কলকাতা: বর্তমানে দেশের যে কোনও নির্বাচনে, তা সে লোকসভা নির্বাচন হোক কিংবা কোন রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন, কমিশন নিয়ে হাজারো প্রশ্ন উঠেছে। ভোট পর্বে তাদের ভূমিকা এবং নিরপেক্ষতা নিয়ে হাজার হাজার অভিযোগ রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলির। কখনো কখনো সরাসরি নির্বাচন কমিশনারকে আক্রমণ করেছে তারা। তবে অতীতে কি বিষয়টি এইরকমই জটিল ছিল? তা নিয়ে যখন আলোচনা হবে তখন একজনের কথা অবশ্যই বলতে হয়। তিনি হলেন স্বাধীন ভারতের প্রথম নির্বাচন কমিশনার, সুকুমার সেন। হ্যাঁ, তিনি একজন বাঙালি। তবে বাঙালি হিসেবে শুধু দেশেই স্বনামধন্য নন তিনি, দায়িত্ব সামলেছেন সুদানেরও।
স্বাধীন ভারতের প্রথম বাঙালি নির্বাচন কমিশনার সুকুমার সেন পরিচালনা করেছিলেন ১৯৫১-৫২ সালের প্রথম সাধারণ নির্বাচন এবং ১৯৫৭ সালের দ্বিতীয় সাধারণ নির্বাচন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ব্রিটিশ সরকারের সিভিল সার্ভিস কর্মচারীদের নিয়ে তৈরি হয়েছিল ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস। কিন্তু তাদের সদস্যরা কেউই জানতেন না যে কিভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে হয়। তখন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু চেয়েছিলেন রাজনৈতিক নেতাদের কেউ নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন না। সেই কাজ করবেন আমলারা। সেই সময়ই বাঙালি আইএএস সুকুমার সেন আমলাদের নিয়ে তৈরী করলেন এক কমিটি। পরবর্তী ক্ষেত্রে নির্বাচনের প্রস্তুতি পর্ব শুরু হয়ে গেল। যদিও প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যাপক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল তাঁকে কারণ সেই সময়ে অধিকাংশ মহিলা নিজেদের পরিচয় জনসমক্ষে আনতে চাইতেন না। দেশের প্রত্যেকটি নাগরিক যদি নিজের পরিচয় না জানান তাহলে ভোট পর্ব কোনভাবেই সম্ভব নয়। সেই সময় সুকুমার নিজ দায়িত্বে বোঝাতে শুরু করেন যে কেন পরিচয় প্রকাশ এবং নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। পরবর্তী ক্ষেত্রে কিভাবে নির্বাচন হবে তার বিশদ বিবরণ দিয়ে দেশের প্রত্যেকটা নির্বাচন কেন্দ্রে ভিডিও দেখাতে থাকেন সুকুমার সেন। সেই সময় তিনি রেডিওর সাহায্য নিয়েছিলেন।
যদিও দুটি সাধারণ নির্বাচন পরিচালনা করেই ইস্তফা দিয়েছিলেন সুকুমার সেন। পরে সদ্য স্বাধীনতা পাওয়া সুদানের প্রথম নির্বাচনও পরিচালনা করেছিলেন তিনি। সুকুমার সেন জন্মগ্রহণ করেছিলেন বর্ধমান শহরে। পরবর্তী ক্ষেত্রে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হয়েছিলেন তিনি। সুকুমার আবার লন্ডন ইউনিভার্সিটির গণিতের গোল্ড মেডেলিস্ট ছাত্র। ১৯৬৩ সালে মাত্র ৬৫ বছর বয়সে প্রয়াত হন তিনি।