নেত্রী মমতার ছবির বদলে শুভেন্দুর পোস্টারে ছয়লাপ মেদিনীপুর!  তোলপাড় বঙ্গ রাজনীতির ময়দান

নেত্রী মমতার ছবির বদলে শুভেন্দুর পোস্টারে ছয়লাপ মেদিনীপুর!  তোলপাড় বঙ্গ রাজনীতির ময়দান

a567c99321b8cc986b01dfeca0c308e5

তপন মল্লিক চৌধুরী :  শুভেন্দুর বিজেপিতে যাওয়ার কথা আপাতত হিমঘরে রয়েছে। কারণ খোদ শুভেন্দু ঘনিষ্ঠদের মুখে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যাওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে না। তবে শুভেন্দু যে মেদিনীপুরে তাঁর নিজের ওজন বুঝিয়ে দিচ্ছেন তা ভালো করেই তাঁর দল উপলব্ধি  করতে পেরেছে। মনে হচ্ছে ২১শের নির্বাচনের আগেই শুভেন্দু জঙ্গলমহলে মমতাকে বেগ দিতে পারেন।

পূর্ব  মেদিনীপুরে এখন মমতার ছবির বদলে নিজের ছবি লাগিয়েই সভা করছেন শুভেন্দু। ইতিমধ্যে পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন  জায়গায় 'দীনজনের ত্রাতা' শুভেন্দু অধিকারীর একাধিক পোস্টার পড়েছে। মনকী হুল দিবসে রাজ্য সরকারের অনুষ্ঠানে  না গিয়ে আদিবাসীদের অন্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন তিনি। যা যথেষ্ট পরিমাণে অস্বস্তি বাড়িয়েছে ঘাসফুল ব্রিগেডের।

গত কয়েক মাস ধরে তৃণমূলের অন্দরমহলের রাজনীতিতে শুভেন্দুকে নিয়ে জোর অশান্তির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ২৩ জুলাই তৃণমূল  সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের নতুন কমিটির কথা ঘোষণা করেন। সেই রদবদলের শুভেন্দু অধিকারীকে দেওয়া হয়েছে রাজ্য সংগঠনের সাধারন সম্পাদকের পদ। ‌ এতে খুশি নন শুভেন্দু। কারণ, রাজনীতিতে অভিজ্ঞতায় ও অবদানে তৃণমূল কংগ্রেসে অনেকের চেয়ে বেশি কর্তৃত্বের অধিকারী নন্দীগ্রাম বিধায়ক।
শুধু এই রদবদল নয়, দীর্ঘ সময় ধরে চলা তৃণমূল অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সমীকরণের হাতবদল নিয়েও শিশির অধিকারী পুত্রের ক্ষোভের খবর প্রায়ই শোনা যায়। ইতিমধ্যে তাঁকে পূর্ণ সাংগঠনিক দায়িত্ব দেওয়ার দাবি উঠেছে। তাঁকে সক্রিয় করে তোলার মতো পরিবেশ দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। কারণ, দলের সঙ্গে শুভেন্দুর দূরত্ব বৃদ্ধিতে তৃণমূলের হাত থেকে বেরিয়ে যেতে বসেছে লালগড়।

২০২১-এর বিধানসভায় তৃণমূলের ভালো ফলের জন্য সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানো জরুরি। ঝাড়গ্রামে যেভাবে তৃণমূল কংগ্রেসকে সরিয়ে বিজেপি আধিপত্য বিস্তার করেছে, শুভেন্দুর সঙ্গে দলের দূরত্ব অবিলম্বে ঘুচিয়ে একুশের জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতির প্রয়োজন। কিন্তু দল তাকে নিয়ে ঠিক কি ভাবছে বোঝা যাচ্ছে না।

সম্প্রতি হুল দিবসের ওই অনুষ্ঠানে শুভেন্দুর ছবি থাকলেও সেখানে যাননি তিনি। যদিও পার্থ চট্টোপাধ্যায় ওই অনুষ্ঠানে গিয়ে বিপাকে পড়ে যান। কেন শুভেন্দু আসেননি তা বলতে গিয়ে ঢোক গিলতে হয়েছে খোদ দলের মহাসচিবকে। 'উনি  এলে  ভালো হত' গোছের কথা বলে চলে যান পার্থবাবু। তবে এই প্রথমবার নয়,সাম্প্রতিককালে একাধিকবার দলের থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছেন তমলুকেরএই সাংসদ। যা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, 'হাতে ঘাসফুল থাকলেও মনে মনে পদ্মফুল ফুটছে শুভেন্দুর।'

পরিস্থিতি বেগতিক দেখে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাল্টা নামানো হয়েছে শুভেন্দু বিরোধী মুখ হিসাবে। কিন্তু তাতে হিতে বিপরীত হয়েছে খোদ মেদিনীপুরেই। অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্যায়ের পোস্টার দেওয়া একাধিক জায়গায় পাল্টা শুভেন্দুর লাগিয়েছেন অনুগামীরা। সেখানে শিশির পুত্রকে সমাজসেবী  হিসেবেই তুলে ধরা হয়েছে। এতে আরও তেতে উঠেছে পরিস্থিতি।

এসব ঘটনার সূত্রপাত সাম্প্রতিককালে তৃণমূলের অন্দরের রদবদলকে ঘিরে। যেখানে শুভেন্দুকে গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে সাত জনের কোর কমিটিতে রাখা হয়। সব থেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় তৃণমূলের পূর্ব  মেদিনীপুরের জেলা সংগঠনে রদ বদল। যেখানে  শুভেন্দু ঘনিষ্ঠকে সরিয়ে জেলা  যুব সভাপতির  পদে আসেন পার্থসারথী মাইতি। আর তাতেই আগুনে ঘি পড়ে।

জেলার একাধিক জায়গায় সমাজসেবী শুভেন্দু অধিকারীর পোস্টারে এখন ছয়লাপ। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ক্ষত মেরামতে নেমেছেন খোদ তৃণমূল নেত্রী। শিশির অধিকারীর স্ত্রীর শারীরিক অবস্থার খোঁজ খবর নিয়েছেন তিনি। কিন্তু মমতার সেই প্রলেপ কতটা কাজে লাগে, তা বলবে ২১শের বিধানসভা নির্বাচন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *