নিজস্ব প্রতিবেদন: নন্দীগ্রামে প্রার্থী হিসেবে নিজের মনোনয়ন পেশ করার পর আহত হন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি জানিয়েছিলেন কেউ ষড়যন্ত্র করে তাঁকে ধাক্কা মেরেছে। পরবর্তী ক্ষেত্রে হাসপাতালের বেডে শুয়ে তিনি জানিয়েছেন, গাড়ির দরজায় ধাক্কা মারা হয়েছে। বিজেপি সহ অন্যান্য বিরোধীরা ইতিমধ্যেই আওয়াজ তুলেছেন যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাটক করছেন এবং সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করছেন। ঘটনা আসলে কি ঘটেছে তা সম্পূর্ণ পরিষ্কার নয় এখনও। তবে তিনি নাটক করুন আর সত্যিই আঘাতপ্রাপ্ত হন, সহানুভূতি আদায়ের রাজনীতি নিয়ে যদি প্রশ্ন ওঠে তবে তা আজ যেমন আছে, অতীতেও ছিল। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হয়ে রয়ে গিয়েছেন ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।
১৯৬৭ সালের নির্বাচনের সময়ে ইন্দিরা গান্ধীর সেইরকম আধিপত্য ছিল না রাজনীতিতে। সেই সময়ে ওড়িশায় স্বতন্ত্র পার্টির গুরুত্ব ছিল অনেক বেশি। তখন সেখানে এক নির্বাচনী জনসভায় বক্তৃতা রাখছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। হঠাৎ জনসভায় আগত কর্মী-সমর্থকদের একাংশ মঞ্চ লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে থাকে। সেই পাথরের আঘাতে নাক ফেটে যায় ইন্দিরা গান্ধীর। স্থানীয় নেতারা তাঁকে বক্তৃতা থামিয়ে চিকিৎসা করানোর কথা বললেও ইন্দিরা গান্ধী রাজি না হয়ে নিজের ভাষণ সম্পূর্ণ করেন। যে সময় এই ঘটনা ঘটে ঠিক তার প্রাক মুহুর্তে ইন্দিরা গান্ধী ভাষণে বলেছিলেন, “এইভাবে কি দেশ গড়া সম্ভব, এই ধরনের লোকেদের ভোট দেবে কেউ?” পাথরের আঘাতে নাক থেকে রক্ত বেরোনোর সঙ্গে সঙ্গে তিনি দুই হাত দিয়ে নাক ঢেকে নেন। তারপর বোঝা যায় তাঁর নাক ভেঙে গেছে। তবে তিনি নিজের বক্তৃতা থামাননি। পরবর্তী ক্ষেত্রে তিনি আগামী বেশ কয়েকদিন ভাঙ্গা নাকে প্লাস্টার দিয়ে একাধিক কর্মসূচি করেন।
আরও পড়ুন- বাড়ি বাড়ি রেশনের ঘোষণা নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ? জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী
একই রকমের ঘটনা ঘটে তামিলনাড়ুতে। সেই সময়ে ভক্তরা অপেক্ষা করছেন কবে এমজিআরের নতুন ছবি মুক্তি পাবে। তবে ছবি মুক্তির দিন তাঁর বাড়িতে একটি বৈঠক চলছিল। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমজিআর স্বয়ং এবং তাঁর মূল প্রতিপক্ষ তথা অভিনেতা এম আর রাধা এবং প্রযোজক বাসু। তিনজনের মধ্যে এমন একটি বিষয় নিয়ে তর্ক শুরু হয় যাতে পরবর্তী ক্ষেত্রে দুটি গুলির আওয়াজ পাওয়া যায়। এমজিআর এবং এম আর রাধা দুজনেই গুরুতর আহত হন এবং পরবর্তী ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হন। এই ঘটনা তামিলনাড়ুর রাজনীতি রাতারাতি বদলে দেয়। নির্বাচন শুরু হওয়ার সময় হাসপাতলে চিকিৎসাধীন এমজিআরের ছবি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। গলায় আর কানে ব্যান্ডেজ বাধা সেই ছবি সমস্ত কাজ যেন এক পলকে করে দেয়। যেদিন নির্বাচনের ফল প্রকাশ হয় সেদিন সবাই অবাক হয়ে যায় যখন দেখে, শুধুমাত্র এমজিআর নন, ডিএমকে পার্টি বিপুল সংখ্যায় জয়লাভ করেছে। সেই সময় এই দলকে খুব একটা কেউ চিনত না, তারাই তৎকালীন সর্বশক্তিমান দলকে হারিয়েছিল। পরবর্তী ক্ষেত্রে ডিএমকে দলের সুপ্রিমো আন্নাদুরাই মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন। সেই সময়ের ডিএমকে দলের মূল স্তম্ভ ছিলেন এমজিআর এবং করুণানিধি।
আরও পড়ুন- তৃণমূলের নির্বাচনী ইস্তেহারে ১০ অঙ্গীকার, কী কী প্রতিশ্রুতি দিলেন মমতা?
ইতিহাস বলছে, মানুষ সহানুভূতিকে গুরুত্ব দেয়। এক্ষেত্রে সত্যি সত্যি তারা বিচার করে দেখে না আদতে ঘটনাটি কী ঘটেছিল। চোখের সামনে যা দেখে তাকেই বিশ্বাস করে। আজ, ২০২১ সালে দাঁড়িয়ে বাংলার বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গুরুতর চোট পেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এখন তিনি হুইল চেয়ারে বসে প্রচার করছেন। বিরোধীরা যতই আওয়াজ তুলুক যে তিনি নাটক করছেন এবং সহানুভূতি পাওয়ার জন্য পরিকল্পনা করছেন, আদতে ভিতর ভিতর তারাও হয়তো ভয় পাচ্ছেন যে ইতিহাসের যেন পুনরাবৃত্তি না হয়ে যায়। তবে আদতে এই নির্বাচনে ইতিহাস ফিরে আসে কিনা তা জানার জন্য অপেক্ষা করতেই হবে ২ মে পর্যন্ত।