নয়াদিল্লি: ২৪ ঘণ্টার অপেক্ষা৷ এরপরই শুরু হচ্ছে বিশ্বের গণতন্ত্রণের উৎসব৷ কিন্তু, এই উৎসবে সব থেকে লাভবনা কারা? যুগ-যুগ ধরে এই একটিই প্রশ্ন ঘুরছে দেশের রাজনীতির আকাশে৷ কেননা, প্রশ্ন ওঠাটা খুবই স্বাভাবিক৷ যে দেশের জনতার গড় আয় ৩২ টাকারও কম, সেই দেশের জনতার নেতার আয় কোটি কোটি টাকা! চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠেছে অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস বা এডিআরের সমীক্ষায়৷
এডিআরের তথ্য বলছে, গত লোকসভা ভোটে জয়ী ৫২১ জন সদস্যের হলফনামা পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে ৮৩ শতাংশ সাংসদই কোটিপতি! ৩৩ শতাংশ সাংসদের বিরুদ্ধে রয়েছে গুরুতর ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ৷ লোকসভা বা বিধানসভা ভোটে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীরা যে হলফনামা জমা দেন, তা বিচার করেই ওই সংস্থা তাদের রিপোর্ট তৈরি করে জানিয়েছে, ২০১৪ সালের ভোটে যাঁরা জয়ী হয়েছেন তাঁদের মধ্যে ৫২১ জনের হলফনামা খুঁটিয়ে দেখে সংস্থাটি জানিয়েছে, শাসক দল বিজেপিতেই কোটিপতি সদস্যের সংখ্যা সর্বাধিক৷ ফৌজদারি মামলাও সবচেয়ে বেশি শাসক দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে৷
এডিআরের হিসেবে দেখা যাচ্ছে, ৫২১ জনের মধ্যে কোটিপতি সাংসদ ৪৩০ জন। এঁদের মধ্যে বিজেপির সদস্য হলেন ২২৭, কংগ্রেসের ৩৭, তামিলনাড়ুর এআইএডিএমকে দলের ২৯ এবং বাকিরা অন্য দলের কিংবা নির্দল সদস্য৷ এই সদস্যদের মধ্যে ৩২ জন রয়েছেন যাঁদের সম্পত্তির পরিমাণ ৫০ কোটি টাকারও বেশি৷ লোকসভার মোট সদস্য ৫৪৩ জন৷ এডিআরের হিসেব অনুযায়ী সদস্যদের গড় সম্পত্তি দাঁড়াচ্ছে ১৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা। ওই ৫২১ সদস্যের মধ্যে মাত্র দু’জন রয়েছেন যাঁদের সম্পত্তির মূল্য ৫ লাখেরও কম৷
গোটা দেশের কৃষিনির্ভর পরিবারগুলির বার্ষিক আয়ের সর্বশেষ হিসেব পাওয়া যায় ২০১৩-র ৭০তম জাতীয় নমুনা সমীক্ষায় (এনএসএস)। সেই সমীক্ষা অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের ৬৩ লক্ষ কৃষক পরিবার সমূহের ২০১৩ তে গোটা বছরে কৃষি থেকে আয় হয়েছিল গড়ে মাত্র ১১ হাজার টাকা, যা ছিল দেশের ১৮টি বড় রাজ্যের মধ্যে সর্বনিম্ন। সারা ভারতে এই গড় আয় ছিল ৩৭ হাজার টাকা।
অক্সফামের সমীক্ষা বলছে, মোদির আমলে গত একবছরে কোটিপোতিদের নামের তালিকায় যোগ হয়েছে ১৭টি নাম৷ দেশের কোটিপোতিদের সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ৪,৮৯১ বিলিয়ন৷ ১৫,৭৭৮ বিলিয়ন থেকে বেড়ে হয়েছে ২০,৬৭৬ বিলিয়ন (ভারতীয় টাকা৷ ২০০০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত অতিধনী বা বিলিওনারের সংখ্যা ৯ থেকে বেড়ে হয়েছে ১০১৷ এই ১০১ জনের মধ্যে ৫৫ জনের বয়স ৬৫ বছরের উর্দ্ধে। তাদের মোট সম্পদ ১০,৫৪৪ বিলিয়ন৷ বস্ত্র শিল্পে গড়ে ২ জন শ্রমিকের মধ্যে একজন নূন্যতম বেতনের চেয়েও কম মজুরি পান৷ ইন্ডিয়ান বস্ত্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ধনী কর্মকর্তাদের একবছরের সমান আয় করতে একজন শ্রমিকের লাগবে ৯৪১ বছর৷ একজন নূন্যতম মজুরি পাওয়া শ্রমিক এক বছরে যা আয় করেন, সেই পরিমাণ আয় করতে বস্ত্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ধনী কর্মকর্তাদের মাত্র ১৭.৫ দিন সময় লাগে৷
ভারতের ১০ শতাংশ অতিধনীর হাতে দেশের ৭৭ শতাংশ সম্পদ৷ ৬০ শতাংশ জনসংখ্যার হাতে রয়েছে মাত্র ৪.৮ শতাংশ জাতীয় সম্পদ৷ আবার দেশের মাত্র ৯ জন ধনীর সম্পত্তির পরিমাণই দেশের ৫০ শতাংশ জনসংখ্যার মোট সম্পদের সমান৷ অতি ধনীদের গত বছররে আয় হয়েছে প্রায় ৭৩ শতাংশ৷ অথচ ৬৭ কোটি গরীবের মোট সম্পদ বেড়েছে মাত্র ১ শতাংশ৷ গত এক বছরে টোটাল এলিট শ্রেণির মোট সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ২০,৯১৩ বিলিয়ন৷ যা প্রায় ২০১৭-১৮ সালের কেন্দ্রীয় বাজেটের সমান৷ অতি ধনীদের প্রায় ৩৭ শতাংশই উত্তারাধিকার সূত্রে ধনী৷ দেশের মোট সম্পদের ৫১ শতাংশই তাদের হাতে৷ মাত্র ৪ জন মহিলা বিলিওনার রয়েছেন ভারতে৷ তাদের মধ্যে তিন জনই উত্তারাধিকার সূত্রেই ধনী৷ এই হিসেবে চললে ২০১৮-২০২২ সালে ভারতে আরও ৭০ জন বিলিওনারের নাম যোগ হবে অতি ধনী তালিকায়৷