তপন মল্লিক চৌধুরী : আজ বৃহস্পতিবার দিল্লিতে এ রাজ্যের আসন্ন বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতি নিয়েবিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি মুকুল রায় এবং রাজ্যের আরও কয়েক জন নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন অমিত শাহ৷ বৈঠকে ডাক পাননি রাহুল সিনহা৷ দলীয় সূত্রের খবর, বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলী থেকে সদ্য বাদ পড়া রাহুলবাবুর ক্ষোভ মেটাতে মেননেরা উদ্যোগী হলেও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিষয়টি নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামাচ্ছেন না৷ তবে বৈঠকে শাহ ছাড়া কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে থাকবেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়, অরবিন্দ মেনন, শিবপ্রকাশ। থাকার কথা বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডারও।
দিল্লিতে আজ বৈঠকে শাহের নিশানা পশ্চিমবঙ্গ। তার আগে অক্টোবর থেকে বিহারের নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পরবেন আমিত শাহ নড্ডারা। আগামী এক মাস মূলত বিহার নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন তাঁরা। সেই এক মাস রাজ্যে দিলীপ-মুকুলেরা কী ভাবে এগোবেন, বিশেষত এ রাজ্যের আসন্ন বিধানসভা ভোটের আগে কি হবে বিজেপির কৌশল তা ঠিক করতেই কালকের বৈঠক। বেশ কিছুকাল ধরেই দিলীপ ঘোষ আর মুকুল রায় শিবিরের রেষারেষি চলছে বিজেপিতে। অমিত শাহ, দিলীপ ঘোষ ও মুকুল রায়ের সেই মনভাব সরিয়ে একজোট হয়ে কাজ করার উপরে জোর দিতে চান।
দিল্লির রাজনৈতিক শিবিরের জল্পনাবাংলার ভোটের জন্য পশ্চিমবঙ্গ থেকে এক জন সাংসদকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী করতে পারেন মোদী- শাহেরা। তিনি মুকুল না দিলীপ রাজ্য রাজনীতিতে এনিয়ে চর্চা চলছে। ঠিক সেই সময়েই মুকুল রায়কেসর্বভারতীয় সহ সভাপতি পদ দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে,মুকুলকে এ রাজ্যের বিধানসভা ভোটে কাজে লাগানোর কথা মাথায় রেখেই তাঁকে ওই পদ দেওয়া হয়েছে।এ রাজ্যের বিধানসভা ভোটে ভাল ফসল ঘরে তুলতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং মুকুল রায়ের সমন্বয়ের ওপর ভরসা রাখছেন।
বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি হলেও এখনও পশ্চিমবঙ্গে দলের কোনও দায়িত্ব পাননি মুকুল রায়। সাধারণত বিজেপির সর্বভারতীয় নেতারা নিজের রাজ্যে দায়িত্ব পান না। সে ক্ষেত্রে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দিলীপ রায়ের সাংগঠনিক দক্ষতা আর মুকুল রায়েরভোট কৌশলকে এ রাজ্যের বিধানসভা ভোটে কাজে লাগাতে চাইছে। সে কারণে বিধানসভা ভোট পরিচালনার দায়িত্ব থেকে দিলীপ রায় এবং মুকুল রায়কে আলাদা না রেখে ভোটের ময়দানে একসঙ্গে রাখার কথা ভাবছে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
প্রসঙ্গত, মুকুল রায়ের সরকারি ঠিকানা এখন দিল্লি। সেখানকার ভোটার তালিকাতেই তাঁর নাম রয়েছে। সে দিক থেকে সরকারি ভাবে মুকুল রায় এখন দিল্লির বাসিন্দা।তবে বিজেপির সর্বভারতীয় কোনও নেতাকে নিজের রাজ্যে দায়িত্ব না দেওয়ার সাংগঠনিক রীতিতেও মুকুলের নিজের রাজ্যের বিধানসভা ভোটের দায়িত্ব পাওয়া আটকায় না।
কিন্তু কীভাবে মুকল-দিলীপকে একসঙ্গে রেখে কাজ করানো যায়, এ ক্ষেত্রে কি কৌশল নেন অমিত শাহসেটাই দেখার। মুকুল-দিলীপ দ্বন্দ্ব রুখতে দুজনকেই এক খাতে বইয়ে নাকি ভিন্ন পথে চালিত করে তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।কালকের বৈঠকে সবারই নজর রয়েছে মুকুল-দিলীপ সমীকরণের দিকে। একজন এই মুহূর্তে বিজেপির সর্বভারতীয় সহসভাপতি, অন্যজন রাজ্য বিজেপির সভাপতি।আর দুজনেই এই বাংলার। তবে মুকুল যে তাঁর নিজের দায়িত্ব পাবেন, তা একরকম ঠিক হয়েই আছে তবেতাঁর দল তাঁকে কীভাবে ব্যবহার করবে এবং সেই সমীকরণ কি সেই ছক কষতেই বিজেপি নেতৃত্ব বৈঠকে বসছেন।
রাজনৈতিক মহলে মনে করছে, মুকুল রায়কে বিজেপির সহসভাপতি করা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ভোটকে সামনে রেখেই। তবে রাজ্য বিজেপিরই একটা অংশ মনে করছে, প্রত্যেক সর্বভারতীয় সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বা সম্পাদককেই একটা না একটা রাজ্যের ভার দেওয়া হয়, সেটা নিজের রাজ্য হয় না। মুকুল রায়কেও অন্য কোনও রাজ্যে দলীয় সংগঠনের ভার দেওয়া হতে পারে। ঠিক যেমন কৈলাশ বিজয়বর্গীয় এ রাজ্যের দায়িত্বে। তবে এই যুক্তি ধোপে টিকছে না। কেননা মুকুলকে বাংলায় ব্যবহার না করতে পারলে, তাঁকে পদ দেওয়া হত না। আসন্ন বিধানসভা ভোটে মুকুলের উপরই বেশি দায়িত্ব বর্তাবে। আর নিয়মের জাঁতাকলেও তিনি পড়বেন না। কারণ খাতায় কলমে তিনি বাংলায় বহিরাগত। কেননা তিনি দিল্লির ভোটার। ফলে বাংলার দায়িত্ব পেতে তাঁর কোনও সমস্যা হবে না।