নিজস্ব প্রতিনিধি: সারা বছর ধরে শাসক ও বিরোধীদের মধ্যে আক্রমণ প্রতি আক্রমণ চলতেই থাকে। কিন্তু অতীতে দেখা গিয়েছে দুর্গাপুজো তথা উৎসবের মরশুমে সৌজন্যের খাতিরে শাসক ও বিরোধীর মধ্যে রাজনৈতিক তরজা কোনও এক অদৃশ্য জাদুদণ্ডের ছোঁয়ায় মুছে গিয়ে সুন্দর সম্পর্কের বাতাবরণ তৈরি হয়। শাসক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বিরোধীদের পুজোর শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন, পাল্টা শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন বিরোধীরা, এই সংস্কৃতি দেখতেই অভ্যস্ত রাজ্যবাসী। তবে সেই অবস্থার কিছুটা হলেও বদল হয়েছে। এবার উৎসবের মরশুমে দেখা যাচ্ছে শাসক-বিরোধীর মধ্যে রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে উঠেছে। যদিও প্রথামাফিক শুভেচ্ছা উভয়ই একে অপরকে জানিয়েছেন। কিন্তু সেখানে অনেক বেশি প্রকট হচ্ছে পরস্পরের বিরুদ্ধে নানা শব্দবন্ধ ব্যবহার করে রাজনৈতিক আক্রমণ।
যেমন ধরা যাক মহালয়ার দিনটির কথা। সেদিন একটি অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে সিপিএম এবং বিজেপিকে কড়া বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাম-বিজেপির নাম না করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন,”তৃণমূল প্রতিহিংসাপরায়ণ দল নয়। যদি তা হতো তাহলে অনেকেই গ্রেফতার করা হতো।” সেই সঙ্গে এজেন্সির ব্যবহার নিয়ে কেন্দ্রকে তোপ দেগে মুখ্যমন্ত্রী বলেন,”ওদের মাথার উপর চন্দ্র-সূর্য গ্রহ তারার মতো নানারকম এজেন্সি রয়েছে। যারা চোখে দেখেও দেখতে পায় না।” সেই সঙ্গে বিরোধীদের নিশানা করে মমতা আরও বলেছেন, “আপনারা আমাদের গাল দিন, কিছু যায় আসে না। যারা এগুলো করছেন আরও বেশি করে করুন। এগুলো করে যদি শান্তিতে ঘুমোতে পারেন নিশ্চয়ই করবেন। আমরা প্রতিহিংসাপরায়ণ নই। বদলা নয়, বদল চাই বলেছিলাম বলেই ৩৪ বছরের কাউকে গ্রেফতার করিনি। অনেক কর্মকাণ্ড থাকা সত্ত্বেও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি”। যথারীতি মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের বিরোধিতা করেছেন বাম-বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন,”ওঁর পার্টির লোক চোর বলে দুনিয়ার সবাইকে চোর ভাবছেন উনি। কেউ যদি সত্যিই দোষ করে থাকেন আইন তাঁকে সাজা দেবে।”
এ বিষয়ে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলকে আক্রমণ করে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মিথ্যা বলে চলেছেন। কঙ্কাল খোঁজা, অস্ত্র খোঁজা, পার্টি অফিস ভাঙচুর করানো, মিথ্যে মামলা দিয়ে সিপিএম নেতাকর্মীদের জেলে পাঠানো, কোনও কাজ বাদ রাখেনি তাঁর সরকার। ২১ জুলাই নিয়ে কমিশন তৈরি করেও তার রিপোর্ট তিনি পেশ করতে পারেননি। আমাদের চ্যালেঞ্জ রইল রাজনৈতিক ভাবে আমাদের সঙ্গে লড়াই করুন”। আর মহালয়ার পরেই একটি পুজোর উদ্বোধন করতে গিয়ে নাম না করে বিজেপিকে খোঁচা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেদিন তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, “কেউ কেউ বাংলার নাম নষ্ট করতে চাইছে। বাংলা বিশ্বের দরবারে সেরা হোক সেটা কেউ কেউ চাইছেন না।”
এছাড়া বিজেপির নবান্ন অভিযানের পরে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সম্পর্কে যা বলেছেন, আর তার পাল্টা শুভেন্দু যে জবাব দিয়েছেন, তাতে রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে যায়। এছাড়া প্রতিদিন বিভিন্ন বৈদ্যুতিন মাধ্যমে শাসক এবং বিরোধী দলের নেতাদের মধ্যে রাজনৈতিক তরজা লেগেই রয়েছে। সেখানে কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে রাজি নন। প্রবীণ রাজনীতিকরা বলছেন পশ্চিমবঙ্গে এমন সংস্কৃতি অতীতে দেখা যায়নি। এটা বলা হয়ে থাকে যে, উৎসবের পরশ সমস্ত বিবাদ, তিক্ততা, শত্রুতাকে ভুলিয়ে দেয়। কিন্তু এবারের দুর্গাপুজোর আগে সেই বিষয়টি অনেকটাই ‘মিসিং’ বলে মনে করা হচ্ছে। আগামী এক মাস ধরে রাজ্যবাসী মেতে থাকবে নানা উৎসবে। তাই ছবিটা দেরিতে হলেও বদলায় কিনা, সেটাই এখন দেখার।