে সংগ্রহ শালা তৈরি হবে৷ মূর্তি ভাঙার ঘটনায় ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ৷ গেরুয়া উত্তরীয় পরে যারা মূর্তি ভাঙল তাঁদের ক্ষমা করা হবে না৷ ’’
এর আগেই মথুরাপুরের তৃণমূলের জনসভা থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, ‘‘মূর্তি ভাঙার পর আজ বলছেন বিদ্যাসাগরের পঞ্চধাতুর মূর্তি গড়ে দেবেন৷ ছাই নেব৷ মূর্তি ভাঙলে, ইতিহাস নষ্ট করলে, ঐতিহ্য ধ্বংস করলে, এখন বলছে মূর্তি করে দেবে৷ বাংলার টাকা আছে৷ আমরাও করে দিতে পারি৷ ঐতিহ্য ফিরিয়ে দিতে পারবে মোদি বাবু? দয়ার দরকার নেই বাংলার৷ আমরা নিজেরাই মূর্তি বানিয়ে নেব৷ এই ঘটনা ঘটানোর জন্য মোদির কয়েক লক্ষ বার কান ধরে ওঠবস করা উচিত৷’’
বৃহস্পতিবার সকালে উত্তর প্রদেশের জনসভা থেকে বাংলার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন মোদি৷ সাফ জানিয়ে দেন, বিদ্যাসাগরের পঞ্চধাতুর মূর্তি বানানো হবে৷ বিদ্যাসাগর কলেজের একই জায়গায় ওই মূর্তি বানানো হবে বলেও আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী৷ বলেন, ‘‘যেভাবে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙচুর করা হয়েছে, তাতে আমি মর্মাহত৷ আমি আপনাদের বলছি, বিদ্যাসাগরের ভাঙা মূর্তি সরিয়ে ওখানে পঞ্চধাতুর মূর্তি দেওয়া হবে৷’’ মমতাকে আক্রমণ করে মোদি বলেন, ‘‘আজ আমি বাংলায় যাব৷ দেখি ওখানে আমার র়্যালি করতে দেয় কি না৷ কারণ ওখানে কপ্টর নামতে দেওয়া হয় না৷’’
অমিত শাহের রোড শো ঘিরে গোলমালের জেরে একদল দুষ্কৃতী বিদ্যাসাগর কলেজে ঢুকে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙচুর করে৷ কিন্তু সেই দুষ্কৃতীরা কারা? তা চিহ্নিত করতে গিয়ে শুরুতেই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে পুলিশকে৷ কারণ, কিছু দিন ধরেই কলেজের সিসি ক্যামেরা অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে৷ কলেজের শিক্ষকেরাই বিষয়টি এ দিন স্বীকার করে নেন৷ তাঁরা জানান, কিছু দিন ধরেই কলেজের ক্যামেরার হার্ড ডিস্ক খারাপ থাকায় রেকর্ডিং বন্ধ৷ ফলে মঙ্গলবারের ওই তাণ্ডবের ঘটনা সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েনি৷ যার জন্য পুলিশ ও কলেজ কর্তৃপক্ষ, দু’তরফের কাছেই ভিডিও ফুটেজ বলতে এখন ভরসা বৈদ্যুতিন মাধ্যমের ছবি৷