'সংসদ রত্ন' পুরস্কার পেলেন বাংলার সুকান্ত ও অধীর, কোন কোন বিষয় দেখে এই পুরস্কার দেওয়া হয়?

নিজস্ব প্রতিনিধি: পশ্চিমবঙ্গের দুই সাংসদ পেলেন 'সংসদ রত্ন' পুরস্কার। একটি বেসরকারি সংগঠন প্রতি বছর সংসদে ভাল পারফরম্যান্সের নিরিখে 'সংসদ রত্ন' পুরস্কার দিয়ে থাকে দেশের বিভিন্ন সাংসদদের। এবার রাজ্য বিজেপি সভাপতি তথা বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা বহরমপুরের সাংসদ যিনি লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা তিনিও এই পুরস্কার পেয়েছেন। প্রথম বারের 'এমপি বিভাগে' এই পুরস্কার পেয়েছেন সুকান্ত। অন্যদিকে দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে সংসদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসার জন্য অধীরকেও পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট কেন্দ্র থেকে প্রথম বার সাংসদ নির্বাচিত হয়ে সংসদে প্রবেশ করেছেন সুকান্ত মজুমদার। 'সংসদ রত্ন' পুরস্কার পাওয়ার পর সুকান্ত বলেছেন, "আগামী দিনে বালুরঘাটের মানুষের উন্নয়ন করার জন্য এই পুরস্কার আমাকে অনুপ্রাণিত করবে।" এর পাশাপাশি ২০২২ সালের সেরা সাংসদের পুরস্কার পেয়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও'ব্রায়েন। এছাড়া সেরা মহিলা সাংসদের পুরস্কার পেয়েছেন বিজেপির লকেট চট্টোপাধ্যায়।
লোকসভা ও রাজ্যসভার অধিবেশন কক্ষে বিভিন্ন রাজ্যের সাংসদরা কেমন কাজ করছেন, নিয়মিত উপস্থিতির পাশাপাশি বিভিন্ন বিতর্কে অংশ নিয়ে তাঁরা কি বলছেন, তাতে কতটা সমৃদ্ধ হচ্ছে সংসদ ইত্যাদি নানা বিষয় খতিয়ে দেখে 'সংসদ রত্ন' পুরস্কার দেওয়া হয়। বাংলা থেকে দুই সাংসদ এই তালিকায় থাকায় খুশি রাজ্যের মানুষ। কিন্তু প্রশ্নটা অন্য জায়গায়, লোকসভা এবং রাজ্যসভা মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে আরও বহু সাংসদ রয়েছেন। তাঁদের কতটা ভূমিকা রয়েছে এই ব্যাপারে? যেমন তৃণমূল সাংসদ চিত্র তারকা দেব বছরে ক'বার সংসদে হাজিরা দেন সেটা হাতে গুণে বলা যাবে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে নির্বাচিত ক'জন সাংসদ গত চার বছরে বিভিন্ন বিতর্কে অংশ নিয়ে বা প্রশ্নের মাধ্যমে এমন কিছু বলেছেন যা মনে রাখার মতো? তা নিয়ে তো প্রশ্ন উঠবেই।
ষাটের দশকের প্রথম দিকে তৎকালীন ভারতীয় জনসংঘ দলের সাংসদ অটল বিহারী বাজপেয়ীর অসাধারণ বক্তব্য মুগ্ধ করেছিল সেই সময়কার প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে। তিনি বাজপেয়ীর উদ্দেশে বলেছিলেন,'' তুমি একদিন দেশের প্রধানমন্ত্রী হবে''। সেই সময় বাজপেয়ী ছিলেন উত্তরপ্রদেশের বলরামপুর থেকে নির্বাচিত সাংসদ। বিরোধী দলের নেতা হলেও তাঁর বক্তব্য মুগ্ধ করেছিল নেহরুকে। আর নেহরুর কথা যে মিলে গিয়েছিল সেটা সকলেই জানেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন বাজপেয়ী।
আসলে সংসদ শুধু ঝগড়া বা প্রতিবাদ করার জায়গা নয়। এগুলির পাশাপাশি একজন সাংসদের যথার্থ মূল্যবোধ আকৃষ্ট করে সবাইকে। তাঁর বাচনভঙ্গি, সঠিক সময়ে সঠিক কথা বলা, রুচিমার্জিত ভাষার ব্যবহার, প্রবীণদের উপযুক্ত সম্মান প্রদান, ইত্যাদি বিষয় সংশ্লিষ্ট সাংসদের দলের পাশাপাশি গোটা সংসদকে আলোকিত করে তোলে। তাই পশ্চিমবঙ্গের যে সমস্ত সাংসদ এখনও পর্যন্ত এই সম্মাননীয় তালিকায় আসতে পারেননি তাঁদের গোটা বিষয়টি নিঃসন্দেহে ভেবে দেখতে হবে। কেন কেউ কেউ তালিকার মধ্যে, আর কেনই বা তাঁরা তালিকার বাইরে, এই উপলব্ধি প্রত্যেকের থাকা দরকার। তাতেই সংসদের পাশাপাশি গোটা সমাজ উপকৃত হবে।