বিজেপি প্রার্থীদের নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে গৌড়বঙ্গে

রায়গঞ্জ: সবে ১২ মার্চ দিল্লি গিয়ে বিজেপিতে যোগ দেন খগেন মুর্মু। তার পর থেকেই জেলায় জল্পনা ছিল, তাঁকে টিকিট দিতে পারে বিজেপি। দেখা গেল, জল্পনার ভিত্তি রয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে বিজেপি, তাতে উত্তর মালদহ কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করা হয়েছে খগেনকে। পাশাপাশি মালদহ দক্ষিণ কেন্দ্র থেকে দলের প্রার্থী হলেন শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী।

e1f9cfbf640907469b10109f4c4ea0c2

বিজেপি প্রার্থীদের নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে গৌড়বঙ্গে

রায়গঞ্জ: সবে ১২ মার্চ দিল্লি গিয়ে বিজেপিতে যোগ দেন খগেন মুর্মু। তার পর থেকেই জেলায় জল্পনা ছিল, তাঁকে টিকিট দিতে পারে বিজেপি। দেখা গেল, জল্পনার ভিত্তি রয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে বিজেপি, তাতে উত্তর মালদহ কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করা হয়েছে খগেনকে। পাশাপাশি মালদহ দক্ষিণ কেন্দ্র থেকে দলের প্রার্থী হলেন শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী। খগেনের বাছাই নিয়ে এর মধ্যেই দলে ক্ষোভ বাড়ছে।

খগেনকে নিয়ে ফ্লেক্স পড়তে শুরু করে গত কয়েক দিন ধরেই। সেখানে তাঁকে জমি মাফিয়া বলে উল্লেখ করা হয় বলে অভিযোগ। হবিবপুর থেকে তিন বারের সিপিএম বিধায়ক খগেন। গত বারে উত্তর মালদহ কেন্দ্র থেকে মৌসমের বিরুদ্ধে লড়ে হেরে যান তিনি।

কেন সিপিএম থেকে আসা খগেনের উপরে আস্থা রাখলেন দলীয় নেতৃত্ব? বিজেপি নেতাদের একাংশের দাবি, উত্তর মালদহে এ বারে দলের ভাল ফল করার সম্ভাবনা রয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফলেই তার ইঙ্গিত মিলেছে। এমন অবস্থায় খগেনকে দাঁড় করানো যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, ১৯৯৩ সাল থেকে তিনি জনপ্রতিনিধি। ১৯৯৩, ১৯৯৮ সালে জেলা পরিষদের সদস্য। ২০০৬ সালে হবিবপুর বিধানসভা থেকে জয়ী হন তিনি। তার পর টানা বিধায়ক।

ফলে খগেন ভোটে লড়াই করলে জোর টক্কর দেওয়া যাবে বলে মত বিজেপি নেতাদের একাংশের। খগেন বলেন, “দলে কোনও ক্ষোভ নেই। মানুষ বিজেপির জন্য মুখিয়ে রয়েছেন। জেলায় ফিরে সকলকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করব।”  খগেন যখন দলে এলেন, তখন রাজ্য নেতৃত্বের কাছে চিঠি পাঠিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন জেলা নেতৃত্ব। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে এখনও জেলায় ফেরেননি খগেন মুর্মু।

জেলা নেতারা বলছেন, দলের সর্ব ভারতীয় নেতৃত্ব যখন প্রার্থী নির্বাচন করেছেন, তখন তাঁকেই মেনে নিতে হবে সকলকে। একই কথা মালদহ দক্ষিণের ক্ষেত্রেও খাটে। সেখানেও ক্ষোভ বিক্ষোভ রয়েছে। অনেকেই শ্রীরূপাকে মেনে নিতে পারেননি। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহদের বাছাই দলের সকলকেই মেনে নিতে হবে। অন্যদিকে, রায়গঞ্জঃ রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রের জন্য ৪০ জনের নাম রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পাঠায় জেলা। কিন্তু তাঁদের কাউকেই প্রার্থী করেননি দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। দলের জেলা নেতাদের অনেকেরই বক্তব্য, বরং যাঁকে প্রার্থী করা হয়েছে, সেই দেবশ্রী চৌধুরী এখন কলকাতায় থাকেন। জেলার কাউকে না করে কেন ‘বহিরাগত’ দেবশ্রীকে প্রার্থী করা হল, তাই নিয়ে দলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে।

বিজেপির উত্তর দিনাজপুর জেলা সভাপতি নির্মল দামের দাবি, ‘‘জেলায় দলের নেতা-কর্মীরা জেলার বাসিন্দা যোগ্য কাউকে রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দলের শীর্ষ নেতৃত্ব দেবশ্রীকে রায়গঞ্জের প্রার্থী করেছেন। তাই দলের কিছু নেতা-কর্মীর মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ ছড়িয়েছে।’’

নির্মলের কথায়, দল যাঁকে প্রার্থী করেছে, তাঁকে মেনে নিয়ে তাঁর সমর্থনে রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভা এলাকার বিজেপির নেতা ও কর্মীদের নির্বাচনী প্রচারে নামার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দেবশ্রীর আদিবাড়ি বালুরঘাটে। তিনি বালুরঘাটের খাদিমপুর হাইস্কুল ও বালুরঘাট কলেজে পড়াশোনা করেন। তবে গত প্রায় দু’দশক তিনি কলকাতার বাসিন্দা। অতীতে তিনি এবিভিপি ও যুব মোর্চার রাজ্য নেত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন। এখন দলের একমাত্র মহিলা রাজ্য সাধারণ সম্পাদক। এর আগে ২০০৬ সালে বালুরঘাট বিধানসভা কেন্দ্র ও ২০১৪ সালে দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে লড়েও হেরে যান তিনি।

বিজেপির জেলা নেতাদের একাংশ জানিয়েছেন, যে ৪০ জনের নাম প্রস্তাবিত প্রার্থী হিসেবে পাঠানো হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে ছিলেন বিজেপির প্রাক্তন জেলা সভাপতি শঙ্কর চক্রবর্তী, কয়েক মাস আগে মহিলা কংগ্রেসের জেলা সভানেত্রীর পদ ছেড়ে দলে যোগ দেওয়া শিবানী মজুমদার-সহ জেলায় দলের বিভিন্ন ব্লকের নেতা সৌম্যরূপ মণ্ডল, অসীম মণ্ডল, মিহির রায়, প্রবীর ঘোষ প্রমুখ।

দলের জেলা ও ব্লক স্তরের একাধিক নেতার কথায়, জেলাতেই প্রার্থী হওয়ার যোগ্য লোক ছিলেন। কিন্তু তাঁদের ফেলে ‘বহিরাগত’ দেবশ্রীকে প্রার্থী করা হয়েছে। তাতে ক্ষুব্ধ অনেকেরই প্রশ্ন, প্রার্থী হওয়ার মতো জেলায় কি যোগ্য কোনও নেতানেত্রী নেই? জেলা নেতাদের একাংশের দাবি, দেবশ্রী এ বছর বালুরঘাট থেকে প্রার্থী হতে চান। কিন্তু সুকান্ত মজুমদারকে সেখানে প্রার্থী করা হয়। তখন দলের রাজ্য নেতৃত্ব দেবশ্রীকে রায়গঞ্জে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নেন। গত বছর দাড়িভিট কাণ্ডের পর ইসলামপুর ও রায়গঞ্জে বিজেপির একাধিক আন্দোলনে যোগ দিয়ে জেলায় দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে পরিচিতি পান দেবশ্রী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *