নয়াদিল্লি: নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতা নিয়ে চাপের মুখে এই আইনের বৈধতা বা প্রয়োজনীয়তা নিয়ে জনসাধারণকে আশ্বস্ত করার একের পর এক কৌশল প্রয়োগ করে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী-সহ গেরুয়া শিবিরের সমস্ত শীর্ষস্থানীয় নেতা মন্ত্রীরা৷ তার মধ্যেই সুকৌশলে নাগরিকপঞ্জি পুনর্নবীকরণ অর্থাৎ এনপিআর আপডেট করার দিনক্ষণও ঠিক করে ফেলেছেন ৷ যাকে এন আর সি-র প্রাথমিক পদক্ষেপ বলেই উল্লেখ করছে বিরোধীরা৷ এই সমস্ত বিষয়ে জনগণের বিভ্রান্তি দূর করতে বঙ্গবিজেপি এখন লিফলেট পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে মানুষের ঘরে ঘরে৷ কিন্তু এসবের মধ্যেই ফের স্ববিরোধী বক্তব্য৷
একটি সংবাদমাধ্যমে এনআরসি, এনপিআর সংক্রান্ত প্রশ্নোত্তরে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী শিব শংকর প্রসাদ বলেছেন, নাগরিকপঞ্জি (পুনর্নবীকরণ এনটিআর)র ক্ষেত্রে নাগরিকত্ব সংশোধনী (এনআরসি) সংক্রান্ত তথ্য প্রয়োজন 'হতেও পারে নাও হতে পারে'৷
এনআরসি নিয়ে দেশের সাম্প্রতিক প্রতিবাদের ঝড় এখনো থামেনি৷ বিরোধীরা তো আছেই, সঙ্গে খোদ বিজেপি নেতৃত্বাধীন জেডি(ইউ)-র নেতৃত্বে বিহার সহ দেশের বেশিরভাগ রাজ্য সরকার দেশব্যাপী এনআরসি বাস্তবায়নের বিরোধিতা করেছে৷ তারমধ্যেই এনপিআর আবারও নতুন করে মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশের মানুষের কাছে৷ কিন্তু অপ্রতিরোধ্য শাসকশিবির উঠে পড়ে লেগেছে মানুষকে ভুল-ঠিক বোঝাতে৷ সেই প্রচেষ্টায় এবার কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেই প্রথম দিন থেকে বারবার বোঝাতে চাইছেন এনআরসি এবং এনপিআর দুটো সম্পূর্ণ আলাদা৷ কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীও একই কথা বলছেন৷
কিন্তু সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি যা বললেন তা শুধু স্ববিরোধীই নয়, একেবারে হাঁড়ির খবর৷ তার বক্তব্য, এনপিআর সংক্রান্ত তথ্য নাগরিকত্ব সংশোধনী (এনআরসি)-র ক্ষেত্রে প্রয়োজন হতেও পারে আবার নাও হতে পারে৷ তিনি বলেন, ভোটার কার্ড, পাসপোর্ট, প্যানকার্ডে যখন সমস্ত তথ্যই আছে৷ তখন নগরপঞ্জির তথ্য দিতে অসুবিধা কোথায়? এনআরসি প্রসঙ্গে বলেন, সমস্ত আইনি প্রক্রিয়া মেনে ধাপে ধাপে এবং সমস্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করে তবেই এনআরসি হবে৷ এর মধ্যে কোনো লুকোচুরিও থাকবেনা, যা হবে জনসমক্ষেই হবে৷ তৃনমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো সাফ জানিয়ে দিয়েছেন এনপিআর হল এনআরসি-র প্রাথমিক পর্যায়৷
এছাড়াও আইনমন্ত্রী হয়তো ভুলে যাচ্ছেন, নাগরিকত্ব নিয়ে কিছুদিন আগেই খোদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন 'আধার কার্ড নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়'৷ আবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফ থেকেও ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হয়, আধার কার্ড,ভোটার কার্ড পাসপোর্ট, এগুলো নাগরিকত্ব প্রমাণ করে না৷ নাগরিকত্ব আইনের ১৪এ ধারায় নাগরিক পরিচয়পত্র তথা কার্ডের উল্লেখ রয়েছে৷ আর সেই কার্ডটি ইস্যু করা হবে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনপিআর) তথা ন্যাশনাল রেজিস্টার অব ইন্ডিয়ান সিটিজেনস চূড়ান্ত হওয়ার পররেই ৷ এরপর এনআরসিতে যাঁদের নাম থাকবে তাঁরাই কেবল ওই নাগরিক পরিচয়পত্র পাবেন৷ তাহলে জনগণনার যে সহজ ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে তার কি আদৌ সহজ?
কারণ, প্রশ্ন উঠতেই যে তাহলে নাগরিকপঞ্জি পুনর্নবীকরণের সময় এদেশের স্বাভাবিক বাসিন্দা গণনা করতেগিয়ে সরকারি প্রতিনিধিরা বাড়িতে এসে যে প্রশ্নগুলি জানতে চাইবেন সেই তথ্য নিয়ে যদি কোনো ধন্দ্ব তৈরি হয় তাহলেতো ঘুরেফিরে সেই নাগরিকত্বেরই প্রশ্ন৷ আর নাগরিক বৈধতা প্রমাণ করতে না পারলে অবশেষে সিএএ-র আওতায় পড়তেই হবে সেই বাসিন্দাকে৷ সুতরাং প্রধানমন্ত্রী ও তার অনুগামীরা এনআরসি, সিএএ এবং এনপিআর বিষয়গুলিকে যতই সহজ-সরল করে বোঝাতে চাননা কেন আসলে তা দিনের পর দিন জটিলতাই বাড়িয়েই চলেছে৷