কংগ্রেসের যাত্রায় স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন, তাই কি রাহুলের গাড়িতে তাণ্ডব, এত রাজনৈতিক আপত্তি?

কংগ্রেসের যাত্রায় স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন, তাই কি রাহুলের গাড়িতে তাণ্ডব, এত রাজনৈতিক আপত্তি?

কলকাতা:  বাংলা-বিহার সীমানায় রাহুল গান্ধীর গাড়িতে তাণ্ডব, ঢিল মেরে গাড়ির কাচ ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ! যাত্রা পথে রাহুলের ছবি দেওয়া পোস্টার, ফেস্টুন ছেড়ার অভিযোগ৷ বিশ্রামেও প্রশাসনিক বাধা৷ এতকিছুর পরেও রাহুল গান্ধীর যাত্রায় স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন! কংগ্রেসের যাত্রায় ভিড় দেখে রাতের ঘুম ছুটেছে তৃণমূলের? একদিকে তৃণমূল আমলে বেপরোয়া দুর্নীতি, অন্যদিকে যদি কংগ্রেসে চলে যায় সংখ্যালঘু ভোট, তাহলে? আর সেই কারণেই কি রাহুলে এত আপত্তি তৃণমূলের?

এক কথায় বলতে হবে জনপ্লাবন। রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করার পরেই তাতে স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন দেখে কিছুটা অবাকই হয়েছে রাজনৈতিক মহল। রাহুলের যাত্রায় ভিড় হবে এটা সকলেই ধরে নিয়েছিলেন। কিন্তু এত মানুষ মিছিলে হাঁটবেন সেটা কেউ ভাবতে পারেননি। একই ভাবে তৃণমূল কংগ্রেসও বুঝতে পারেনি রাহুলের কর্মসূচি ঘিরে এতটা উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা দেবে।‌ কারণ শিলিগুড়ি বা জলপাইগুড়িতে কংগ্রেসের ৩ শতাংশ ভোট আছে কিনা সন্দেহ। ধূপগুড়ি বিধানসভার উপনির্বাচনে কংগ্রেস সমর্থিত বাম প্রার্থী মাত্র ৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন।

 সেই জায়গা থেকে রাহুল গান্ধীর মিছিলে কংগ্রেস কর্মী সমর্থকদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ যেভাবে ভিড় জমিয়েছেন তা কিছুটা হলেও চিন্তায় ফেলে দিয়েছে তৃণমূলকে। সেই কারণেই কি তৃণমূল সুপ্রিমো  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা সেই জায়গাগুলিতে মিছিল করেছেন যেখান দিয়ে রাহুলের যাত্রা দিয়েছিল?

কংগ্রেসের একাংশ অবশ্য বলছে, তৃণমূল একটু হলেও ভয় পেয়েছে। কারণ রাহুলের মিছিলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মালদা ও মুর্শিদাবাদে রাহুলে কর্মসূচিতে যে আরও ভিড় হবে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। যা তৃণমূলের কাছে অস্বস্তি বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট।

তবে কি সেই কারণেই রাহুলের কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হল? সেই কারণে কি রাহুলের গাড়ি লক্ষ্য করে ছোড়া ইট? আর সেই কারণেই কি ভাঙা হল রাহুল গান্ধীর মতো একজন সর্বভাতী নেতার গাড়ির কাচ? প্রশ্ন তুলছে কংগ্রেসের নীচুতলার একাংশ৷

অভিযোগ, কর্মসূচির পর বিশ্রামের জন্য সরকারি বাংলো তাঁকে দেওয়া হয়নি৷  এমনকী মধ্যাহ্নভোজন করার মতো উপযুক্ত জায়গাও রাহুল পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। আর রাহুলের যাত্রা শুরুর আগেই একাধিক জায়গায় তাঁর ছবি দেওয়া ফ্লেক্স ছুরি দিয়ে ফালাফালা করে কেটে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই বাংলা-বিহার সীমানায় ভাঙা হয়েছে রাহুল গান্ধীর গাড়ির কাচ৷ পিছন থেকে ঢিল মেরে গাড়ির কাচ ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী। কোচবিহার থেকে শুরু করে বাংলায় বারবার বাধার মুখে পড়েছেন রাহুল গান্ধী। তিনি অপমানিত হয়েছেন বলেও খবর। তৃণমূলের নাম না করে অধীরের অভিযোগ, যাত্রা পথে রাহুলের ছবি দেওয়া পোস্টার থেকে শুরু করে ফেস্টুনের ওপর টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে অন্য দলের পতাকা৷ এবার আপনারা বুঝে নিন, কারা করতে পারে এই ঘটনা৷  

সবমিলিয়ে লোকসভা নির্বাচনের আগে কিছুটা হলেও রাজ্য কংগ্রেস অক্সিজেন পাচ্ছে রাহুলের যাত্রার সৌজন্যে। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বলছে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে জোট হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। সেই জায়গায় কংগ্রেস আলাদা লড়লে সংখ্যালঘু ভোট তাদের দিকে কিছুটা হলেও যে যাবে সেটা  স্পষ্ট। যা আখেরে ক্ষতি করবে তৃণমূলের। আপাতত সেই অঙ্কই করছে তৃণমূল। তা সত্ত্বেও রাজ্যের ৪২ টি লোকসভা কেন্দ্রেই প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে অনড় মনোভাব নিয়েছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তিনি যখন জয় নিয়ে এতটাই নিশ্চিত তাহলে রাহুলের কর্মসূচিতে পরোক্ষে বাধা দেওয়ার অভিযোগ কেন উঠবে রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে? এই প্রশ্নের কিন্তু উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। যে বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের সমালোচনা করছে কংগ্রেস ও বামেরা। তাই লোকসভা নির্বাচনে রাহুলের যাত্রার প্রভাব কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্কে কতটা পড়ে সেটাই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *