কলকাতা: ২৬ বছর আগের কথা৷ সালটা ছিল ১৯৯৩, ২১ জুলাই৷ পশ্চিমবঙ্গ যুব কংগ্রেসের তৎকালীন সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে ঐতিহাসিক যুব সমাবেশ হয়েছিল৷ ছিল যুব কংগ্রেসের কর্মসূচি৷ দাবি ছিল ভোটে ভোটার পরিচয়পত্রকেই একমাত্র প্রামাণ্য হিসেবে গণ্য করা হোক৷ এই দাবিতে সারা রাজ্যের যুব সম্প্রদায়ের সম্প্রদায় শামিল হয়েছিল মমতার মিছিলে শহরের৷ এবার ২০১৯-এ দাঁড়িয়ে ইভিএমের বদলে ব্যালট ফেরানোর ডাক তৃণমূল নেত্রীর৷
’৯৩-এর ২১ জুলাই মমতার ডাকে পাঁচটি পয়েন্টে জমায়েত হয়৷ যেখানে ছিল পুলিশের ব্যারিকেড৷ টি বোর্ডের সামনে বিরাট পুলিশ বাহিনী৷ যুব মিছিলের গতি রোধ করতে শুরু করে পুলিশ৷ যেখান থেকে রাইটার্স বিল্ডিং৷ ওপর মহলের নির্দেশে পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ করে৷ যাতে কেউ রাইডার্সের আশেপাশে পৌঁছাতে না পারে৷ কিন্তু লাগাতার কাঁদানে গ্যাসের শেলকে তুচ্ছ করে দীপ্ত মিছিল এগিয়ে যেতে থাকে নির্দিষ্ট মুখে৷ যুব কংগ্রেসের নেতৃত্বে নির্দেশ অনুযায়ী পুলিশের প্রভাব ও গ্যাস প্রয়োগ সত্ত্বেও মিছিল ছিল শান্তিপূর্ণ৷ পাল্টা হিংসার লেশমাত্র ছিল না৷ নেত্রী আগাগোড়াই সক্রিয়ভাবে নির্দেশ জারি রেখেছিলেন, মিছিল হবে শান্তিপূর্ণ৷ নেত্রীর নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলেন তাঁর সৈনিকরাও৷ অশান্তি বাধানোর চেষ্টা ছিল৷ রাজ্য সরকারের সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী অধৈর্য হয়ে ওঠে৷ রাজপথ মুহূর্তে চেহারা নেয় রণক্ষেত্রে৷ পুলিশের গুলিতে লুটিয়ে পড়েন ১৩ জন কর্মী৷ গুরুতর জখম হন অনেকেই৷ মিছিল গুলি চালাতে চালাতে ধাওয়া করেছিল পুলিশ৷ পুলিশের তাড়া খেয়ে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখ থেকে বাঁচতে অনেকেই পালাতে থাকেন৷ কেউ কেউ গুলি থেকে নিষ্কৃতি পান৷ সভ্য সমাজে যা হয় না, তাই হয়েছিল সেদিন৷ পুলিশ গুলি চালিয়েছিল মিছিলকারীদের মাথা ও বুক লক্ষ্য করে৷ যদিও কোমরের ওপরে গুলি চালানো আইন বিরুদ্ধ৷ এই ঐতিহাসিক দিন থেকেই পশ্চিমবঙ্গের যুব উত্থানের নতুন পর্ব শুরু৷ কেন্দ্রের তৎকালীন সরকারের রাষ্ট্রমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবিতে একুশে জুলাইয়ের গুলিতে নিহত ১৩ জনের মৃত্যুর তদন্তে এসেছিলেন কলকাতায়৷ কিন্তু কার্যত বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে থেকে যায়৷
তৎকালীন বাম সরকারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তার প্রভাব ব্যাপকভাবে পড়েছিল রাজ্য কংগ্রেস সংগঠনের ওপর৷ কিন্তু সর্বভারতীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব রাজ্যের কংগ্রেস কর্মীদের ও লাঞ্ছনা সম্পর্কে উদাসীন থাকায় আর চার বছর পরই তৃণমূলে জন্ম হয়৷ সেই দিনের যুব জমায়েতের শরিকরা দলে দলে যোগ দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নবনির্মিত তৃণমূলে৷ ১৯৯৩-এর সেই একুশে জুলাই তৃণমূলের অস্তিত্বের সঙ্গে জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনের পরিণতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে৷
এখন তৃণমূল প্রতিষ্ঠা পেয়েছে৷ দ্বিতীয় বারের জন্য বাংলার ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল৷ কিন্তু, সেই দিনের ঘটনার বিচার এখনও ঝুলে৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে ২১ জুলাইয়ের রিপোর্ট এসে পৌঁছলেও তা এখনও দিনের আলো দেখেনি৷ কিন্তু, কেন তা আসছে না প্রকাশ্যে? কী আছে রিপোর্টে? ঘটনার ২৬ বছর পরও রয়ে গিয়েছে সেই কৌতুহল৷