কলকাতা: পালিয়ে যাওয়ার আগে সিবিআইকে লেখা সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেনের চিঠি দেখিয়ে বিজেপি পরিচালিত অসমের অর্থমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মার বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এদিন ধর্না মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই চিঠিতে সুদীপ্ত সেন লিখে গিয়েছে, বিজেপির মন্ত ধাপে ধাপে ৩ কোটি টাকা নিয়েছে৷ এবার, বলুন৷ কী কিছু করবেন? কেন করছেন না৷ বিজেপি করলেই সাত খুন মাপ?’’
এদিন সিবিআই, ইডির ভয় দেখিয়ে বিজেপির দল ভাঙানোর রাজনীতির প্রসঙ্গ তোলেন৷ বলেন, ‘‘ওরা বলছে, বিজেপিতে আসো, না হলে সিবিআই দেব৷ ওরা বলছে বিজেপিতে আসো, তা না হলে ইডি দিয়ে ধরিয়ে দেব৷ ওদের দলটা পুরো দুর্নীতিতে ভরে গিয়েছে৷ এবার দেখি বিজেপির মন্ত্রীকে ডাকা হয় কি না৷ মনে রাখবেন আমাদের কাছেও সব তথ্যপ্রমাণ আছে৷’’
মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার পর নিজের টুইটার পেজে পাল্টা মাঠে নামেন অসমের অর্থমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মা৷ লেখেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হচ্ছে৷’’
The frivolous & baseless campaign by @MamataOfficial Didi against me is very painful. I am not fortunate enough like your Police Commissioner. I’ve joined the investigations and offered my full cooperation as a witness. And all this happened much much before I joined @BJP4India
— Himanta Biswa Sarma (@himantabiswa) February 5, 2019
সিবিআইকে দেওয়া সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনের চিঠির একাংশ প্রকাশ্যে আনলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ হিমন্ত বিশ্বশর্মা খেপে খেপে সারদা কর্তার থেকে মোট ৩ কোটি টাকা নিয়েছেন বলে উল্লেখ রয়েছে এই চিঠিতে। এই লেনদেনগুলি হয়েছিল সারদার কলকাতার অফিস থেকে। সুদীপ্ত সেনের কাছে এই লেনদেনের বেশ কিছু সাক্ষরিত ভাউচারও রয়েছে বলে দাবি। একদা কংগ্রেস নেতা হিমন্ত বিশ্বশর্মা আসামে বিজেপি সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রী৷ মমতার দাবি, কোনও এক ব্যক্তি সিবিআইকে দেওয়া সুদীপ্ত সেনের এই চিঠি তাঁর হাতে তুলে দিয়েছেন। এই চিঠি দেখিয়ে রীতিমতো ক্ষোভপ্রকাশ করে মমতা বলেন, ‘‘হিমন্ত বিশ্বশর্মার বিরুদ্ধে কেন কোনও পদক্ষেপ নয়? বিজেপি করলেই কি সাতখুন মাফ?’’ দুপুর ৩টের পর ধর্না মঞ্চ থেকে এই বিস্ফোরক দাবিই করলেন মমতা৷
তবে, গত ৯ জানুয়ারি ২০১৪ সালে বাংলার বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়, সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেন নাকি সিবিআই-কে কোনও চিঠি পাঠাননি৷ সিবিআইকে লেখা যে চিঠির জেরে সারদা-কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসা, গোটা দেশে তোলপাড় ফেলে দেয়, সেই চিঠি তিনি লেখেনইনি বলে দাবি করেন সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেন৷ বিচারপতি শ্যামল সেন কমিশনের সামনে হাজির হয়ে এ কথা জানিয়েছিলেন সুদীপ্ত৷ সারদার ব্যবসা কেন মার খেল, কে কে কথার খেলাপ করেছেন ইত্যাদি বিবরণ দিয়ে ২০১৩ বছরের ৬ এপ্রিল সুদীপ্ত সেনের লেটারহেডে লেখা ১৮ পাতার একটি চিঠি পাঠানো হয়েছিল সিবিআই-এর কলকাতা দফতরে। সেই চিঠির প্রতিটি পাতায় সুদীপ্ত সেনের নাম সই করা ছিল। শেষ পাতায় স্বাক্ষরের নীচেও বন্ধনী দিয়ে টাইপ করা ছিল সুদীপ্ত সেনের নাম। এই চিঠির কথা প্রকাশ্যে আসতেই জানাজানি হয় সারদা-কেলেঙ্কারির কথা। সুদীপ্ত তত দিনে কলকাতা ছেড়ে উধাও হয়ে গিয়েছেন। তাঁকে কাশ্মীর থেকে গ্রেফতার করে আনার পরে পুলিশ সূত্র থেকে দাবি করা হচ্ছিল, ওই চিঠি সুদীপ্তরই লেখা। জেরার মুখে সে কথা স্বীকারও করেছেন তিনি। কিন্তু, তার প্রায় একবছর পর বিচারপতি শ্যামল সেন কমিশনের সামনে হাজির দিয়ে ১৮০ ডিগ্রি ডিগবাজি দেন সারদাকর্তা৷ তবে, কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল, তা এখনও তদন্তসাপেক্ষ বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহলেক একাংশ৷